যত টাকায় বিসিবির সঙ্গে চুক্তি করলেন হেরাথ

এ দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ যে একদমই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশ নেয়নি, তা নয়। নিয়েছে। এর মধ্যে নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কা সফর করেছে টাইগাররা। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার সাথেও খেলেছে; কিন্তু শুধু টাইগারদের নিউজিল্যান্ড সফরেই স্পিনারদের সাথে ছিলেন কিউই স্পিন স্পেশালিস্ট ভেট্টোরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেটা তার নিজ দেশ বলেই হয়ত সম্ভব ছিল।

এখন যেহেতু এ কিউই স্পিন পরামর্শক বা কোচকে পাওয়া যাচ্ছে না, তিনি করোনার মধ্যে বাংলাদেশে এসে কোচিং করাবেন না বা করাতে পারবেন না- তাই বিসিবি অনোন্যপায় হয়ে স্পিন কোচ খুঁজতে শুরু করেছিল।

অবশেষে সাকিব, তাইজুল, মিরাজদের নতুন স্পিন কোচের সন্ধানও মিলেছে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঁ-হাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের সাথে কথা-বার্তা চূড়ান্ত। চুক্তিও সম্পন্ন। তিনিই বাংলাদেশের নতুন স্পিন কোচ।

সামনে জিম্বাবুয়ে সফরেই জাতীয় দলের সাথে কাজ করবেন হেরাথ। এটা হঠাৎ নিয়োগ নয়। হেরাথ বাংলাদেশের স্পিন কোচ হতে পারেন, তাকে স্পিনারদের দায়িত্ব দিতে আগ্রহী বিসিবি। এমন খবর চাওর হয়েছিল আগেই।

হেরাথকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তিনি প্রস্তাব পাওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকারও করেছেন। ‘দৈনিক পৌনে ২ লাখ টাকা পারিশ্রমিক চান হেরাথ’- এই শিরোনামে গত ৬ জুন এক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, শ্রীলঙ্কা তথা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ও সফল (৯৩ টেস্টে ৪৩৩ উইকেট, সেরা ৯/১২৭, ম্যাচে ১০ উইকেটে ৯ বার, ৪ উইকেট ২০ বার। ৫ উইকেট শিকার ৩৪ বার) বাঁ-হাতি স্পিনারকে বিসিবি থেকে টিম বাংলাদেশের স্পিন কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং রঙ্গনা হেরাথ প্রস্তাব পেয়ে মোটা অংকের অর্থ পারিশ্রমিক দাবি করেছিলেন।

তিনি বছরে ১০০ থেকে ১২৫ দিন কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন এবং তার চাহিদা ছিল প্রতিদিন ২০০০ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরে ১০০ থেকে ১২৫ দিন কাজ করবেন, প্রতিদিন বাংলাদেশের মুদ্রায় তার চাহিদা ছিল প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা।

প্রসঙ্গতঃ বাংলাদেশের স্পিন কোচ হিসেবে নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টোরি বছরে ১০০ দিন কাজ করতেন। যার প্রতিদিনের পারিশ্রমিক ছিল আড়াই হাজার ডলার; কিন্তু ভেতরের খবর, বিসিবি হেরাথকে এতটাকা দিয়ে স্পিন কোচ হিসেবে চুক্তি করতে রাজি হয়নি।

দরদাম হয়েছে বেশ। কিন্তু বিসিবি কোনোভাবেই এত বিপুল পরিমাণ দৈনিক পারিশ্রমিক দিয়ে তাকে নিতে আগ্রহী ছিল না। তাই মাঝে একটু বিলম্ব ঘটেছে। এ সময়ের মাঝে দর কষাকষি চলেছে।

সরাসরি না বললেও বিসিবি পরিচালক ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান আকার ইঙ্গিতে জাগো নিউজকে জানিয়েছিলেন, যে দৈনিক ২ হাজার ডলার দিয়ে হেরাথকে স্পিন কোচ করা হবে না। তার দর কমাতে হবে।

এবং ভেতরের খবর শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন হেরাথ। তাহলে দৈনিক কত হাজার ডলারে শেষ পর্যন্ত রফা হলো বিসিবি ও হেরাথের মধ্যে?

ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান আকরামখানসহ বিসিবির কোন শীর্ষ কর্তাই কত টাকায় রফা হলো- সে অর্থর প্রকৃত পরিমাণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাননি। জাতীয় দল পরিচর্য্যা, তত্ত্বাবধান ও কোচিং স্টাফদের দেখভালের দায়িত্ব যে স্ট্যান্ডিং কমিটির ওপর, সেই ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান আকরাম খানও এ সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি।

বোর্ডের উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ও দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে শেষ পর্যন্ত অবস্থান থেকে সরে এসেছেন রঙ্গনা হেরাথ এবং দৈনিক ২ হাজার ডলার তো নয়ই, দেড় হাজার ডলারের চেয়েও কমে চুক্তি করেছেন।

সূত্র জানায়, দেড় হাজার ডলারের কম দৈনিক ১২০০-১৩০০ ডলার করে চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় যা দাঁড়াবে দৈনিক ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মত অর্থ। মানে প্রতি কর্মদিবসে এক লাখ টাকার কিছু বেশি পাবেন এ লঙ্কান স্পিন কোচ।

কত টাকা বেতনে টাইগার স্পিনারদের কোচ হতে রাজি হয়েছেন হেরাথ? তার উত্তরটা পরিষ্কার করে না জানালেও আজ রোববার দুপুরে জাগো নিউজের সাথে আলাপে আকরাম খান জানিয়েছেন যে, ‘এখনই দীর্ঘ মেয়াদী বা দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হননি হেরাথ। প্রাথমিকভাবে তার সাথে আগামী বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি পর্যন্ত চুক্তি হয়েছে।’

অর্থাৎ ভারত ও আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব টি-টোয়েন্টি আসর পর্যন্তই আপাতত চুক্তি হয়েছে। ওই আসর পর্যন্ত বাংলাদেশের স্পিনারদের নিয়ে কাজ করবেন হেরাথ। তারপর কী হবে? তা এখনো ঠিক করা হয়নি।