ঢাকা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

২০৫০ সালের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে টুভালু, গড়ছে ডিজিটাল রাষ্ট্র

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৬ ১২:৫৫:১১
২০৫০ সালের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে টুভালু, গড়ছে ডিজিটাল রাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে ছোট্ট এক দ্বীপদেশ— টুভালু। সবুজে ঘেরা, নীল জলে ভাসমান এই দেশের ভবিষ্যৎ এখন ঝুঁকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ২০৫০ সালের মধ্যেই দেশটির পুরো ভূখণ্ড হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে বিশেষজ্ঞরা। তবে হাল না ছেড়ে, টুভালু বেছে নিয়েছে এক সাহসী ও ব্যতিক্রমী পথ— ডিজিটাল রাষ্ট্র গঠনের।

টুভালুর অস্তিত্ব সংকট: সমুদ্রই হয়ে উঠছে হুমকি

টুভালু বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর একটি। দেশটির সর্বোচ্চ উচ্চতা মাত্র ৫ মিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এরই মধ্যে দ্বীপটির কিছু অংশ বারবার উচ্চ জোয়ার ও বন্যায় পানির নিচে চলে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি বর্তমান হারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়তে থাকে, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যেই টুভালুর প্রায় পুরো ভূখণ্ড ডুবে যাবে সমুদ্রের নিচে। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাবে একটি জাতির বাস্তব ঠিকানা।

আন্তর্জাতিক অভিবাসনই শেষ ভরসা

২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, টুভালুর মোট জনসংখ্যা প্রায় ৯,৫০০। এর প্রায় অর্ধেক নাগরিক ইতোমধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের আবেদন করেছেন।

জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি “Australian Pacific Immigration Visa” প্রোগ্রামের আওতায় প্রতি বছর ২৮০ জন টুভালুবাসীকে দেওয়া হচ্ছে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, সঙ্গে থাকছে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও চাকরির অধিকার।

অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ডও প্রতি বছর ৭৫ জন টুভালু নাগরিককে গ্রহণ করছে “Pacific Access Category Visa”-র মাধ্যমে।

ডিজিটাল রাষ্ট্র: পরিচয় রক্ষার এক নতুন দিগন্ত

যদিও ভূখণ্ড হারিয়ে যেতে বসেছে, তবে টুভালু আত্মপরিচয় রক্ষায় নিচ্ছে এক যুগান্তকারী উদ্যোগ। তারা গড়ে তুলছে বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রাষ্ট্র।

এই ডিজিটাল রাষ্ট্রে সংরক্ষিত থাকবে—

রাষ্ট্রের আইন ও প্রশাসনিক কাঠামো

ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভাষা

জাতীয় নথিপত্র ও নাগরিক সেবা

প্রধানমন্ত্রী ফেলেতি টেও জানিয়েছেন, “ভূখণ্ড হারালেও আমাদের জাতি হারাবে না। আমাদের স্মৃতি, আমাদের আত্মা—থাকবে এই ডিজিটাল টুভালুতে।”

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সহযোগিতা

টুভালুর এই পদক্ষেপকে সম্মান জানিয়ে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং সামুদ্রিক সীমা স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে—যেখানে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কেবল ভৌগোলিক নয়, বরং আইনি ও সাংস্কৃতিকও।

অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যে ২৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে টুভালুর উপকূল সংরক্ষণে ও জলবায়ু প্রতিরোধমূলক প্রকল্পে।

জাতিগত পরিচয় টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম

নতুন দেশে অভিবাসন পেলেও টুভালু নাগরিকদের সবচেয়ে বড় ভয়— নিজস্ব পরিচয় হারিয়ে ফেলা। কারণ ভৌগোলিক সীমা হারিয়ে গেলে ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যও হারিয়ে যেতে পারে সময়ের স্রোতে।

ডিজিটাল রাষ্ট্র প্রকল্পের লক্ষ্যই হলো—বিশ্বের যেখানেই ছড়িয়ে থাকুক, টুভালুর মানুষ যেন একটি জাতি হিসেবে নিজেদের ঐক্য ও পরিচয় টিকিয়ে রাখতে পারে।

সময়ের বিরুদ্ধে এক সাহসী রাষ্ট্র

২০৫০ সালের পর হয়তো আমরা মানচিত্রে ‘টুভালু’ নামটি আর খুঁজে পাব না। কিন্তু তারা থাকবে আমাদের ডিজিটাল জগতে—একটি জাতির সংগ্রামের প্রতীক হয়ে।

ভূখণ্ড হারিয়ে গেলেও, জাতি হারায় না—টুভালু আজ সেই সাহসের নাম।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ