ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

শেখ হাসিনা যাকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন, জানালেন অলি

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ২১ ১০:৫০:২৭
শেখ হাসিনা যাকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন, জানালেন অলি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনীতির পেছনের গল্প অনেক সময় উপন্যাসকেও হার মানায়। ঘটনাপ্রবাহের মাঝে কিছু নাম অন্ধকারে থেকে যায়, আবার কিছু মুহূর্ত গোপনই থেকে যায় যুগের পর যুগ। তেমনি এক বিস্ময়কর অধ্যায়ের কথা সম্প্রতি সামনে এনেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) অলি আহমদ।

জনপ্রিয় টকশো “ঠিকানা”য় উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, তাকে একাধিকবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার। প্রথমবার নয়, একবারও নয়—তিনটি ভিন্ন সময়, ভিন্ন প্রেক্ষাপটে।

অলি আহমদের ভাষায়, সময়টা ১৯৯৫ সাল। বিএনপি তখন ক্ষমতায়, তিনি যোগাযোগমন্ত্রী। ঠিক তখনই আওয়ামী লীগ ও জামায়াত একত্র হয়ে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। এই রাজনৈতিক টালমাটাল সময়ে হঠাৎ করেই তার দরজায় কড়া নাড়লেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ দুজন—চাচা হাফিজ এবং নেতা আ.খ.ম জাহাঙ্গীর।

তাদের বার্তা ছিল পরিষ্কার: সংসদে একটি ‘ক্যু’ ঘটবে, আওয়ামী লীগের ১৪৩ এবং বিএনপির ৪০ জন সংসদ সদস্য একত্রিত হয়ে খালেদা জিয়াকে সরিয়ে দেবেন। আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করবেন অলি আহমদ—বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে।

“তিন দিন আমার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে,” বলেন কর্নেল অলি। “প্রথম দুদিন আমি কিছুটা রাজি ছিলাম। কিন্তু তৃতীয় দিন গভীর রাতে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে প্রশ্ন করলাম—আমি কি আমার বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে যাচ্ছি?”

তার জবাব আসে নিজের ভিতর থেকেই। সেই রাতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মোহকে ত্যাগ করবেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে শেষ বৈঠকে তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আপনি আমাকে যোগ্য মনে করেছেন, এজন্য কৃতজ্ঞ। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেঈমানি আমি করতে পারি না।”

এখানেই শেষ নয়। সময়ের বাঁকে ২০১৪ সালে আবারও তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়—এইবার দুটি আসন, মন্ত্রীত্ব ও মোটা অঙ্কের অর্থসহ। একই প্রস্তাব ২০১৮ সালেও। কিন্তু প্রতিবারই সেই একই উত্তর, “না”।

“প্রস্তাব পেয়েছি অনেকবার,” বলেন কর্নেল অলি। “অনেকে প্রথম প্রস্তাবেই রাজি হয়ে যান। কিন্তু আমি না বলেছিলাম তখনও, এখনো বলি। কারণ বিশ্বাসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা আমার রক্তে নেই।”

অলি আহমদের রাজনীতির শুরু জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। ছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য। ২০০১ সালে দূরত্ব তৈরি হয় দলের সঙ্গে। এরপর বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে গড়েন বিকল্প দল, আবার সেখান থেকেও সরে এসে প্রতিষ্ঠা করেন এলডিপি। সময়ের স্রোতে অনেক কিছু বদলালেও তার রাজনৈতিক বিশ্বাস ও ব্যক্তিগত নৈতিকতা আজও অনড়।

এক সময়ের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী, আজও রাজপথে আছেন। তবে ক্ষমতার অলঙ্কার নয়, বিবেকের শুদ্ধতা নিয়েই।

রাজনীতি শুধু চেয়ার দখলের খেলা নয়—কখনো কখনো সেটা একটি আদর্শের সামনে নতজানু হওয়ার গল্প। অলি আহমদের এই অধ্যায় সে কথাই আবার মনে করিয়ে দেয়।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ