ঢাকা, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

Alamin Islam

Senior Reporter

ঘরে বসে ফুসফুসের হাল: ৬০ সেকেন্ডে করুন জরুরি টেস্ট

লাইফ স্টাইল ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ নভেম্বর ২৩ ১৪:১০:১১
ঘরে বসে ফুসফুসের হাল: ৬০ সেকেন্ডে করুন জরুরি টেস্ট

শ্বাস নিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না মানেই যে ফুসফুসের স্বাস্থ্য খুব ভাল আছে, তা কিন্তু নয়। তলে তলে হাঁপানির সমস্যা বাসা বাঁধছে কি না, অথবা চুপিসাড়ে অ্যালার্জি মাথাচাড়া দিচ্ছে কি না, তা জানতে সাধারণত চিকিৎসকেরা নানা রকম মেডিক্যাল টেস্ট করানোর নিদান দেন। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে নিজে থেকেই তা জানার ইচ্ছা হলে তার উপায় আছে। ঘরে বসে বা অফিসে, অথবা যাতায়াত করার সময়ে এক জায়গায় বসে মাত্র ৬০ সেকেন্ড (এক মিনিট) সময় দিলেই বোঝা যাবে, ফুসফুসের হাল ঠিক কেমন। কোনও ভয়ের কারণ আছে কি না।

ফুসফুসের ক্যানসার ও দূষণ: কেন এই পরীক্ষা জরুরি

বর্তমানে ফুসফুসের ক্যানসার (Lung Cancer) নিয়ে চিন্তা বেড়েই চলেছে। আগে মনে করা হত, ধূমপায়ীরাই বুঝি এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এখন দেখা যাচ্ছে, যিনি সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য ছুঁয়েও দেখেননি, তাঁরও ফুসফুসের ক্যানসার হচ্ছে। এর জন্য অনেকটাই দায়ী দূষণ।

বাতাসে ধোঁয়া-ধুলো ও দূষিত গ্যাসের মাত্রা যত বাড়ছে, ততই ফুসফুসের নানা রকম সংক্রমণ জনিত রোগ বাসা বাঁধছে। কেউ ভুগছেন হাঁপানিতে, কারও সিওপিডি (COPD), তো কারও ফুসফুসে নীরবে বাসা বাঁধছে মারণরোগ। এর থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্ক থাকতেই হবে। ফুসফুসের হাল কেমন, তা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। আবার দূষণের প্রকোপ সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলাও যাবে না। তাই এক মিনিটের এই সহজ পরীক্ষার উপরে ভরসা রাখতে পারেন। যদি বোঝা যায়, যে ভয়ের কারণ সত্যিই আছে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরি করবেন না।

১ মিনিটের ফুসফুস পরীক্ষার পদ্ধতি (The 1-Minute Lung Test)

এই পরীক্ষাটি করার জন্য স্থির হয়ে বসে মাত্র ৬০ সেকেন্ড সময় দিতে হবে। পদ্ধতিটি নিচে দেওয়া হলো:

শ্বাস টানুন: স্থির হয়ে বসে নাক দিয়ে গভীর ভাবে শ্বাস টানতে হবে। এখানে একটা নিয়ম আছে। অনেক ক্ষণ ধরে ধীরে ধীরে শ্বাস টানতে হবে।

শ্বাস ধরে রাখুন: শ্বাস নেওয়ার পরে টানা ৬০ সেকেন্ড তা ধরে রাখতে হবে। এর মধ্যে শ্বাস ছাড়লে চলবে না।

শ্বাস ছাড়ুন: ৬০ সেকেন্ড পরে একই ভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে।

ফলাফল কী বলছে? যে পরিবর্তনগুলি লক্ষ করা জরুরি

পরীক্ষাটি করার সময়েই কিছু পরিবর্তন লক্ষ করবেন, যা ফুসফুসের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ইঙ্গিত দেবে:

শ্বাস টানার সময়: যখন শ্বাস খুব ধীরে ধীরে সময় নিয়ে টানবেন, তখন যদি দেখেন শ্বাস টানার সময়ে নাক বন্ধ হয়ে আসছে, হাঁচি আসছে বা বুকে চাপ লাগছে, তা হলে বুঝতে হবে ফুসফুস খারাপের দিকে যাচ্ছে।

৬০ সেকেন্ড ধরে রাখার সময়: টানা ১ মিনিট ধরে শ্বাস যদি ধরে রাখতে পারেন, তা হলে বুঝতে হবে ফুসফুসের তেমন কোনও সমস্যা নেই।

কিন্তু যদি দেখা যায়, শ্বাস ধরে রাখার সময়ে শ্বাসকষ্ট বাড়ছে, বুকে চাপ চাপ ব্যথা লাগছে, ক্রমাগত কাশি আসছে অথবা নাক-গলা দিয়ে শ্লেষ্মা উঠে আসছে, তা হলে বুঝতে হবে, হাঁপানির সমস্যা মাথাচাড়া দিচ্ছে। ফুসফুসে ব্লকেজ়ও রয়েছে।

শ্বাস ছাড়ার সময়: শ্বাস ছাড়ার সময়েও যদি দেখা যায় সমস্যা হচ্ছে বা নাক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তা হলেও বিষয়টি চিন্তার।

সে ক্ষেত্রে দেরি না করে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ - Schema Friendly)

১. এই ১ মিনিটের ফুসফুসের পরীক্ষাটি আসলে কী এবং এর মাধ্যমে কী জানা যায়?

উত্তর: এটি একটি সহজ শ্বাস-প্রশ্বাসের পরীক্ষা যা মাত্র ১ মিনিট (৬০ সেকেন্ড) সময় নেয়। এর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে আপনার ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছে কি না বা তলে তলে হাঁপানি, ব্লকেজ বা অন্য কোনো সংক্রমণজনিত রোগ বাসা বাঁধছে কি না, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

২. এই পরীক্ষাটি করার মূল পদ্ধতি কী?

উত্তর: স্থির হয়ে বসে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিতে হবে, এরপর ৬০ সেকেন্ড পর্যন্ত শ্বাস ধরে রাখতে হবে। ৬০ সেকেন্ড পর একইভাবে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে।

৩. শ্বাস ধরে রাখার ৬০ সেকেন্ড সময়কাল কীসের ইঙ্গিত দেয়?

উত্তর: যদি টানা ৬০ সেকেন্ড কোনো কষ্ট বা সমস্যা ছাড়াই শ্বাস ধরে রাখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে ফুসফুসের তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে শ্বাস ধরে রাখার সময় যদি শ্বাসকষ্ট বাড়ে, বুকে চাপ লাগে, কাশি আসে বা শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে, তবে তা হাঁপানি বা ফুসফুসে ব্লকেজের ইঙ্গিত দেয়।

৪. ধূমপান করেন না এমন ব্যক্তিদেরও কি এই পরীক্ষা করা জরুরি?

উত্তর: হ্যাঁ। বর্তমানে দূষণের মাত্রা অত্যধিক হওয়ায় যারা ধূমপান করেন না, তারাও ফুসফুসের ক্যানসার বা সিওপিডি-র মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই প্রাথমিক সতর্কতা হিসেবে প্রত্যেকের এই পরীক্ষা করা জরুরি।

৫. পরীক্ষায় কোনো সমস্যা ধরা পড়লে কি দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?

উত্তর: হ্যাঁ। পরীক্ষা করার সময় শ্বাস নিতে, ধরে রাখতে বা ছাড়ার সময় যদি কোনো কষ্ট বা অস্বাভাবিকতা (যেমন: বুকে চাপ, তীব্র কাশি, নাক বন্ধ হয়ে আসা) লক্ষ্য করা যায়, তবে দেরি না করে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আল-মামুন/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ