ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে ৮ বোর্ড পরিচালকই জানালেন অনাস্থা

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৯ ১৯:১৭:২০
ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে ৮ বোর্ড পরিচালকই জানালেন অনাস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) এখন যেন অশান্ত এক জলধারা। যে বোর্ড ক্রিকেট পরিচালনার ভারে থাকা সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা, সেখানে এবার প্রশ্ন উঠেছে নেতৃত্ব নিয়ে। সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছেন বোর্ডের কার্যনির্বাহী পরিষদের ১০ জন সক্রিয় পরিচালকের মধ্যে ৮ জনই। এমনকি তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিমও হাত তুলেছেন ফারুকবিরোধী অবস্থানে।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দপ্তরে পৌঁছেছে বিসিবির এই অভ্যন্তরীণ ‘অভিযোগনামা’। সেখানে স্বাক্ষরকারীদের তালিকায় আছেন—সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, মাহবুব উল আনাম, মনজুর আলম, ফাহিম সিনহা, ইফতেখার রহমান মিঠু, কাজী ইনাম আহমেদ, সালাউদ্দিন চৌধুরী এবং নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বাদ পড়েছেন কেবল ফারুক আহমেদ নিজে এবং আকরাম খান।

নেতৃত্ব নয়, একচ্ছত্র শাসন?

পরিচালকদের ভাষায়, ‘সভাপতি’ নয়, যেন একজন ‘শাসক’ হয়ে উঠেছেন ফারুক আহমেদ। বোর্ডের কমিটিগুলো পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তিনি তা করেছেন মাসখানেক দেরিতে, তাও একক সিদ্ধান্তে। এতে পরিচালকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পথ সংকুচিত হয়ে এসেছে। অভিযোগ উঠেছে—নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের উপেক্ষা করে তিনি একাই বড় বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।

যেমন, বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি তিনি নিয়েছেন একাই, পরিচালকদের না জানিয়ে। তারা বিষয়টি জেনেছেন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে।

‘নিজের লোক’, ‘নিজের নিয়মে’ বিসিবি চালাচ্ছেন?

চিঠিতে আরও অভিযোগ—ফারুক আহমেদ বোর্ডের সৎ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোণঠাসা করে নিজের পছন্দের লোকদের নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়েছেন। যাদের অনেকেই বিতর্কিত, দক্ষতাহীন ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। ‘পতিত সরকারের আমলে’ আসা অযোগ্য কিছু কর্মকর্তাকে বরং তিনি বহাল রেখেছেন নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে।

পরিচালকদের মতে, ফারুকের এমন একনায়কসুলভ ও দায়িত্বহীন আচরণে শুধু বোর্ডের শৃঙ্খলাই ভেঙে পড়েনি, নষ্ট হয়েছে বিসিবির ভাবমূর্তিও।

দুর্বল দল, দুর্নীতিপূর্ণ চুক্তি ও আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ

বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীসহ একটি দুর্বল দলকে ফ্র্যাঞ্চাইজি দেওয়া এবং একটি অনিবন্ধিত ও দুর্বল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের হাতে বিপিএলের দায়িত্ব তুলে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরিচালকরা। তাঁদের দাবি, এতে শুধু ক্রিকেটের মানই ক্ষুণ্ণ হয়নি, বিসিবি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ দলের পতনও ‘ব্যর্থ নেতৃত্বের প্রতিফলন’

জাতীয় দলের র‌্যাংকিংয়ে অবনমন, জিম্বাবুয়ের কাছে পরাজয়ের মতো ঘটনাও অনাস্থাপত্রে এসেছে। এসব ঘটনাকে দেখা হচ্ছে বোর্ডের সিদ্ধান্তহীনতা ও নেতৃত্বহীনতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে।

আরও বিস্ফোরক অভিযোগ

পরিচালকরা আরও জানিয়েছেন, ফারুক আহমেদ ক্লাব দুর্নীতিতে জড়িত, বিতর্কিত ভূমিদস্যু ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী সন্ত্রাসীদের বোর্ডে জায়গা করে দিয়েছেন। এতে বিসিবির নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

আস্থা নেই ফারুকের ওপর

চিঠির শেষাংশে পরিচালকরা বলেন, ‘দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ কিংবা গঠনতন্ত্র সংস্কারে তিনি একটুও আগ্রহ দেখাননি। দায়িত্ব পালনে তিনি ব্যর্থ। তিনি যে উদ্দেশ্যে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তা থেকেও সরে এসেছেন।’

বিসিবির শীর্ষপদে এমন অনাস্থার ঘটনা বিরল নয়, তবে এবার অভিযোগের বিস্তৃতি ও গভীরতা নজিরবিহীন। এখন দেখার বিষয়—ফারুক আহমেদ এই ঝড় সামলাতে পারেন, নাকি বোর্ডে নেতৃত্ব বদলের সুর আরও জোরালো হয়।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ