ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

দৈনিক খাবারেই বাড়ে স্ট্রোকের ভয়! হার্ট সুস্থ রাখতে ডায়েটে আনুন ৫টি পরিবর্তন

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ২০ ১৬:৪৪:৪৬
দৈনিক খাবারেই বাড়ে স্ট্রোকের ভয়! হার্ট সুস্থ রাখতে ডায়েটে আনুন ৫টি পরিবর্তন

দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসই স্ট্রোকের প্রধান কারণ? জেনে নিন কোন খাবারগুলো চুপিসারে মস্তিষ্কের বিপদ বাড়াচ্ছে

আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় থাকা চিপস, সফ্ট ড্রিংকস, বেকারিজাত পণ্য বা প্রসেসড মাংসের মতো জিনিসগুলো শরীরের অভ্যন্তরে একটি নীরব বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন— এই অনিয়ন্ত্রিত ভোজনরীতিই স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং রক্তচাপ জনিত মারাত্মক শারীরিক সমস্যার মূল নিয়ামক।

প্রক্রিয়াজাত খাদ্য কেন শরীরের জন্য বিষ?

চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের মতে, মস্তিষ্ক এবং হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতার জন্য অতি প্রয়োজনীয় ওমেগা-৩, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো উপাদানগুলোর অভাব ঘটলেই বিপত্তি শুরু হয়। এই ঘাটতির ফলে দেহের খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়, রক্তনালীতে চর্বি জমে পথরোধ করে এবং রক্তচাপ অনিয়মিত হয়ে পড়ে— যা শেষ পর্যন্ত হৃদযন্ত্রের গোলযোগ বা স্ট্রোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্যাকেটে মোড়ানো খাবারগুলোতে এই অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে না। বরং, এতে মেশানো হয় ক্ষতিকর সংরক্ষণকারী পদার্থ, ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি, যা শরীরকে দ্রুত 'প্রদাহের স্তরে' ঠেলে দেয়।

যে খাবারগুলো বিপদসীমা অতিক্রম করাচ্ছে

নিম্নলিখিত খাদ্যদ্রব্যগুলো LDL কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, এবং সোডিয়াম ও চিনি শরীরের জলীয় ভারসাম্য নষ্ট করে দ্রুত রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়— যা স্ট্রোকের প্রধান ট্রিগার:

গভীর তেলে ভাজা খাদ্য।

হিমায়িত সসেজ, স্যালামি ও বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত মাংস।

বেকারি পণ্য এবং পেস্ট্রি।

মিষ্টিযুক্ত পানীয় ও কোল্ড ড্রিংকস।

অতিরিক্ত লবণ মিশ্রিত প্যাকেটজাত স্ন্যাকস।

পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন সাদা পাউরুটি।

পুষ্টিবিদরা জোর দিয়ে বলছেন— "দেহে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে গেলে রক্তচাপও বাড়ে। আর উচ্চ রক্তচাপই হলো স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ।"

জীবন রক্ষাকারী খাদ্যাভ্যাস: যা অবশ্যই মানতে হবে

দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এমন উপাদান অন্তর্ভুক্ত করুন যেখানে লবণের মাত্রা কম থাকবে এবং প্রাকৃতিক পটাশিয়াম বেশি থাকবে। ভাজাভুজির বদলে সবজি ও ফল গ্রহণ করুন।

১. পটাশিয়াম-সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ:

সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং রক্তচাপ সঠিক রাখতে খাবার তালিকায় যোগ করুন:

নারকেল পানি

ডাল

পালংশাক

কলা

কুমড়োর বীজ

২. সুস্থ হার্টের জন্য প্রয়োজনীয় তেল ও বীজ

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, পরিশোধিত তেলের ব্যবহার কমানো উচিত এবং সরিষার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তেলের ব্যবহার যত কম হবে, তত ভালো।

পাশাপাশি, হৃদপিণ্ডের সুরক্ষার জন্য ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বাড়াতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন:

দুটি আখরোট

এক চা চামচ ফ্ল্যাক্সসিড

সামান্য চিয়া বীজ

সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে জীবনশৈলীর পরিবর্তন

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে শুধু খাদ্য নয়, দৈনন্দিন জীবনযাত্রাতেও পরিবর্তন আনা জরুরি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:

দিনে পর্যাপ্ত জল পান করুন।

অ্যালকোহল সম্পূর্ণ পরিহার করুন।

নিয়মিত হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।

দেরি করে ঘুমানোর অভ্যাস বাদ দিন।

মানসিক চাপ (স্ট্রেস) কমানোর চেষ্টা করুন।

সুষম আহারের নিয়ম

বেশি পরিমাণে ফল, শাকসবজি, বীজ ও বাদাম, পর্যাপ্ত জল, কম তেল এবং কম প্রক্রিয়াজাত খাবার— এই সহজ নিয়ম মেনে চললে হৃদপিণ্ড ও মস্তিষ্ক দুটোই সুরক্ষিত থাকবে।

পুষ্টিবিদদের পরামর্শ— "একবারে পেট ভরে না খেয়ে, অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার গ্রহণ করুন। এটি পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমায়।"

ভবিষ্যতের সতর্কতা:

আজকের খাবারের ভুল অভ্যাস, আগামী দিনের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস শুধু আপনাকে দীর্ঘ জীবনই দেয় না— এটি আপনার সামগ্রিক শক্তি, মেজাজ এবং জীবনের গুণগত মানকেও প্রভাবিত করে।

FAQ (Frequently Asked Questions)

প্রশ্ন ১: স্ট্রোকের জন্য খাদ্যাভ্যাস জনিত প্রধান কারণ কী?

উত্তর: স্ট্রোকের প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ, যার মূল ট্রিগার হলো প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম, ট্রান্স ফ্যাট এবং চিনির কারণে সৃষ্ট ইনফ্লেমেটরি স্টেট।

প্রশ্ন ২: কোন ধরনের খাবার স্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বাড়ায়?

উত্তর: অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, ফ্রোজেন প্রক্রিয়াজাত মাংস, কোল্ড ড্রিংক, বেকারি আইটেম এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত প্যাকেটজাত স্ন্যাকস স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়ায়।

প্রশ্ন ৩: স্ট্রোক এড়াতে দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কী কী পরিবর্তন আনা উচিত?

উত্তর: খাদ্যতালিকায় লবণ কমাতে হবে এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: কলা, নারকেল পানি, পালংশাক) বাড়াতে হবে। একই সাথে ওমেগা-৩ বাড়াতে আখরোট ও ফ্ল্যাক্সসিড যুক্ত করা এবং পরিশোধিত তেলের ব্যবহার কমানো উচিত।

প্রশ্ন ৪: স্ট্রোক প্রতিরোধে লাইফস্টাইলে কোন পরিবর্তনগুলো জরুরি?

উত্তর: পর্যাপ্ত পানি পান, অ্যালকোহল বর্জন, দৈনিক হালকা ব্যায়াম, রাত জাগা কমানো এবং মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা স্ট্রোক প্রতিরোধে অত্যন্ত জরুরি।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

সমতা লেদার তৃতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ

সমতা লেদার তৃতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সমতা লেদার কমপ্লেক্স লিমিটেড তাদের চলতি হিসাববছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি’২৫-মার্চ’২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেছে। এই প্রান্তিকে কোম্পানিটি... বিস্তারিত