ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

খুব সহজে স্বাস্থ্যকর উপায়ে মোটা হবেন যেভাবে

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ অক্টোবর ০৯ ০৮:৪৬:০৩
খুব সহজে স্বাস্থ্যকর উপায়ে মোটা হবেন যেভাবে

ওজন কমানোর বিষয়টি নিয়ে যতটা আলোচনা হয়, ওজন বাড়ানো নিয়ে ততটা আলোচনা সাধারণত দেখা যায় না। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, অতিরিক্ত ওজন যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনই কম ওজনও এক ধরনের অপুষ্টি এবং এটি শরীরের জন্য বিভিন্ন ঝুঁকির কারণ হতে পারে। সম্প্রতি, স্বনামধধন্যা পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়ানোর পদ্ধতি এবং এ সংক্রান্ত ভুল ধারণাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

ওজন বাড়াতে সাধারণ ভুলগুলো এবং সঠিক পথ

পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা উল্লেখ করেন, ওজন বাড়াতে ইচ্ছুক অনেকেই দ্রুত ফল পেতে প্রচুর মিষ্টি জাতীয়, তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন। এটি একটি ভুল পদ্ধতি। কারণ এই ধরনের খাবার সাময়িকভাবে ওজন বাড়ালেও তা স্বাস্থ্যকর মাসল গেইন বা পেশী বৃদ্ধিতে সহায়ক নয় এবং দীর্ঘমেয়াদে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বরং, ওজন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন একটি সুষম এবং পরিকল্পিত খাদ্যাভ্যাস।

ওজন বৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তারকারী গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ

পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা জানান, স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির প্রক্রিয়ায় বয়স, পেশা, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং শরীরে কোনো সুপ্ত রোগ আছে কিনা, তা বিবেচনা করা জরুরি। বিশেষত ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে সঠিক ওজন অর্জনের সুযোগ বেশি থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম ওজন বৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কোষ মেরামত ও গ্রোথ হরমোন সক্রিয়করণে সহায়তা করে।

অনিয়মিত ঘুম, যেমন দিনের বেলায় বেশি ঘুমানো এবং রাতে পর্যাপ্ত না ঘুমানো, পাতলা স্বাস্থ্য, ক্ষুধামন্দা এবং পেটে গ্যাসের কারণ হতে পারে। এছাড়া, দুশ্চিন্তা ওজন কমানোর পাশাপাশি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। যারা দীর্ঘকাল ধরে কম ওজনের সমস্যায় ভুগছেন এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেননি, তাদের জন্য ওজন বাড়ানো কিছুটা কঠিন হতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ আপনার বয়স, কাজের ধরন, বর্তমান স্বাস্থ্য অবস্থা এবং খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করে একটি কার্যকর পরিকল্পনা দিতে পারবেন।

স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ

পুষ্টিবিদ আয়শা সিদ্দিকা স্বাস্থ্যকর উপায়ে ৫ থেকে ১০ কেজি ওজন বাড়ানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন:

খাবারের সময়সূচী: নিয়মিত সময়ে খাবার গ্রহণ করা অপরিহার্য।

পরিমিত আহার: প্রয়োজন অনুযায়ী মেপে খাবার খেতে হবে।

পর্যাপ্ত পানি পান: শরীরে সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখা উচিত।

দুশ্চিন্তা পরিহার: মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।

পর্যাপ্ত ঘুম: রাতে পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

শারীরিক পরিশ্রম: কেবল ওজন কমানোর জন্য নয়, শারীরিক পরিশ্রম ওজন বাড়াতেও সাহায্য করে। ওয়ার্কআউট ক্ষুধামন্দা দূর করে, হজম ক্ষমতা বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং পেশী গঠনে সহায়ক হরমোন সক্রিয় করে।

প্রাকৃতিক ও তাজা খাবার: বাইরের মিষ্টি, ভাজা পোড়া বা প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে ঘরে তৈরি তাজা ও প্রাকৃতিক খাবার খেতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

প্রোটিন গ্রহণ: মাসল গেইনের জন্য শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেমন, ৪০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তির যদি ৫০ কেজি ওজন দরকার হয়, তাহলে তাকে প্রতিদিন ৫০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, ডাল ও বাদাম প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস, যা দৈনিক ৫-৬ সার্ভিং হিসাবে খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত।

পুষ্টি শোষণ: কিছু ভিটামিন ও খনিজ শরীরে সঠিকভাবে শোষিত হওয়ার জন্য অন্য উপাদানের প্রয়োজন হয়। যেমন, ভিটামিন ডি শোষণের জন্য ল্যাক্টোজ এবং ভালো ফ্যাট অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শের গুরুত্ব

পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা জোর দিয়ে বলেন, ওজন বাড়াতে বা কমাতেই হোক, একটি ব্যক্তিগতকৃত খাদ্যতালিকা অত্যন্ত জরুরি। কারণ একজন পুষ্টিবিদ আপনার শরীরের চাহিদা, পছন্দের খাবার এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনা করে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করতে পারেন, যা কেবল ওজন বৃদ্ধিতেই নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও পেশী গঠনেও সাহায্য করবে। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন বাড়াতে হলে খাদ্য, জীবনযাপন, শারীরিক কার্যকলাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে সার্বিক মনোযোগ প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়ায় একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের তত্ত্বাবধান আপনাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ