ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তিন শ্রেণির লোকের জন্য বন্ধ হচ্ছে পাসপোর্ট

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ১২ ১১:৫৫:০৬
তিন শ্রেণির লোকের জন্য বন্ধ হচ্ছে পাসপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: গণঅভ্যুত্থানের পর পালিয়ে থাকা, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত এবং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত—এই তিন শ্রেণির কেউ আর বাংলাদেশের পাসপোর্ট পাবেন না। না নতুন করে, না পুরোনোটি নবায়নের সুযোগে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন রক্ষায় সরকার এবার কড়া অবস্থানে।

সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ব্যক্তিদের বিদেশ গমন বা পাসপোর্ট সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রম বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে আইন মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের সব জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে—যাতে তারা দ্রুত তালিকা প্রস্তুত করে দেন। উদ্দেশ্য একটাই: পলাতকদের আর যেন পালানোর পথ না থাকে।

৪ মে’র কোর কমিটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত

‘আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি’র ৪ মে’র বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই এই পদক্ষেপ। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সভায় স্পষ্টভাবে বলা হয়, যেসব ব্যক্তি দেশের ভেতরে বা বাইরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, পলাতক কিংবা ফৌজদারি মামলার আসামি—তাদের পাসপোর্ট আর ইস্যু বা নবায়ন করা যাবে না।

বিদেশে পালিয়ে, অথচ পাসপোর্ট নবায়নের চেষ্টা!

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারবিরোধী ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে পতিত সরকারের অনুগত ও সংশ্লিষ্ট অনেকেই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন এবং তারা পাসপোর্ট নবায়নের চেষ্টা করছেন—যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং আইন ও বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চিঠির সঙ্গে ৪ মে’র বৈঠকের সিদ্ধান্তের অনুলিপিও সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের তালিকা দ্রুত বিদেশি মিশন ও দূতাবাসে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি, যেন কেউ বাদ না পড়ে, সেজন্য জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

২০২৪-র পর দ্বিতীয় ধাপের পদক্ষেপ

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথম দফায় সাবেক মন্ত্রী-এমপি এবং উচ্চপদস্থদের কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে এবার আরও কঠোর হচ্ছে সরকার—যাতে অপরাধীরা দেশের বাইরে থেকে আর কোনো রকম রাজনৈতিক বা আর্থিক সুবিধা আদায় করতে না পারে।

যতদূরই পালান, এবার পাসপোর্টেই বাঁধা

সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, "এই সিদ্ধান্ত কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি আইনের ন্যায্য প্রয়োগ। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার এবং পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতেই এ উদ্যোগ। পাসপোর্ট কেড়ে নিলেই পালানোর পথ রুদ্ধ হবে।"

সরাসরি না বলে নীরবে কিন্তু দৃঢ় বার্তা দিয়েছে সরকার—নির্বিচারে দেশ ছাড়ার দিন শেষ। সময় এসেছে, আইনের মুখোমুখি হওয়ার।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: কারা পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্ট পাবেন না?

উত্তর: মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত, দেশি-বিদেশে পলাতক, এবং ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পাসপোর্ট নবায়ন বা নতুন পাসপোর্ট পাবেন না।

প্রশ্ন ২: এই সিদ্ধান্ত কবে এবং কোথায় নেওয়া হয়?

উত্তর: ২০২৫ সালের ৪ মে ‘আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটি’র বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

প্রশ্ন ৩: কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?

উত্তর: রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন রক্ষার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে পলাতক অপরাধীরা বিদেশে পালিয়ে থেকে সুবিধা না নিতে পারে।

প্রশ্ন ৪: তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্বে কারা আছেন?

উত্তর: আইন মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এবং দেশের সব জেলা প্রশাসকগণ তালিকা প্রস্তুত করছেন।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ