ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

এক মাসের সন্তান কোলে নিয়ে পরীক্ষা, দেশসেরা রাজশাহীর শামীমা আক্তার

শিক্ষা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ২১:০৬:২৪
এক মাসের সন্তান কোলে নিয়ে পরীক্ষা, দেশসেরা রাজশাহীর শামীমা আক্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক হাতে সন্তান, অন্য হাতে কলম। মা হওয়ার দায়িত্ব আর ছাত্রীর স্বপ্ন একসাথে ধারণ করে ডিগ্রি পরীক্ষায় বসেছিলেন রাজশাহীর শামীমা আক্তার। জন্মের মাত্র এক মাস বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়েই তিনি অংশ নেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত ডিগ্রি পাস পরীক্ষায়। আর সেই পরীক্ষাতেই হয়েছেন সারা দেশের মধ্যে প্রথম।

তার এ সাফল্য শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়—সমাজে নারী শক্তি, সংগ্রাম ও সাফল্যের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

পরীক্ষার হলে সন্তান, ফলাফলে দেশসেরা

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী শামীমা আক্তার। চলতি বছরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২ শিক্ষাবর্ষের ডিগ্রি পরীক্ষায় বিএসসি শাখায় অংশ নিয়েছেন তিনি।

পরীক্ষার সময় তার সন্তান ছিল মাত্র এক মাস বয়সী। মা হয়ে ওঠার শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্যেও পরীক্ষা দিয়েছেন সাহসিকতার সঙ্গে। পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নম্বর ও জিপিএ। ফলে সার্বিক ফলাফলে তিনিই হয়েছেন দেশসেরা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কলেজকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানিয়ে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

কলেজের সংবর্ধনা, শিক্ষকদের ভালোবাসা

১০ জুলাই (বৃহস্পতিবার) হাটগাঙ্গোপাড়া ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষ শামীমাকে কলেজ ক্যাম্পাসে সংবর্ধনা জানায়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

কলেজের অধ্যক্ষ এসএম মাহবুবুর রহমান বলেন,“শামীমা শুধু আমাদের কলেজের গর্ব নয়, সে দেশের গর্ব। মায়ের কোল থেকে একেবারে দেশসেরা হওয়ার এই গল্প ইতিহাস হয়ে থাকবে।”

শামীমার জীবন ও স্বপ্ন

শামীমা আক্তার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা গ্রামের মেয়ে। বাবা সাহাদুল ইসলাম ও মা হাজেরা বিবির বড় সন্তান তিনি। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই মেধার পরিচয় দিয়েছেন শামীমা। বাইগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও এসএসসিতে গোল্ডেন প্লাস পেয়েছেন তিনি।

বর্তমানে তিনি বিবাহিত, স্বামীর নাম আব্দুর রাজ্জাক। মা হওয়ার পরও পড়ালেখা ছাড়েননি। নিজের সন্তানকে কোলে নিয়েই পরীক্ষার হলে অংশ নিয়ে আজকের এই অর্জন।

শামীমা বলেন,

“আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম ম্যাজিস্ট্রেট হব। মা হওয়া আমার স্বপ্নের পথে বাধা হয়নি বরং শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সন্তানকে কোলে নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায়।”

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. এনামুল করিম জানান,

“২০২২ শিক্ষাবর্ষের ডিগ্রি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর ও সর্বোচ্চ জিপিএ অর্জন করেছে শামীমা আক্তার। পরীক্ষার সার্বিক ফলাফলে সে দেশসেরা নির্বাচিত হয়েছে।”

একজন মায়ের সাফল্য এখন সবার অনুপ্রেরণা

শামীমা আক্তারের এই অর্জন শুধুই একটি পরীক্ষায় ভালো করা নয়, বরং এটি এক নারীর আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ ও সাফল্যের গল্প। মা হয়েও স্বপ্নকে পাশে রেখে তিনি প্রমাণ করেছেন—চাইলেই সম্ভব।

তার সাফল্য দেশের সকল নারীর জন্য এক উদাহরণ হয়ে থাকবে, বিশেষ করে যারা সংসার, সন্তান ও স্বপ্নকে একসঙ্গে ধারণ করতে চান।

শামীমার গল্প শুধু একটি সংবাদ নয়, এটি সময়ের এক অনুপ্রেরণামূলক প্রতিচ্ছবি। এমন গল্প আরো লেখা হোক, আরো মা-বোনেরা শামীমার মতো সাহসী হোক—এই হোক আমাদের প্রেরণা।

FAQs (সাধারণ প্রশ্নোত্তর)

প্রশ্ন ১: শামীমা আক্তার কে?

উত্তর: শামীমা আক্তার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার এক মেধাবী শিক্ষার্থী, যিনি এক মাস বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে ডিগ্রি পরীক্ষা দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দেশসেরা হয়েছেন।

প্রশ্ন ২: তিনি কোন কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন?

উত্তর: হাটগাঙ্গোপাড়া ডিগ্রি কলেজ, রাজশাহী।

প্রশ্ন ৩: শামীমা আক্তার কী অর্জন করেছেন?

উত্তর: তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর ও জিপিএ অর্জন করে দেশসেরা নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রশ্ন ৪: শামীমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী?

উত্তর: তিনি ভবিষ্যতে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চান।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ