ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

কি করলে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে পাগলের মতো ভালোবাসে জেনে নিন

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০১ ১০:১৪:১৩
কি করলে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে পাগলের মতো ভালোবাসে জেনে নিন

যেখানে সম্পর্ক ভাঙা-গড়ার খেলা নিত্যদিনের ঘটনা, সেখানে শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য জীবনের দীর্ঘ ৫০ বছর পেরিয়ে আসা এক দম্পতির গল্প অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানী সাংবাদিকের নজরে আসে এই প্রবীণ দম্পতি, যাদের জীবনে মনোমালিন্য বা কলহের ছিটেফোঁটাও নেই। এই অনবদ্য সম্পর্কের পেছনের গোপন রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে সাংবাদিক মুখোমুখি হন বৃদ্ধা স্ত্রীর, যার জীবনবোধ ও প্রজ্ঞা প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দেয়।

সাংবাদিকের প্রথম প্রশ্ন ছিল—ভালো খাবার, শারীরিক সৌন্দর্য, সন্তান অথবা অর্থসম্পদ—এগুলোর কোনোটিই কি তাদের দীর্ঘ ৫০ বছরের সফলতার কারণ? বৃদ্ধা মৃদু হেসে সব ধারণা নস্যাৎ করে দেন। তিনি বোঝান, অনেক ধনী মহিলাও স্বামীর অবহেলায় দুঃখময় জীবন কাটান, বহু সন্তানের জননীরাও স্বামীর বিতৃষ্ণা ও বিবাহবিচ্ছেদের শিকার হন। এমনকি রান্নাঘরে সারাদিন খেটেও অনেক নারীকে স্বামীর দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয়। দাম্পত্য জীবনের আসল সুখ-শান্তি প্রথমে আল্লাহর ইচ্ছা এবং এরপর স্ত্রীর হাতেই বলে তিনি দৃঢ়ভাবে জানান।

বৃদ্ধা বলেন, "একজন স্ত্রী চাইলে তার ঘরকে জান্নাতের টুকরো বানাতে পারেন, আবার চাইলে জাহান্নামেও পরিণত করতে পারেন।"

ঝগড়া নিরসনে নীরবতার কৌশল

তার সাফল্যের মূলমন্ত্রটি স্পষ্ট হয় যখন তিনি তার স্বামীর রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল বর্ণনা করেন। যখনই স্বামী রেগে গিয়ে তাকে বকাবকি করতেন, তিনি অত্যন্ত সম্মান দেখিয়ে নীরবতা অবলম্বন করতেন এবং অনুতপ্ত হয়ে মাথা দুলিয়ে স্বামীর প্রতিটি কথায় সায় দিতেন। তবে তিনি সতর্ক করে দেন যে, বিদ্রূপের দৃষ্টিতে চুপ হয়ে থাকা চলবে না, কারণ বিচক্ষণ পুরুষেরা সহজেই তা বুঝতে পারেন।

সাংবাদিক কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, এই সময় তিনি ঘর ছেড়ে চলে যেতেন কিনা। বৃদ্ধা তৎক্ষণাৎ উত্তর দেন, "সাবধান! এটা কখনো করবেন না। তখন তিনি মনে করবেন, আপনি তার কথায় বিরক্ত হয়ে পালাতে চাচ্ছেন।" বরং, তার উচিত চুপ থেকে স্বামীর প্রতিটি কথায় ইতিবাচক সায় দেওয়া, যতক্ষণ না তিনি শান্ত হন।

অভিমান ভাঙানোর অনন্য পদ্ধতি

এরপর সাংবাদিক জানতে চান, স্বামী শান্ত হওয়ার পর তিনি কি এক সপ্তাহ তার থেকে দূরে থাকতেন বা কথা বলা বন্ধ রাখতেন? বৃদ্ধার উত্তর ছিল—"এ ধরনের বদভ্যাস থেকে দূরে থাকুন। যা দুধারী তরবারির চেয়েও মারাত্মক।" তিনি বোঝান, স্বামী যখন আপোষ করতে চান, তখন যদি স্ত্রী তার কাছে না যান, তাহলে স্বামী একা থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন এবং কখনো কখনো এই অবস্থা তাকে প্রচণ্ড জিদের দিকে ঠেলে দেবে।

তার অভিমান ভাঙানোর পদ্ধতিটি ছিল আরও কার্যকর। দুই ঘণ্টা পর তিনি এক গ্লাস দুধ বা এক কাপ গরম চা নিয়ে স্বামীর কাছে যেতেন এবং বলতেন, "নিন, এগুলো খেয়ে নিন, আপনি খুব ক্লান্ত।" এসময় তিনি স্বামীর সঙ্গে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে কথা বলতেন। এরপর স্বামী নিজেই অনুতপ্ত হয়ে প্রশ্ন করতেন, "রাগ করেছ?" বৃদ্ধা তখন শান্তভাবে উত্তর দিতেন, "না।"

তার এই উত্তরে সাংবাদিক বিস্মিত হয়ে জানতে চান, তিনি কি তখন স্বামীর কথা বিশ্বাস করতেন? বৃদ্ধা বলেন, "অবশ্যই। কেন নয়? শান্ত থাকা অবস্থায় যা বলেন তা বিশ্বাস না করে, রাগান্বিত অবস্থায় যা বলেন তা বিশ্বাস করব?"

ব্যক্তিত্বের নতুন সংজ্ঞা: সম্পর্কের স্বচ্ছতা

সবশেষে সাংবাদিক তার "ব্যক্তিত্ব" নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বৃদ্ধা উত্তর দেন, "আমার স্বামীর সন্তুষ্টিই আমার ব্যক্তিত্ব। আমাদের স্বচ্ছ সম্পর্কই আমাদের ব্যক্তিত্ব।" তিনি আরও যোগ করেন, "স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে কোনো স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব থাকে না। যার সামনে তুমি

পুরোপুরিভাবে বস্ত্রহীন হয়েছ, তার কাছে আবার কিসের ব্যক্তিত্ব?"

তার এই কথাগুলো বিনয়, ধৈর্য এবং দাম্পত্যের গভীর সংযোগের এক শাশ্বত শিক্ষা দেয়। এটি মনে করিয়ে দেয় যে, কখনো কখনো ব্যক্তিগত অহংকে বিসর্জন দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতিকে প্রাধান্য দেওয়াই হতে পারে সত্যিকারের শক্তি এবং সুখের পথ।

মহান রব্ব আমাদের দুনিয়ার জীবন ও আখিরাতের জীবনে কল্যাণ দান করুন। আমীন।

আব্দুর রহিম/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ