ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

ডিএসইর কঠোর নতুন নির্দেশনা: ব্রোকারেজ হাউজে জবাবদিহিতা জোরদার

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১২:৪০:২১
ডিএসইর কঠোর নতুন নির্দেশনা: ব্রোকারেজ হাউজে জবাবদিহিতা জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নিরীক্ষা ব্যবস্থার কাঠামো ঢেলে সাজাচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক ব্রোকার-ডিলার প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও বিনিয়োগকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএসই ১ জুলাই একটি নতুন নিরীক্ষক তালিকাভুক্তির নির্দেশিকা অনুমোদন করেছে। এর আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর তালিকাভুক্ত নিরীক্ষকদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিএসইর নিরীক্ষক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পাশাপাশি অন্যান্য যোগ্য নিরীক্ষকদেরও প্যানেলে অন্তর্ভুক্তির জন্য ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ডিএসইর তালিকাভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বার্ষিক আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার কাজ শুধুমাত্র প্যানেলভুক্ত নিরীক্ষকদের মাধ্যমেই করতে হবে। নিরীক্ষকদের একটানা সর্বোচ্চ তিন বছর একই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ডিএসই চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় নিরীক্ষা পদ্ধতিতে আরও শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা আনতে হচ্ছে। নিরীক্ষক প্যানেলকে কার্যকর না রাখলে ব্রোকারেজ ফার্মগুলোর আর্থিক অবস্থার সঠিক চিত্র পাওয়া সম্ভব হয় না, যার প্রভাব বিনিয়োগকারীর ওপর পড়ে।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তামহা সিকিউরিটিজ, ব্যাঙ্কো সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ এবং শাহ মোহাম্মদ সগীর অ্যান্ড কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগকারী অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনার পেছনে দুর্বল তদারকি এবং জালিয়াতিপূর্ণ সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। ডিএসই মনে করছে, নিরীক্ষকরা যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন।

ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “উল্লেখযোগ্য আর্থিক অনিয়মের পরও নিরীক্ষিত প্রতিবেদনে তা প্রতিফলিত হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি প্রতিরোধ সম্ভব হয়নি এবং বাজারে আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিল থেকে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল খুবই সীমিত।”

নতুন নির্দেশিকায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বা বিএসইসি প্যানেল থেকে বাদ পড়া, অথবা ফিনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত না থাকা নিরীক্ষকদের ডিএসইর প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। একইভাবে, যদি কোনো নিরীক্ষক এমন আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন যা প্রযোজ্য আইন ও সিকিউরিটিজ বিধিমালা অনুযায়ী নয়, তবে তাকেও তালিকা থেকে অপসারণ করা হবে।

ডিএসই ২০২১ সালে প্রথমবার ৬১টি নিরীক্ষা সংস্থাকে নিয়ে নিরীক্ষক প্যানেল গঠন করেছিল। তবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত বাস্তবতায়, এই প্যানেলকে আরও দক্ষ, জবাবদিহিমূলক ও মানসম্মত করতে নতুন নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে।

ডিএসইর এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনগুলোতে নির্ভরযোগ্যতা বাড়ানো এবং বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা।

ডিএসইর নতুন নিরীক্ষা নীতিমালা ব্রোকারেজ খাতে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি কাঠামোগত পরিবর্তন। এই পদক্ষেপ বাজারে জবাবদিহিতা বাড়াতে, বিনিয়োগকারী ঝুঁকি কমাতে এবং ভবিষ্যতের প্রতারণা প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ