ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

হাত-পা নেই, তবুও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেল অদম্য লিতুন জিরা

শিক্ষা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১৯:৫৪:১৮
হাত-পা নেই, তবুও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেল অদম্য লিতুন জিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: জন্ম থেকেই নেই দুটি হাত, নেই দুই পা—তবু থেমে থাকেনি যশোরের কিশোরী লিতুন জিরা। ডান বাহুর গোড়া আর চোয়ালের মাঝখানে কলম চেপে ধরে লিখেই এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছে সে। অদম্য মনোবল আর পরিবারের অক্লান্ত সহায়তায় জয় করেছে শারীরিক সীমাবদ্ধতা।

লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ও জাহানারা খাতুন দম্পতির মেয়ে। এবারের এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। তার আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতেও (পিইসি) পেয়েছিল জিপিএ-৫।

লিতুনের বাবা হাবিবুর রহমান শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এ আর মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। মা জাহানারা গৃহিণী। দুই ভাইবোনের মধ্যে লিতুন ছোট। বড় ভাই ইশতিয়াক ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন।

লিতুন বলে, “আমি খুব খুশি। মা-বাবা, শিক্ষক আর বন্ধুদের সহায়তা না পেলে এতদূর আসা সম্ভব হতো না। আমি বড় হয়ে একজন চিকিৎসক হতে চাই, মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।”

মা জাহানারা বলেন, “লিতুন জন্মের পর খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কান্না করেছি অনেক। পরে নিজেই নিজেকে বলেছি—এই মেয়েকে কখনো কারও বোঝা হতে দেব না।”

ছোটবেলায় টুলে বসিয়ে তার সামনে রাখা হতো স্লেট। খড়িমাটি ডান বাহুর মাথা ও চোয়ালের মাঝে চেপে লিখত সে। এভাবেই গড়ে ওঠে লেখার অভ্যাস। এখন কলম ধরে খাতায় লেখে, আঁকে ছবি, গায় গান—সবই করে নিজের মতো করে।

অধ্যাপক হাবিবুর বলেন, “লিতুনের হাত নেই, কিন্তু তার লেখার সৌন্দর্য দেখে বোঝার উপায় নেই সে কীভাবে লিখে। সে কবিতা আবৃত্তি করে, গান গায়, ছবি আঁকে। এমনকি খুলনা বেতারের শিশু-কিশোর অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছে নিয়মিত।”

তার মা প্রতিদিন তাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে যেতেন, আবার ফিরিয়ে আনতেন। টিফিনের সময় দাদি স্কুলে গিয়ে খাইয়ে দিতেন। বাড়ি থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে স্কুলে পৌঁছাতে প্রতিদিন মোটরসাইকেলে বসিয়ে নিয়ে যেতেন বাবা-মা। মাঝে বসত লিতুন, পেছনে বসে তাকে ধরে রাখতেন মা। এইভাবেই এসএসসি পর্যন্ত নিজের শিক্ষা শেষ করেছে সে।

গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, “লিতুনের লেখার গতি দ্রুত, হাতের লেখা দারুণ। ছবি আঁকা, গান গাওয়া, আবৃত্তি—সবেতেই সে অসাধারণ। তার মনোবল ও প্রতিভা আমাদের গর্বিত করে।”

শারীরিক সীমাবদ্ধতা যে জীবনের পথে বাধা নয়, তার বড় প্রমাণ লিতুন জিরা। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি মিলেই এগিয়ে চলেছে সে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের পথে।

FAQ:

প্রশ্ন: লিতুন জিরা কে?

উত্তর: লিতুন জিরা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, যিনি হাত-পা ছাড়াই চোয়ালের সাহায্যে লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

প্রশ্ন: সে কীভাবে লেখে?

উত্তর: ডান বাহুর গোড়া ও ডান চোয়ালের মাঝে কলম চেপে ধরে লিখে।

প্রশ্ন: তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী?

উত্তর: সে একজন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায়।

প্রশ্ন: পরিবার কীভাবে সহায়তা করেছে?

উত্তর: প্রতিদিন স্কুলে আনা-নেওয়া, লেখালেখির অনুশীলন, মানসিক সাহচর্য—সব কিছুতেই পরিবার পাশে ছিল

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ