ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

শুরুতে লিড নিয়েও জাপানকে হারাতে পারলো না বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ২০:৪৩:০৪
শুরুতে লিড নিয়েও জাপানকে হারাতে পারলো না বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চীনের দাজহু শহরে যখন মাঠে গর্জন তুলছিল লাল-সবুজের তরুণ যোদ্ধারা, তখন শুরুটা ছিল রূপকথার মতো। জাপানের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকির সেমিফাইনালে এক পর্যায়ে স্কোরবোর্ডে ঝলমল করছিল ২-০ গোলে বাংলাদেশের নাম। কিন্তু হোকির ম্যাচ যে ৬০ মিনিটের, সেই বাস্তবতা চরমভাবে টের পেয়েছে আমাদের বালক দল।

অন্যদিকে, বালিকা দলও জানিয়ে দিল—তারা হাল ছাড়ার জাত নয়। প্রথমবার খেলতে এসেই সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানো, তারপর একেবারে শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করে ম্যাচ ড্র করে মাঠ ছাড়ার গল্পটাও কম গর্বের নয়। যদিও জয়টা এক চুল দূরেই ছিল, সেটি হাতছাড়া হয়েছে পেনাল্টি স্ট্রোকে।

জাপানকে ঘায়েল করেই শুরু, কিন্তু...

বৃহস্পতিবার দিনের আলোয় বালক বিভাগের সেমিফাইনালে নামল বাংলাদেশ-জাপান। শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, আজ বুঝি জাপানকে ইতিহাসে জায়গা করে দেওয়ার দিন! প্রথম কোয়ার্টারে দুই গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। সুনিপুণ পাস, দৃষ্টিনন্দন মুভমেন্ট আর গোলমুখে ধারালো আক্রমণে জাপান রীতিমতো কোণঠাসা।

দ্বিতীয় কোয়ার্টারে লড়াইয়ে ফেরার ইঙ্গিত দেয় জাপান। তবে বাংলাদেশও গোল তুলে নেয়, স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-২। এরপর তৃতীয় কোয়ার্টারে দু’দলই একে অপরকে ঠেকিয়ে দেয়।

সব নাটক জমে চতুর্থ ও শেষ কোয়ার্টারে। এখানেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয় জাপান। একের পর এক আক্রমণে বাংলাদেশের জালে বল ঢুকিয়ে দেয় তিনবার। বাংলাদেশ ব্যাকফুটে চলে যায়, আর স্বপ্ন ফসকে যায় হাতের মুঠো থেকে। ৫-৩ গোলের হার নিয়ে ফাইনালের দরজা বন্ধ হয়ে যায় তরুণদের জন্য।

মেয়েরা লড়ল হৃদয় দিয়ে, তবুও জয় অধরাই

বালিকা দলের গল্পটাও কম নাটকীয় নয়। সুপার ফোরে কাজাখস্তানের মুখোমুখি হয় রিমন-তিশারা। ম্যাচের ৮ মিনিটেই গোল হজম করে পিছিয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে হাল না ছেড়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে তারা।

প্রথমার্ধের শেষ দিকে ৩০ মিনিটে তিশার গোল আর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ৩৩ মিনিটে রিমন শারিকার ঝলকে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। একটুর জন্য যেন প্রথম জয়টা হাতের মুঠোয় ছিল।

কিন্তু হকি মানে শুধু স্কিল নয়, ভাগ্যের পাল্টা থাবাও। ৫৯তম মিনিটে কাজাখস্তান পেনাল্টি স্ট্রোক পায়। শ্বাসরুদ্ধকর সেই মুহূর্তে গোল হয়ে যায়, ম্যাচ শেষ হয় ২-২ সমতায়। জয় পেল না বাংলাদেশ, তবে লড়াইটা মন জয় করে নেওয়ার মতো।

রোববার ‘সান্ত্বনার ট্রফি’র লড়াই

এখন সামনে বাকি রইল তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। রোববার ছেলেরা মুখোমুখি হবে মালয়েশিয়ার, আর মেয়েরা ফের কাজাখস্তানের বিপক্ষেই নামবে প্রতিশোধের মিশনে।

মেয়েদের জন্য এই টুর্নামেন্ট ঐতিহাসিক—এটাই তাদের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ। আর প্রথমবারেই তারা সেমিফাইনাল প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে ছেলেরা এর আগে রানার্সআপ হয়েছিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত যুব এশিয়া কাপে, যেখানে ভারতের কাছে শেষ মুহূর্তে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয়।

রোববার তাই শুধু তৃতীয় হওয়ার লড়াই নয়, রণক্ষেত্রে নামা এই তরুণ-তরুণীদের কাছে এটা নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ। জয়ই হবে পরম সান্ত্বনা, আর দেশের জন্য গর্বের মুহূর্ত।

শেষ কথা—শিরোপা না হোক, হৃদয় জিতে নিয়েছে বাংলাদেশের হকি দল।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ