ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

শিশুদের শৈশব: মস্তিষ্কের ক্ষতি ঠেকাতে সাবধান হন!

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০১ ১৪:৪৭:৫৪
শিশুদের শৈশব: মস্তিষ্কের ক্ষতি ঠেকাতে সাবধান হন!

শৈশবের ট্রমা: মস্তিষ্কে যুদ্ধের মতো গভীর ক্ষত, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব!

শৈশবের তিক্ত অভিজ্ঞতা শুধু মনের গভীরে কষ্ট দেয় না, মস্তিষ্কের গঠনেও ফেলে সুদূরপ্রসারী প্রভাব, যা যুদ্ধফেরত সৈনিকদের পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) এর মতোই ভয়াবহ হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণা এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে, যেখানে শৈশবের ঝগড়া-বিবাদ, নির্যাতন, অবহেলা বা পারিবারিক অস্থিরতাকে 'টক্সিক স্ট্রেস' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

মস্তিষ্কে গভীর পরিবর্তন:

'ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকিয়াট্রি, ২০২৪' জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, শৈশবের প্রতিকূল অভিজ্ঞতা মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা, হিপোক্যাম্পাস এবং প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সে গঠনগত ও কার্যগত পরিবর্তন ঘটায়।

অ্যামিগডালা: মস্তিষ্কের এই অংশটি ভয় এবং উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী। শৈশবের ট্রমার কারণে এটি অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফলে শিশুদের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ এবং অতিরিক্ত সতর্কতার প্রবণতা (hypervigilance) বৃদ্ধি পায়।

হিপোক্যাম্পাস: স্মৃতিশক্তি, শেখা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটি ট্রমার প্রভাবে ছোট হয়ে যেতে পারে। এর ফলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, শেখার অক্ষমতা এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা যায়।

প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স: সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মনোযোগ এবং ইম্পালস নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়ী এই অংশটি দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলস্বরূপ শিশুদের সিদ্ধান্তহীনতা, মনোযোগের অভাব এবং আবেগপ্রবণতা বাড়ে।

এই পরিবর্তনগুলো যুদ্ধফেরত সৈনিকদের মস্তিষ্কে PTSD-এর কারণে হওয়া পরিবর্তনগুলোর মতোই। বিজ্ঞানীরা এটিকে "টক্সিক স্ট্রেস" বা "অ্যাডভার্স চাইল্ডহুড এক্সপেরিয়েন্সেস (ACEs)" বলে অভিহিত করেছেন, যা যুদ্ধক্ষেত্রের ট্রমার মতোই মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল:

শৈশবের এই ট্রমাজনিত প্রভাব শিশুদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:

উদ্বেগ এবং হতাশা

আগ্রাসী আচরণ

মনোযোগের ঘাটতি

শেখার সমস্যা

এমনকি বড় হয়ে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস-এর মতো শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি বৃদ্ধি।

অর্থাৎ, শৈশবে পরিবারে অস্থিরতা বা সহিংস পরিবেশ শুধু মানসিকভাবে নয়, মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যক্রমেও গভীর প্রভাব ফেলে। এই গবেষণা শৈশবের পরিবেশের গুরুত্ব এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষায় পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।

এটি আমাদের শেখায় যে শিশুদের সুস্থ শৈশব নিশ্চিত করা শুধু তাদের মানসিক বিকাশের জন্যই নয়, বরং একটি সুস্থ এবং স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যও অপরিহার্য।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ