ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১২৮৫ পেল নিবিড়, জানুন সফলতার রহস্য

শিক্ষা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ২০:৪৯:০০
১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১২৮৫ পেল নিবিড়, জানুন সফলতার রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় এবার চমক দেখিয়েছেন নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিবিড় কর্মকার। ১৩০০ নম্বরের পরীক্ষায় তিনি পেয়েছেন ১২৮৫—যা শুধু একটি ব্যতিক্রমী ফলাফলই নয়, বরং হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য এক নতুন অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছে।

ফল প্রকাশের দিন সকাল থেকেই চিন্তিত ছিলেন নিবিড়। বারবার চেষ্টা করেও ইন্টারনেটে ফলাফল দেখতে পারছিলেন না। এসএমএস দিয়েও কোনো ফল পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত বিদ্যালয়ে গিয়ে নিজের ফলাফল জেনে চমকে ওঠেন তিনিও—১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৫!

“শুধু সময় নয়, মনোযোগই সবচেয়ে বড় শক্তি”

ফল পাওয়ার পর নিবিড় জানান, “ভালো ফলের আশা ছিল, তবে নম্বরটা এতটা হবে ভাবিনি। যতক্ষণ পড়েছি, পুরো মন দিয়ে পড়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে, সময়ের পরিমাণ নয়, বরং মনোযোগই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

তিনি প্রতিদিন গড়ে ৮–১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। তবে সাফল্যের জন্য নির্দিষ্ট সময় নয়, বরং পরিকল্পিত অধ্যয়নকেই সবচেয়ে কার্যকর মনে করেন। বলেন, “আমি পাঠ্যবইটাই বারবার খুঁটিয়ে পড়েছি। কোনো টপিক ফাঁকি দিইনি। বুঝে পড়াটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”

পরিবার ও শিক্ষকদের নিঃশর্ত সহায়তা

নিবিড়ের এমন কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে পরিবারের সহযোগিতা ও শিক্ষকদের আন্তরিকতা। বাবা জীবন কর্মকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, মা রিয়া রায় গৃহিণী। নিবিড়ের পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালীতে হলেও বর্তমানে তারা চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

নিবিড়ের বাবা বলেন, “ছেলেকে আমরা কখনোই কোচিং বা চাপের মধ্যে রাখিনি। শুধু খেয়াল রেখেছি, ঘরে যেন শান্তিপূর্ণ পড়ার পরিবেশ থাকে। ও নিজেই নিজের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে।”

মা রিয়া রায় বলেন, “ওকে কখনোই পড়াশোনার জন্য জোর করতে হয়নি। বরং রচনা প্রতিযোগিতা, অলিম্পিয়াড, সহশিক্ষা কার্যক্রমেও নিজেই অংশ নিত। আমরা শুধু পাশে ছিলাম, উৎসাহ দিয়েছি।”

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুর রহমান বলেন, “নিবিড় অত্যন্ত ভদ্র, সুশৃঙ্খল ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থী। সব সময় নিয়মিত ক্লাস করেছে, কোনো কিছু না বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের সহায়তা নিত। আমাদের স্কুলে এবার সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে ও।”

কী ছিল নিবিড়ের সফলতার রহস্য

নিবিড়ের নিজের ভাষায়, সফলতার পেছনে বড় তিনটি কারণ কাজ করেছে:

পাঠ্যবই পড়াশোনা: গাইড বা নোট নয়, বরং মূল বইকেই একাধিকবার পড়ে সব কিছু বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

মনোযোগ ও অধ্যবসায়: পড়াশোনার সময় distractions এড়িয়ে পুরো মনোযোগ দিয়ে পড়া।

পরিবার ও শিক্ষকের সহায়তা: পরিবেশ তৈরি, দিকনির্দেশনা, এবং মানসিক সহায়তা সব সময়ই পাশে পেয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, বোর্ড বই ঠিকমতো পড়লেই ভালো ফল নিশ্চিতভাবে সম্ভব।”

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য—বুয়েট

একসময় আঁকাআঁকি ছিল তার শখ, তবে বর্তমানে সময় জুড়ে শুধু পড়াশোনা। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে বলেন, “আমার লক্ষ্য বুয়েটে ভর্তি হওয়া। ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করতে চাই, দেশের জন্য কিছু করতে চাই।”

“সবাই পাশে ছিল বলেই আজ আমি এখানে”

শেষে নিবিড় বলেন, “প্রতিটি পরীক্ষার আগে নার্ভাস লাগত। প্রশ্ন কেমন আসবে তা নিয়ে চিন্তা হতো। তবে মা–বাবা, শিক্ষক—সবাই সাহস জুগিয়েছেন। আমি কৃতজ্ঞ সৃষ্টিকর্তার কাছে। তাঁদের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় আজ আমি এখানে দাঁড়িয়ে।”

নিবিড় কর্মকারের এই অসাধারণ ফলাফল শুধু সংখ্যা নয়, বরং নিষ্ঠা, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাসের জীবন্ত উদাহরণ। তার এই গল্প এখন অন্যদের জন্য পথ দেখানোর বাতিঘর।

FAQ with Answers (Google Rich Snippet Friendly):

Q1: নিবিড় কর্মকার কে এবং সে কোন স্কুলের শিক্ষার্থী?

A: নিবিড় কর্মকার চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী, যিনি ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৫ নম্বর পেয়েছেন।

Q2: নিবিড়ের এসএসসি সফলতার মূল রহস্য কী ছিল?

A: নিবিড়ের সফলতার মূল রহস্য ছিল পাঠ্যবইকেন্দ্রিক অধ্যয়ন, মনোযোগী পড়াশোনা এবং পরিবারের ও শিক্ষকদের সহায়তা।

Q3: নিবিড় ভবিষ্যতে কী হতে চায়?

A: নিবিড়ের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হলো বুয়েটে ভর্তি হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া এবং ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজ করা।

Q4: সে প্রতিদিন কত সময় পড়াশোনা করত?

A: নিবিড় প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করত।

Q5: কি ধরণের বই বা রিসোর্স বেশি ব্যবহার করেছে?

A: নিবিড় মূলত পাঠ্যবইকেই গুরুত্ব দিয়েছে এবং গাইড বা শর্টকাট নয়, মূল বই খুঁটিয়ে বুঝে পড়েছে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ