ঢাকা, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ বনাম মিয়ানমার: গোল, গোল, আবারও গোল

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০২ ১৭:০৭:৩২
বাংলাদেশ বনাম মিয়ানমার: গোল, গোল, আবারও গোল

নিজস্ব প্রতিবেদক: আকাশ যেন একটু বেশি নীল, বাতাসে যেন নতুন কোনো গন্ধ। ইয়াঙ্গুনের মাঠে আজ শুধু এক ম্যাচ নয়—চলেছে এক স্বপ্নযাত্রা, এক সাহসিকতার গল্প, যা লেখা হচ্ছে লাল-সবুজের রঙে। নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে স্বাগতিক মিয়ানমারকে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এবং এই এগিয়ে থাকা শুধু স্কোরবোর্ডে নয়—এটি এগিয়ে যাওয়া সম্ভাবনার, আত্মবিশ্বাসের এবং নারীর ক্ষমতায়নের পথে।

ম্যাচের ১৮তম মিনিটে ভেসে আসে প্রথম গর্জন। বক্সের সামনে থেকে পাওয়া ফ্রি কিকে ঋতুপর্ণা চাকমার প্রথম শট আটকে দিয়েছিল মিয়ানমার রক্ষণভাগ। কিন্তু ফিরতি বলে তিনি যা করলেন, তা যেন ছিল এক নিখুঁত চিত্রকর্ম—এক দুর্দান্ত কোনাকুনি শট, যা ভেদ করে দেয় গোলবার আর গোলে থাকা সব প্রতিরোধ। বলটি যখন জালে ঢোকে, তখন স্টেডিয়ামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিস্ময় আর গর্বের সুর।

এই গোলের শুরুটা হয়েছিল শামসুন্নাহারের প্রাণপণ ছুটে। দুই ডিফেন্ডারের চেষ্টাতেও থামানো যায়নি তার গতি। ফাউলের বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি, কিন্তু বাজছিল আরেকটি বাঁশিও—আত্মবিশ্বাসের। যে আত্মবিশ্বাস বলে, ‘আমরাও পারি।’

প্রথম গোলের পর মাঠে যেন ঢেউ খেলে যায়। কর্নার আদায়, দাপটের ফুটবল, আর গোলের সুযোগ তৈরি—বাংলাদেশ খেলছিল যেন একজোড়া ডানাওয়ালা আত্মা নিয়ে। মিয়ানমার বারবার চেষ্টা করেও বাংলাদেশের রক্ষণে কোনো ফাটল ধরাতে পারেনি। লড়াইয়ে ছাপিয়ে গেছে র‍্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্য, অভিজ্ঞতার হিসাব, আর মাঠের পরিচিতি।

কিন্তু বাংলাদেশ থামেনি। তারা জানত—স্বপ্ন দেখতে হলে চোখ খোলা রাখতে হয়। আর তাই ম্যাচের ৭১ মিনিটে আবারও সেই চেনা নাম, ঋতুপর্ণা। আরেকটি গোল, আরেকটি বিস্ময়। প্রতিপক্ষের হৃদয়ে কাঁপন তুলে জালে বল পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। এই গোল শুধুই স্কোরবোর্ডে পরিবর্তন আনে না, এটি ইতিহাসের কপালে লিখে দেয় সম্ভাবনার নতুন ছাপ।

৭৫ মিনিট পর্যন্ত স্কোরলাইন: বাংলাদেশ ২, মিয়ানমার ০।

ইয়াঙ্গুনের মাঠ যেন এখন বাংলাদেশের নারীদের সাহসিকতা গাঁথার মঞ্চ। একটি জয় আজ পাল্টে দিতে পারে বহু বছরের দুঃস্বপ্ন, বহু বছরের অপেক্ষা। কারণ এই ম্যাচ জিতলেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খেলবে নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে—যা বসবে আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে।

এ যেন কেবল একটি খেলা নয়—এ এক আন্দোলন, এক বিদ্রোহ। সেই বিদ্রোহ যা বলে—বাংলাদেশের মেয়েরা আর পেছনে নয়, তারা এখন এগিয়ে চলে, সামনে তাকায়।

প্রতিটি পাস এখন যেন দেশের জন্য একটা করে শ্রদ্ধাঞ্জলি। প্রতিটি ছোঁয়ায় মিশে আছে পরিবার থেকে উঠে আসা ত্যাগ, গরম দুপুরে ঘাম ঝরানো অনুশীলন, আর একটিমাত্র স্বপ্ন—লাল-সবুজের পতাকাকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা।

বাংলাদেশ এখন শুধু ম্যাচ জেতার জন্য লড়ছে না—তারা লড়ছে এক ভবিষ্যতের জন্য, যেখানে প্রতিটি ছোট মেয়ে বল হাতে স্বপ্ন দেখবে, যেখানে ফুটবল আর শুধুই খেলা থাকবে না, হয়ে উঠবে পরিচয়।

শেষ বাঁশি এখনো বাজেনি। কিন্তু প্রথমার্ধের আবেগ আর দ্বিতীয়ার্ধের জোড়া গোলে আজ জাতি যেন আগাম শুনে ফেলেছে বিজয়ের সুর।

আজ বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে—আর সেই স্বপ্নে আকাশটা সত্যিই লাল-সবুজ।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ