ঢাকা, শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

আর্চিতা ফুকানের ভিডিও ভাইরাল: আসল না নকল? জানুন পুরো ঘটনা

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১৮ ০৬:১৯:৫০
আর্চিতা ফুকানের ভিডিও ভাইরাল: আসল না নকল? জানুন পুরো ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ‘আর্চিতা ফুকান’ নামের এক তরুণী। ইনস্টাগ্রামে ‘Archita Phukan’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক সাহসী ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পরই শুরু হয় বিতর্ক। বিশেষ করে আমেরিকার প্রাপ্তবয়স্ক তারকা কেন্দ্রা লাস্টের সঙ্গে একটি মিথ্যাচিত্র পোস্ট করার পর বিষয়টি আরও ভাইরাল হয়ে পড়ে।

এই ঘটনায় অনেকেই প্রশ্ন তোলেন—আর্চিতা ফুকান আদৌ একজন বাস্তব ব্যক্তি কিনা, নাকি এটি কেবল ইন্টারনেটের ভুয়া এক পরিচিতি।

তবে তদন্তে যা উঠে এসেছে, তা শুধু সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁস হওয়া কনটেন্ট নয়—প্রকাশ পেয়েছে এক নারীর সম্মানহানির নির্মম গল্প এবং ডিজিটাল প্রতারণার অন্ধকার জগৎ।

কে এই ‘আর্চিতা ফুকান’? বাস্তব না কি বানানো?

Tech To Facts নামক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, আর্চিতা ফুকান বাস্তবেই একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রভাবশালী। তার জন্ম ১৯৯৫ সালে, ভারতের আসাম রাজ্যের রাজধানী গुवাহাটিতে।

তিনি পড়াশোনা করেছেন হাতিগাঁওয়ের ‘লিটল ফ্লাওয়ার হাই স্কুল’-এ। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য যান হরিয়ানার গানউরের ‘Delhi College of Technology and Management’-এ।

আর্চিতা পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন মডেলিংয়ে কাজ করেন এবং বন্ধুদের সহায়তায় যান মুম্বাইয়ে। জানা গেছে, তিনি এক পর্যায়ে প্লেবয় লিঞ্জারি মডেল হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে এই তথ্য নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিতভাবে জানানো হয়েছে যে তিনি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক বিনোদনজগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

ভাইরাল অ্যাকাউন্টটি কে পরিচালনা করছিল?

এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই পুরো ঘটনা মোড় নেয় চাঞ্চল্যের দিকে।

ডিব্রুগড় পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, যে ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি ‘Archita Phukan’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল, সেটি মূলত আর্চিতার প্রাক্তন প্রেমিক প্রতিম বরা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল।

প্রথমে ওই অ্যাকাউন্টে আর্চিতার ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন সাহসী কনটেন্ট পোস্ট করা হয়। পরবর্তীতে অ্যাকাউন্টটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘Ishtara Amira’। এর ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয় এবং অনেকেই ভেবে নেন, এটি হয়তো নতুন কোনো মডেল বা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর।

পুলিশ জানায়, প্রতিম বরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আর্চিতার সম্মানহানি করতে ওই সব ছবি ও ভিডিও আপলোড করে। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে মানহানি, ডিজিটাল হেনস্তা, গোপনীয়তা লঙ্ঘন এবং প্রতারণা।

আসাম পুলিশের বক্তব্য: মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা

এই বিষয়ে আসাম পুলিশের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে—

“আর্চিতা ফুকান নামে যিনি পরিচিত, তিনি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ভিডিও বা কনটেন্টের সঙ্গে যুক্ত নন। তিনি বিদেশেও অবস্থান করছেন না। এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ডিজিটাল প্রতারণা, যার মাধ্যমে তার সম্মানহানি করার চেষ্টা হয়েছে।”

পুলিশ আরও জানায়, এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজে একটি ভয়ঙ্কর বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে—ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিশোধ নিতে কেউ যেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার না করে, সে বিষয়ে সকলে সচেতন হওয়া উচিত।

ডিজিটাল প্রতিশোধ: ক্রমবর্ধমান হুমকি

এই ঘটনা শুধু একটি সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্যান্ডাল নয়। এটি একটি সামাজিক বার্তাবাহী উদাহরণ, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে 'রিভেঞ্জ পর্ন' বা প্রতিশোধমূলক কনটেন্ট' ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অপরাধ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ভার্চুয়াল জগতে ব্যক্তি বিশেষের ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে সম্মানহানি করা এখন এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা।

ভারতের আইটি আইন অনুযায়ী, এ ধরনের অপরাধের জন্য অভিযুক্তদের ৩ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে।

সামাজিক মাধ্যমের দায়িত্ব

এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সময়মতো ভুয়া অ্যাকাউন্ট বা প্রতারকের কার্যক্রম শনাক্ত ও রোধ না করায় অনেকক্ষেত্রে নিরীহ মানুষ অপবাদ ও অপমানের শিকার হন।

তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ব্যবহারকারীদের আরও সচেতন থাকা উচিত, এবং সন্দেহজনক বা মানহানিকর কোনো কনটেন্ট দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে রিপোর্ট করতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবগত করাও জরুরি।

আর্চিতা ফুকানের ঘটনা শুধুমাত্র একজন মেয়ে বা তার সামাজিক পরিচয় নয়। এটি আমাদের ডিজিটাল সমাজে চলমান একটি গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। যেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং মানসিক ক্ষোভ একত্র হয়ে একজন মানুষের জীবনের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

এখন সময় এসেছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা এবং ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য আরও কঠোর আইন, জনসচেতনতা এবং সামাজিক দায়িত্ব নিশ্চিত করার।

দ্রষ্টব্য: উপরের প্রতিবেদনটি প্রকাশ্য সোর্স ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত। এতে উল্লেখিত কোনো দাবির স্বতন্ত্র যাচাই সংবাদদাতা কর্তৃক করা হয়নি। এই কনটেন্ট শুধুমাত্র তথ্য ও বিশ্লেষণমূলক উদ্দেশ্যে তৈরি।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ