ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াতে তোলপাড়

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০২ ১৪:১০:০৪
শেখ হাসিনার বিচার নিয়ে বিশ্ব মিডিয়াতে তোলপাড়

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সরাসরি সম্প্রচারিত বিচারকাজ নজির গড়ল বাংলাদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হলো একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিচার। ঘটনাটি শুধু দেশের ভেতরেই নয়, নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ এবং তাকে ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক মামলা দাখিলের পর বিশ্ব গণমাধ্যমে যেন ঝড় বয়ে গেছে।

গণআন্দোলনের জের ধরে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে ট্রাইব্যুনাল। এই নাটকীয় মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে দেশের রাজনীতির গতিপথ।

এএফপি: ‘সমন্বিত হত্যাযজ্ঞের নির্দেশদাতা’ শেখ হাসিনা

ফ্রান্সভিত্তিক বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, বাংলাদেশে একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল—আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের অভিযোগে চলছে আন্তর্জাতিক বিচার। প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “এটি ছিল পরিকল্পিত, সংগঠিত এবং পর্যায়ক্রমিক হামলা—যার মূল পরিকল্পনাকারী শেখ হাসিনা।”

তিনি দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় সশস্ত্র কর্মীদের সমন্বয়ে চলেছে দমন অভিযান। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের প্রতিটিই গুরুতর—গণহত্যায় উস্কানি, সহযোগিতা, ষড়যন্ত্র, ব্যর্থতা এবং সরাসরি প্ররোচনা।

এএফপি আরও জানিয়েছে, তদন্তকারীরা সংগ্রহ করেছেন ড্রোন ফুটেজ, ফোনালাপ, হেলিকপ্টার রেকর্ড এবং শত শত ভুক্তভোগীর জবানবন্দি। এসব তথ্যই এখন ট্রাইব্যুনালের টেবিলে।

আল জাজিরা: ‘দমনযজ্ঞের স্থপতি’ শেখ হাসিনা

আল জাজিরার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে আরও দৃশ্যত গা শিউরে ওঠা চিত্র। তারা লিখেছে, “ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পরিচালিত করেছে একটি সমন্বিত সামরিক-সিভিলিয়ান অপারেশন।” প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকার ছিল এই হামলার প্রধান কাণ্ডারি। ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, এই ‘অভিযান’ পরিচালনায় অংশ নেয় পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সদস্যরা।

ভারতের ‘ক্রল’: ‘মাস কিলিং’-এর অভিযোগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে

ভারতের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ক্রল লিখেছে, “বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে রয়েছে ‘মাস কিলিং’ বা গণহত্যা পরিচালনার অভিযোগ।”

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কেবল রাজনৈতিক নয়—তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।

জাতিসংঘ: ‘১৪০০ প্রাণহানি, নিহতদের মাঝে শিশুও’

জাতিসংঘের এক শোকাবহ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে সংঘটিত সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ১,৪০০ মানুষ। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ নিহত ছিলেন শিশু। এই তথ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলকে নাড়িয়ে দিয়েছে।

বিচারকাজ টিভিতে: ইতিহাসে নতুন অধ্যায়

শেখ হাসিনার বিচারকাজ সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারের ঘটনা নজিরবিহীন। সাধারণ জনগণ যেমন অবাক বিস্ময়ে তা দেখেছে, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মহল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর দিকে চোখ রেখেছে।

বিশ্ব মিডিয়ার এই প্রতিক্রিয়া এবং বিচারকাজের গতিপথ শুধু একটি নেত্রীর ভাগ্য নয়, প্রশ্ন তুলছে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ভবিষ্যৎ নিয়েও।

এ যেন ইতিহাসের এক রুদ্ধদ্বার মুহূর্ত—যেখানে রাজনীতি, ন্যায়বিচার এবং গণআকাঙ্ক্ষা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ