ঢাকা, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণাঃ ২০২৬ থেকে ঝুঁকি ভিত্তিক তদারকি শুরু

অর্থনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৭ ১৭:৩৫:০৮
বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণাঃ ২০২৬ থেকে ঝুঁকি ভিত্তিক তদারকি শুরু

ঝুঁকি চিহ্নিতেই এখন জোর, তদারকি পদ্ধতিতে সময়ের ছাপ রাখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতকে আরও সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও ঝুঁকিসচেতন করতে বড় এক রূপান্তরের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংক তদারকিতে চালু হচ্ছে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি পদ্ধতি (Risk-Based Supervision - RBS)—যা শুধু নিয়ম মানার দৃষ্টিভঙ্গি নয়, বরং গভীরে গিয়ে ঝুঁকি চিহ্নিত করার এক আধুনিক কৌশল।

সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠকে এই নতুন কাঠামো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জানানো হয়—পর্যায়ের ভিত্তিতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক এই তদারকি কাঠামোর আওতায় আসবে।

এরই মধ্যে কিছু ব্যাংকে পরীক্ষামূলকভাবে এ পদ্ধতি চালু হয়েছে। ফলাফল আশাব্যঞ্জক হওয়ায় এখন দেশব্যাপী বিস্তারের পালা।

তদারকি মানেই কাগজপত্র দেখা নয়, এবার নজর ঝুঁকির গভীরে

আগে তদারকি মানেই নিয়মকানুন ঠিক আছে কিনা—সেই খতিয়ান দেখা। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। আর্থিক খাতে একের পর এক চ্যালেঞ্জ, প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি এবং বাজারের অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে দরকার হয়েছে আরও সূক্ষ্ম, সতর্ক আর আগাম প্রস্তুতির তদারকি।

নতুন কাঠামোতে প্রতিটি ব্যাংকের আর্থিক, বাজার, আইনগত, পরিচালনাগত ও কৌশলগত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হবে। ঝুঁকি যত দ্রুত বোঝা যাবে, ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ততটাই সহজ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরেও আসছে বড় পরিবর্তন

এই পরিবর্তন শুধু বাইরে নয়, ভেতরেও। বাংলাদেশ ব্যাংক তার অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে যুক্ত করছে একাধিক নতুন বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে—

তদারকি নীতিমালা ও সমন্বয় বিভাগ

তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ

প্রযুক্তি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং তদারকি বিভাগ

অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিভাগ

প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকের জন্য থাকবে একটি করে পৃথক তদারকি টিম, যারা ওই ব্যাংকের কার্যক্রমের নানাদিক সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করবে।

তথ্যই হবে হাতিয়ার, প্রশিক্ষণেই আসবে প্রস্তুতি

তদারকি পদ্ধতিকে তথ্যনির্ভর করতে গড়ে তোলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় তদারকি তথ্য প্ল্যাটফর্ম। কোনো ব্যাংকের ঝুঁকি প্রোফাইল এক ক্লিকে বিশ্লেষণযোগ্য হবে। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বাড়াতে শুরু হয়েছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এতে সহায়তা করছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো।

ভবিষ্যতের দিকে এগোনোর এই যাত্রায়, সঙ্গী চাই সবাইকে

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে—এই রূপান্তর শুধু কাঠামোগত পরিবর্তন নয়, এটি একটি মানসিক পরিবর্তনের ডাক। প্রযুক্তিনির্ভরতা, দায়বদ্ধতা এবং আগাম ঝুঁকির চিহ্নিতকরণের মধ্য দিয়েই তৈরি হবে এক আধুনিক ব্যাংকিং পরিবেশ।

“সমন্বিত উদ্যোগেই সম্ভব একটি ঝুঁকি-সচেতন, টেকসই ও উদ্ভাবনী ব্যাংকিং খাত গড়ে তোলা”—এমন প্রত্যাশায় পথ চলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

জাকারিয়া ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ