ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আস্থার আলো, নীতিতে প্রতিশ্রুতি—শেয়ারবাজারে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৩ ২০:৪৪:২৫
আস্থার আলো, নীতিতে প্রতিশ্রুতি—শেয়ারবাজারে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: একসময় বিনিয়োগকারীদের হতাশায় নিমজ্জিত শেয়ারবাজার যেন আবার নতুন করে শ্বাস নিচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সে আশার বাতাসই বইয়ে দিয়েছে। সরকার এবার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—শেয়ারবাজার আর কোন périphery নয়, অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দু হবে।

এই বাজেটকে ‘প্রশংসনীয় ও বিনিয়োগবান্ধব’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছেন, “শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সরকার যে আন্তরিকতা দেখিয়েছে, তা এক কথায় নজিরবিহীন। এই বাজেট শুধু প্রণোদনারই নয়, এটি আস্থার বাজেট।”

বাজারমুখী নীতিতে নতুন দিগন্ত

প্রধান উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় তুলে ধরেছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট পাঁচটি মূল দিকনির্দেশনা—

বহুজাতিক ও নেতৃত্বস্থানীয় দেশীয় কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তি

বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ

শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

শেয়ারবাজারকে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরের পরিকল্পনা

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে বাস্তবসম্মত নীতিমালা

করছাড় ও করহারে ছাঁট—বাজারে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য

তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর ফলে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য এটি হয়ে উঠবে একধরনের প্রণোদনা। বিশ্লেষকদের মতে, এতে ভালো মানের নতুন কোম্পানিগুলোর বাজারমুখী হওয়ার আগ্রহ বাড়বে।

ব্রোকারেজ হাউসের লেনদেন কর ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করা হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের করহারও ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ২৭.৫০ শতাংশে নেমেছে। এতে শেয়ারবাজারে তারল্য বাড়বে এবং লেনদেনে গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মূলধনী মুনাফার ওপর করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনার পূর্বঘোষিত প্রজ্ঞাপনও এই বাজেটে বহাল রাখা হয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে।

বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় বাস্তব পদক্ষেপ

বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে প্রয়োজন কার্যকর নিরাপত্তা বলয়। সেই লক্ষ্যেই বিএসইসি বিও অ্যাকাউন্টের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৪৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকায় নামিয়ে এনেছে।

আরও একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ—সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে প্রাপ্ত সুদের ২৫ শতাংশ এখন সরাসরি যাবে ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে। এটি বাজারে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে।

ডিভিডেন্ডে কর ছাড়—দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের পথে

ডিভিডেন্ড আয়ের ওপর কর মওকুফ ছিল বিনিয়োগকারীদের বহুদিনের দাবি। সেই দাবিকে সম্মান জানিয়ে বিএসইসি প্রস্তাব করেছে—এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রাপ্ত ডিভিডেন্ডে যেন কোনো কর না থাকে, এবং এর বেশি হলে ১৫ শতাংশ হারে চূড়ান্ত কর ধার্য করা হোক।

এই সুপারিশ সরকার বিবেচনায় নিলে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি হবে এক সুসংবাদ।

নতুন ভোরের আশায় বাজার

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, “এই বাজেট কেবল একটি হিসাবনিকাশের দলিল নয়, এটি একটি দিকনির্দেশনা, একটি প্রতিশ্রুতি—যেখানে শেয়ারবাজারকে ভবিষ্যতের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাজেট শুধু প্রণোদনা দিয়ে নয়, কাঠামোগত সংস্কারের দিকেও গুরুত্ব দিয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে পারে।

বাজেটের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে যদি সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করে, তাহলে বাংলাদেশ শেয়ারবাজার সত্যিই হতে পারে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরবর্তী ইঞ্জিন।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ