ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শ্রীলঙ্কাকে ৮৩ রানে বিধ্বস্ত করে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ২২:৪৩:১৩
শ্রীলঙ্কাকে ৮৩ রানে বিধ্বস্ত করে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দাম্বুলা, ১৩ জুলাই ২০২৫ – তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কাকে ৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। দাম্বুলার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে ব্যাটে নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও বোলিংয়ে একত্রিত আক্রমণ বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেছে। এই জয়ের মাধ্যমে সিরিজে ১-১ সমতা ফিরেছে টাইগাররা।

বাংলাদেশ ব্যাটিং: শুরুর ধাক্কা সামলে দায়িত্বশীল ইনিংস

টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না। ইনিংসের প্রথম ওভারেই পারভেজ হোসেন ইমন ও দ্বিতীয় ওভারে তানজিদ হাসান ফিরে গেলে দলীয় স্কোর দাঁড়ায় ৭/২। কিন্তু এরপরই অধিনায়ক লিটন দাস এবং তৌহিদ হৃদয় গঠন করেন ৬৯ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি।

লিটন দাস এদিন ছিলেন অসাধারণ। তিনি ৫০ বলে ৭৬ রানের একটি টেকসই ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল মাত্র ১টি চারের বিপরীতে ৫টি ছক্কার দুর্দান্ত মার। তৌহিদ হৃদয় ২৫ বলে ৩১ রান করেন, যার মাঝে ছিল ২টি চার ও ১টি ছক্কা। তবে দলের স্কোরে সবচেয়ে দ্রুত গতির ইনিংসটি আসে শামিম হোসেন পাটোয়ারীর ব্যাট থেকে। তিনি মাত্র ২৭ বলে ৪৮ রান করেন এবং শেষদিকে দলকে তুলেন লড়াকু স্কোরে।

বাংলাদেশ নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৭৭ রান। শ্রীলঙ্কার পক্ষে বিনুরা ফার্নান্দো ৩টি উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন।

শ্রীলঙ্কার জবাব: শুরু থেকেই ছন্দহীন

১৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই শ্রীলঙ্কা হারাতে থাকে নিয়মিত উইকেট। ইনিংসের প্রথম ৬ ওভারের মধ্যেই তারা হারায় চারটি উইকেট এবং ম্যাচ একপ্রকার একতরফা হয়ে যায়। কুশল মেন্ডিস, কুশল পেরেরা ও অভিষ্কা ফার্নান্দোর মতো অভিজ্ঞ ব্যাটাররা চরমভাবে ব্যর্থ হন। দলের পক্ষে একমাত্র উজ্জ্বলতা দেখান ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা, যিনি ২৯ বলে ৩২ রান করেন। বাকি ব্যাটারদের মধ্যে কেউই দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি, শুধুমাত্র দাসুন শানাকা করেন ১৬ বলে ২০ রান।

বাংলাদেশি বোলারদের দারুণ পরিকল্পনামাফিক বোলিংয়ে ১৫.২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। মাত্র ৯৪ রানে গুটিয়ে যাওয়া লঙ্কান ব্যাটিং অর্ডার বাংলাদেশের বোলিং ইউনিটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে।

বাংলাদেশের বোলিং: সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত ও আক্রমণাত্মক

বাংলাদেশের তরুণ স্পিনার রিশাদ হোসেন ছিলেন সবচেয়ে সফল। তিনি ৩.২ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে শিকার করেন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তার বোলিং ছিল টার্ন ও ভ্যারিয়েশনে ভরপুর। বামহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম ৩ ওভারে ১২ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নেন ১টি করে উইকেট, যেখানে সাইফউদ্দিনের শিকার ছিল দলনেতা চরিথ আসালাঙ্কা ও জেফ্রি ভানডারসে।

ম্যাচ বিশ্লেষণ ও পারফরম্যান্স হাইলাইটস

লিটন দাসের ৭৬ রানের ইনিংস ছিল ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো। চাপের মধ্যে তার নেতৃত্বপূর্ণ ইনিংস দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

রিশাদ হোসেনের স্পিন বোলিং শ্রীলঙ্কান ব্যাটারদের বিপর্যস্ত করে তোলে।

শামিম হোসেনের আগ্রাসী ইনিংস ইনিংসের শেষ দিকে রানের গতি বাড়িয়ে দেয়।

বোলারদের মধ্যে বৈচিত্র্য ছিল লক্ষ্যণীয় – কেউ স্লোয়ার, কেউ অফকাটার, কেউ শর্ট বল দিয়ে চমকে দিয়েছে প্রতিপক্ষকে।

সিরিজের বর্তমান চিত্র

এই জয়ের ফলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ এখন ১-১ সমতায়। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুলাই, একই ভেন্যুতে। দুই দলই জয়ের লক্ষ্যে নামবে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে। বাংলাদেশের জন্য এটি হতে পারে বিদেশের মাটিতে একটি স্মরণীয় সিরিজ জয়ের সুযোগ।

বাংলাদেশ দল যেভাবে ম্যাচে ফিরে এসে শ্রীলঙ্কাকে চূর্ণ করেছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই ছিল একাগ্রতা ও ছন্দ। বিশেষ করে তরুণদের পারফরম্যান্স দলকে ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী করে তুলছে। এখন টাইগার ভক্তদের চোখ আগামী ম্যাচে, যেখানে সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পাবে সাকিব-লিটন-রিশাদদের বাংলাদেশ।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ