হাজার কোটির ক্লাবে ব্যাংকবহির্ভূত ৬ প্রতিষ্ঠানের উত্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে ৩৯৭টি। তবে এর মধ্যে মাত্র ৩১টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকার বেশি। এই অল্পসংখ্যক বৃহৎ মূলধনী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টি ব্যাংক খাতের। বাকি ৬টি প্রতিষ্ঠান ব্যাংকবহির্ভূত হলেও মেগা ক্যাপ হিসেবে বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই ৬ কোম্পানির উপস্থিতি শেয়ারবাজারের বৈচিত্র্য ও গভীরতা বাড়িয়ে তুলছে এবং ব্যাংকনির্ভরতা কমিয়ে বাজারকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ করছে।
কোন কোন কোম্পানি রয়েছে এই ক্লাবে?
ব্যাংকবহির্ভূত এই ৬টি হাজার কোটির ক্লাবে রয়েছে— রবি আজিয়াটা লিমিটেড, গ্রামীণফোন লিমিটেড, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, কেয়া কসমেটিকস লিমিটেড, সামিট পাওয়ার লিমিটেড এবং বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড। এসব কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূলধন রবি আজিয়াটার, যা দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
এরপর রয়েছে গ্রামীণফোন (১ হাজার ৩৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা), লাফার্জহোলসিম (১ হাজার ১৬১ কোটি ৩৭ লাখ), কেয়া কসমেটিকস (১ হাজার ১০২ কোটি ৩২ লাখ), সামিট পাওয়ার (১ হাজার ৬৭ কোটি ৯০ লাখ) এবং বেস্ট হোল্ডিংস (১ হাজার ৫৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা)। এদের প্রত্যেকেই স্ব স্ব খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং শেয়ারবাজারে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে।
ডিভিডেন্ডের চিত্র
এই ছয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচটি সর্বশেষ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। গ্রামীণফোন দিয়েছে সর্বোচ্চ ৩৩০ শতাংশ নগদ ডিভিডেন্ড, যা দেশের শেয়ারবাজারে অন্যতম রেকর্ড।
লাফার্জহোলসিম দিয়েছে ১৯ শতাংশ নগদ, রবি আজিয়াটা ১৫ শতাংশ নগদ, বেস্ট হোল্ডিংস ও সামিট পাওয়ার দিয়েছে ১০ শতাংশ করে নগদ ডিভিডেন্ড। শুধুমাত্র কেয়া কসমেটিকস ২০২০ সালের পর আর কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। ২০২০ সালে কোম্পানিটি ২ শতাংশ ক্যাশ এবং ১ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছিল।
ডিভিডেন্ডের ধারাবাহিকতা যেকোনো বিনিয়োগকারীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। এটি কোম্পানির লাভজনকতা, সুশাসন এবং শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতিচ্ছবি বহন করে।
সর্বশেষ শেয়ারদর ও বাজার প্রতিক্রিয়া
এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বর্তমান বাজারে একেকটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরছে। সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হচ্ছে গ্রামীণফোনের শেয়ার, যার সর্বশেষ মূল্য ২৮৪ টাকা ৪০ পয়সা। এরপর রয়েছে লাফার্জহোলসিম ৪২ টাকা ৯০ পয়সা, রবি আজিয়াটা ২৩ টাকা ৮০ পয়সা, বেস্ট হোল্ডিংস ১৪ টাকা ৭০ পয়সা, সামিট পাওয়ার ১৩ টাকা ৩০ পয়সা এবং কেয়া কসমেটিকস ৪ টাকা ৭০ পয়সা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বড় মূলধনের এই কোম্পানিগুলো বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং লাভজনক বলে বিবেচিত।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই কোম্পানিগুলোর উপস্থিতি?
দেশের শেয়ারবাজার অনেকাংশেই ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠাননির্ভর। এই পরিস্থিতিতে অন্যান্য খাতের বড় মূলধনী কোম্পানির উপস্থিতি বাজারে সেক্টরাল ভারসাম্য তৈরি করে। যেমন—রবি ও গ্রামীণফোন টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিনিধিত্ব করছে; লাফার্জহোলসিম রয়েছে নির্মাণ ও সিমেন্ট শিল্পে; সামিট পাওয়ার শক্তি খাতে, কেয়া কসমেটিকস ভোক্তা পণ্যে এবং বেস্ট হোল্ডিংস হোটেল ও ট্যুরিজম খাতে সক্রিয়।
এই বৈচিত্র্য বিনিয়োগকারীদের বিকল্প খাত বেছে নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। পাশাপাশি, বাজারের গভীরতাও বাড়ে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের দৃষ্টিকোণ
বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট কাটিয়ে উঠতে শেয়ারবাজারকে প্রয়োজন বহুমুখী ও শক্তিশালী কোম্পানির অংশগ্রহণ। এই ৬টি ব্যাংকবহির্ভূত মেগা কোম্পানি ঠিক সে ভূমিকাই পালন করছে। বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত ডিভিডেন্ড দেয় এবং লাভজনকভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তারা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি রিটার্ন নিশ্চিত করতে সক্ষম।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এমন কোম্পানির সংখ্যা বাড়লে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশকে আরও আকর্ষণীয় মনে করবেন। পাশাপাশি দেশের শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হবে।
বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে হাজার কোটির ক্লাবে ব্যাংকবহির্ভূত মাত্র ৬টি কোম্পানির অবস্থান নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল মুনাফা করেই থেমে নেই, তারা দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে, বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে এবং বহুমাত্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এই ধরনের কোম্পানির ভূমিকাকে আরও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
মো: রাজিব আলী/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- শোক সংবাদ: মারা গেলেন মুফতি আহমদুল্লাহ
- আজকের খেলার সময়সূচি: শ্রীলঙ্কা বনাম হংকং
- ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ ব্যক্তিকে দেড় কোটি টাকা জরিমানা বিএসইসির
- বেতন বাড়লো! সরকারি কর্মীদের জন্য নতুন পে-স্কেল
- শেয়ারবাজারে চমক: দুই ফার্মায় ছুটছে বিনিয়োগ!
- বিনিয়োগকারী সতর্ক! ৮ কোম্পানির প্রভাবে শেয়ারবাজারে ধস
- ৫২৫ শতাংশ লভ্যাংশ পেল বিনিয়োগকারীরা
- 'বি' থেকে 'জেড' ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর এক কোম্পানির শেয়ার
- বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিএইসর গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা
- পুঁজিবাজারে ডিজিটাল জালিয়াতি: বিএসইসি-এনটিএমসি'র যৌথ উদ্যোগ
- নতুন পে-স্কেল: বড় সুখবর-সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লো!
- এক শেয়ারেই বাজিমাত: ডিএসইর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প
- আপনার বিনিয়োগ সুরক্ষিত? সিএমএসএফ কার্যকারিতায় বিএসইসি'র চমক!
- এক নজরে শেয়ারবাজারের আলোচিত ১২ খবর
- ভারত-পাক ম্যাচ বয়কট? ড্রেসিংরুমে চাপ!