ঢাকা, বুধবার, ৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

আজকের বাজারে ‘সাইলেন্ট সেল’—শেয়ার আছে, কিনছে না কেউ

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ০৭ ১৬:৪৪:৪৩
আজকের বাজারে ‘সাইলেন্ট সেল’—শেয়ার আছে, কিনছে না কেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের শেয়ারবাজারে আবারও দেখা দিয়েছে গভীর অস্থিরতা। ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান কমিশনের কার্যকারিতা নিয়ে আস্থাহীনতার প্রভাব মিলিয়ে আজ বুধবার (৭ মে) পুঁজিবাজারে দেখা যায় এক ভয়াবহ চিত্র। দিনের লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এক লাফে ১৪৯.২১ পয়েন্ট বা ২.৮৮ শতাংশ পড়ে যায়। সূচকটি নেমে এসেছে সাড়ে চার বছরের আগের অবস্থানে।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, দিনের শেষে দেখা যায় ২৬টি কোম্পানির শেয়ারে কোনো ক্রেতা নেই। অর্থাৎ এসব কোম্পানির শেয়ার কেউ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেনি, ফলে বিক্রেতারা চাইলেও শেয়ার বিক্রি করতে পারেননি।

বাজারজুড়ে আতঙ্ক, লেনদেনে চরম ধস

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থার ঘাটতি এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধসংক্রান্ত উদ্বেগ এবং নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তহীনতা বাজারকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে। এর প্রভাবে বাজারে বিক্রির চাপ থাকলেও নেই তেমন কোন ক্রয়চাপ, যা একটি স্বাভাবিক বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লেনদেনের প্রথম ঘণ্টা থেকেই সূচকের পতন শুরু হয় এবং তা দিন শেষে ভয়াবহ রূপ নেয়। বাজারজুড়ে বিক্রির হিড়িক দেখা গেলেও বেশ কিছু শেয়ারে একটিও ক্রয়াদেশ জমা হয়নি। এ তালিকায় রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বস্ত্র, ইন্স্যুরেন্স ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল খাতের কোম্পানি।

ক্রেতাশূন্য কোম্পানির তালিকায় ‘এ’ ক্যাটাগরিও

যেখানে বাজারের সংকটে সাধারণত দুর্বল ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোই বেশি বিপদে পড়ে, সেখানে এবার ‘এ’ ক্যাটাগরির কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারেও দেখা গেছে ক্রেতার অভাব। এর মধ্যে রয়েছে বীচ হ্যাচারি এবং ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

যেসব কোম্পানি আজ ছিল সম্পূর্ণ ক্রেতাহীন:

১. এবিবি ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড

২. বে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট

৩. বীচ হ্যাচারি

৪. সিএনএ টেক্সটাইল

৫. ডিবিএইচ ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড

৬. ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস

৭. এইচআর টেক্সটাইল

৮. আসিবি সোনালী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড

৯. ইন্টারন্যাশনাল লিজিং

১০. খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং

১১. এলআর গ্লোবাল ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড

১২. এমবিএল ফাস্ট মিউচুয়াল ফান্ড

১৩. মাইডাস ফাইন্যান্স

১৪. মিথুন নিটিং

১৫. পিএসইসিপি মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান

১৬. প্রাইম ফাইন্যান্স

১৭. প্রাইম টেক্সটাইল

১৮. এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল

১৯. এসইএমএল এফবি গ্রোথ ফান্ড

২০. এসইএমএল আইবিবিএলএস ফান্ড

২১. শার্প ইন্ডাস্ট্রিজ

২২. এসএস স্টিল

২৩. ইউনিয়ন ক্যাপিটাল

২৪. আইসিবি অ্যামানাহ মিউচুয়াল ফান্ড

২৫. গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স

২৬. এশিয়া ইন্স্যুরেন্স

বাজার বিশ্লেষকদের মতামত

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে আতঙ্ক দেখা দিলে প্রথমেই চাপ পড়ে দুর্বল কোম্পানিগুলোর উপর। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারে বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও ক্রয়ের আগ্রহ থাকে না বললেই চলে। বিশেষ করে মিউচুয়াল ফান্ড ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের আস্থার বাইরে রয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, কখনো কখনো এমন সংকটকালে কিছু ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারে হঠাৎ করে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি দেখা যায়, যা বাজারে কারসাজির আশঙ্কাও তৈরি করে।

আস্থাহীনতার কারণ

বর্তমানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। বলা হচ্ছে, বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকর তদারকির অভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক যুদ্ধসংক্রান্ত শঙ্কাও পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে আস্থা ফেরাতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে শক্তিশালী উদ্যোগ নিতে হবে। বাজার স্থিতিশীল করতে হলে পলিসি লেভেলে পরিবর্তন, মনিটরিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ