ঢাকা, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বাংলাদেশে আবিষ্কৃত হলো হাজার কোটি টাকার খনিজ সম্পদ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ১০:০৭:১৪
বাংলাদেশে আবিষ্কৃত হলো হাজার কোটি টাকার খনিজ সম্পদ

যমুনার বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা মূল্যবান খনিজ পদার্থ বদলে দিতে পারে দেশের অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর চরে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে এমন কিছু মূল্যবান খনিজ পদার্থ, যেগুলোর আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশের মাটিতে এই প্রথম এত বিস্তৃতভাবে এমন হেভি মিনারেল বা ভারী খনিজ পদার্থের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ায় নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো।

এই খনিজগুলো শুধু দামীই নয়, বরং মহাকাশ গবেষণা, পারমাণবিক প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, সিরামিক, রকেট ও খনি যন্ত্রপাতি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়—যা আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতগুলোর অন্যতম।

কোথা থেকে মিললো এই খনিজ?

গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলা থেকে শুরু করে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও চিলমারী পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অনুসন্ধান চালিয়ে এই খনিজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলস অ্যান্ড মেটালার্জি পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০ টন বালু থেকে প্রায় ২ টন হেভি মিনারেল পাওয়া যায়, যা আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল মূল্যবান।

যেসব খনিজ পদার্থ মিলেছে

গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যমুনার বালুতে পাঁচটি প্রধান খনিজ পদার্থ রয়েছে:

ইলমেনাইট – টাইটানিয়াম উৎপাদনের মূল উপাদান। ব্যবহৃত হয় রঙ, প্লাস্টিক, ওষুধ ও ওয়েল্ডিং রডে।

জিরকন – ব্যবহৃত হয় সিরামিক টাইলস, পারমাণবিক প্রযুক্তি, মহাকাশযান ও ইলেকট্রনিক্সে।

ম্যাগনেটাইট – চৌম্বকধর্মী খনিজ, ব্যবহৃত হয় খনি যন্ত্রপাতি ও ইস্পাত শিল্পে।

রুটাইল – টাইটানিয়ামের পরিশোধিত রূপ। ব্যবহৃত হয় প্রসাধনী ও ধাতু উৎপাদনে।

গারনেট – ব্যবহার হয় অলংকার, জেট কাটিং ও পাইপ পরিষ্কারে।

এছাড়া কোয়ার্টজ নামের আরও একটি উচ্চমানের খনিজের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে, যা ঘড়ি, কম্পিউটার এবং চিকিৎসা যন্ত্রে ব্যবহৃত হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজগুলোর মূল্য কত?

বিশ্বের বাজারে এসব খনিজের চাহিদা ও দাম উভয়ই অত্যন্ত উচ্চ। প্রতি ১০০ টন বালু থেকে সংগ্রহ করা যায় প্রায়:

৫০ কেজি ইলমেনাইট

৩০ কেজি জিরকন

২০ কেজি রুটাইল

১০ কেজি ম্যাগনেটাইট

১০ কেজি গারনেট

এই অনুপাতে হিসাব করলে শুধু কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা অঞ্চল থেকেই হাজার কোটি টাকার খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

কীভাবে বাংলাদেশে এলো এই খনিজ?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসাইন বলেন, হিমালয় পর্বতমালার গ্রানাইট জাতীয় শিলার ক্ষয়ের ফলে এসব ভারী খনিজ ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মা নদীর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন চরে এসে জমা হয়েছে। এ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের নদীচরগুলো হয়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় খনিজ ভান্ডার।

পাইলট প্রকল্প ও বিদেশি বিনিয়োগ

এই সম্পদ আহরণে দেশের একমাত্র বিদেশি খনিজ অনুসন্ধান প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি এভারেস্ট মিনারেলস লিমিটেড পাইলট প্রকল্প পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, পাইলটিং সফল হলে আগামী বছর থেকেই বাণিজ্যিক উত্তোলন শুরু হতে পারে।

অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে এই খনিজ সম্পদ?

নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ: খনিজ উত্তোলন, প্রক্রিয়াকরণ ও রফতানি কার্যক্রমে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে।

রফতানি আয়ের নতুন খাত: তৈরি হতে পারে একটি স্থায়ী রফতানি খাত, যা জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম।

আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব: বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে বাংলাদেশ খনিজ রফতানিতে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সময় এখন

যমুনার চরের বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা এই খনিজ রত্নগুলো শুধু মাটি নয়, বরং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে। এখন প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা।

হাজার কোটি টাকার এই খনিজ সম্পদ হতে পারে বাংলাদেশকে বিশ্ব অর্থনীতির মানচিত্রে নতুন করে তুলে ধরার হাতিয়ার।

FAQ (Frequently Asked Questions) ও উত্তর:

Q1: যমুনা নদীর চরে কী ধরণের খনিজ আবিষ্কৃত হয়েছে?

A1: ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, গারনেট এবং কোয়ার্টজ—এই ছয়টি মূল্যবান খনিজ পাওয়া গেছে।

Q2: এই খনিজ সম্পদের আর্থিক মূল্য কত?

A2: আন্তর্জাতিক বাজারে এসব খনিজের সম্ভাব্য মূল্য হাজার কোটি টাকারও বেশি।

Q3: এই খনিজ কোথায় পাওয়া গেছে?

A3: কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী ও চিলমারী, গাইবান্ধার সাঘাটা ও যমুনার চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় এই খনিজ পাওয়া গেছে।

Q4: কে এই খনিজ আবিষ্কারের কাজ করছে?

A4: ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলস অ্যান্ড মেটালার্জি এবং অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি এভারেস্ট মিনারেলস লিমিটেড এই প্রকল্পে যুক্ত।

Q5: এই খনিজগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে?

A5: এগুলো উত্তোলন ও রফতানির মাধ্যমে বিশাল রফতানি আয়, কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভব।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ