নারীর নামে কোরবানি হয় না কেন? ভুলে ভরা সমাজব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোরবানি শুধু পুরুষদের বিষয়—এই ধারণা অনেকটাই প্রচলিত। বিশেষ করে বাংলাদেশে গৃহকর্তা বা সংসারের পুরুষ সদস্যের নামেই সাধারণত কোরবানি করা হয়। অথচ বাস্তবতা হলো, পরিবারের অনেক নারীর ওপরও কোরবানি ওয়াজিব হয়ে পড়ে, যা অনেকেই জানেন না বা গুরুত্ব দেন না।
এই অজ্ঞতা শুধু একটি ভুল ধারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর ফলে কেউ কেউ নিজেদের ওপর ওয়াজিব ইবাদত আদায় না করে বসে থাকেন। অপরদিকে, এমন অনেকের পক্ষ থেকে কোরবানি করা হয়, যাদের ওপর আদতে কোরবানি ওয়াজিব নয়।
ভুল ধারণার বাস্তব চিত্র
বাংলাদেশের বহু পরিবারে দেখা যায়, বাড়ির পুরুষ সদস্যের নামে কোরবানি হচ্ছে—হয়তো তিনি গৃহকর্তা বা উপার্জনকারী। অথচ ঘরের অন্য সদস্য, বিশেষ করে নারী সদস্যদের—যাঁদের কাছে হয়তো প্রয়োজনাতিরিক্ত স্বর্ণালংকার বা নগদ অর্থ রয়েছে—তাঁদের নামে কোনো কোরবানি দেওয়া হচ্ছে না।
একইভাবে অনেক পরিবারে মা-বাবার নামে কোরবানি দেওয়া হয়, অথচ অবিবাহিত পুত্র-কন্যা—যাঁরা উচ্চশিক্ষা বা বিয়ের উদ্দেশ্যে গচ্ছিত স্বর্ণ, নগদ অর্থ বা অন্য সম্পদের মালিক—তাঁদের নামে কোরবানি করা হয় না। অথচ শরিয়তের বিধান অনুযায়ী এদের অনেকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়।
কোরবানির শরিয়তি বিধান
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে, কোরবানির বিধান খুবই স্পষ্ট:
যার ওপর জাকাত ওয়াজিব, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
অর্থাৎ, প্রতি সেই প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব, যিনি ১০ জিলহজ ফজরের সময় থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকবেন।
নিসাব কী?
সাধারণত দুইভাবে নিসাব নির্ধারণ করা হয়:
সোনার হিসেবে: সাড়ে সাত ভরি সোনা
রূপার হিসেবে: সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা
যদি কারো কাছে এই নিসাব পরিমাণ সম্পদ না-ও থাকে, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিভিন্ন সম্পদ (যেমন: গহনা, নগদ অর্থ, বিনিয়োগ, ব্যবসার মালামাল ইত্যাদি) একত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমান বা বেশি হয়, তাহলেও তিনি নিসাবের মালিক বলে গণ্য হবেন এবং তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।
বর্তমানে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার বাজারমূল্য প্রায় ৯০ হাজার টাকা। সুতরাং, যার মালিকানায় এক ভরি সোনা ও কিছু নগদ অর্থ থাকলেও এই পরিমাণ হয়ে যেতে পারে।
নারীর কোরবানি সম্পর্কে কী বলা আছে?
ইসলাম নারী ও পুরুষের জন্য সমানভাবে ইবাদতের বিধান দিয়েছে। তাই নারীদের ওপরও কোরবানি ওয়াজিব হয়, যদি তারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন। অনেক নারী আছেন যাঁদের কাছে সোনা-গহনা রয়েছে, যা প্রয়োজনাতিরিক্ত এবং যার মূল্য নিসাব অতিক্রম করে। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয় না।
এটি শুধু অজ্ঞতার ফল নয়, বরং একটি ভুল ধারার প্রভাব—যেখানে কোরবানিকে কেবল পুরুষদের দায়িত্ব ভাবা হয়।
একটি পশুতে একাধিক অংশ
অনেক পরিবারে দেখা যায়, একজন সদস্যের জন্য একটি ছাগল বা একটি বড় পশু কেনা হচ্ছে। অথচ একটি গরু বা উটের মধ্যে সাতটি অংশ রাখা যায়। অর্থাৎ, একটি গরু কিনে পরিবারের সাতজন সদস্য—যাঁদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব—তাঁদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে কোরবানি করা সম্ভব।
এই ব্যবস্থায় যেমন ব্যয় সাশ্রয় হয়, তেমনি শরিয়তের বিধানও সুন্দরভাবে পালিত হয়। কিন্তু দেখা যায়, কেউ ৪০–৫০ হাজার টাকা খরচ করে ১–২ জনের জন্য কোরবানি দেন, অথচ এই অর্থে একটি গরু কিনে ৭ জনের ওয়াজিব কোরবানি আদায় করা যেত।
ওয়াজিব কোরবানি না করলে করণীয়
যদি কেউ কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি আদায় না করেন, তাহলে দুই ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে:
১. পশু ক্রয় না করে থাকলে:
একটি ছাগলের সমমূল্যের টাকা সদকা করতে হবে।
২. পশু ক্রয় করা হলেও কোরবানি না করা হলে:
সে পশুকে জীবিত অবস্থায় সদকা করে দিতে হবে।
সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে (৪/২০৪); ফাতাওয়া কাজিখান (৩/৩৪৫)
করণীয় কী?
১. পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সম্পদের হিসাব করুন
২. কারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক—তা যাচাই করুন
৩. যারা নিসাবের মালিক, তাদের সবার জন্য কোরবানি করার ব্যবস্থা করুন
৪. একটি গরুতে ৭ জনের অংশ নেওয়ার মাধ্যমে ব্যয় সাশ্রয়ী কোরবানি দিন
৫. নারীদের সম্পদের বিবরণ হিসাব করুন এবং তাদের পক্ষ থেকেও কোরবানি দিন
কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি শুধু ত্যাগ নয়, দায়িত্বও। এই দায়িত্ব পালন করতে হলে আমাদের জানতে হবে—কার ওপর এটি ফরজ বা ওয়াজিব হয়েছে। অজ্ঞতা কিংবা প্রচলিত ভুল ধারণার কারণে যদি কেউ ওয়াজিব কোরবানি থেকে বঞ্চিত হন, তবে সেটি শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়—দায়িত্বহীনতারও পরিচয়।
তাই আসুন, এবারের কোরবানিতে আমরা শরিয়তের আলোকে সচেতন হই। পরিবারে কে কে নিসাবের মালিক, তা জানি এবং যথাযথভাবে তাঁদের পক্ষ থেকে কোরবানি দিই।
FAQ:
কোরবানি কি সকল মুসলিমদের উপর ওয়াজিব?
কোরবানি ঐ সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমদের উপর ওয়াজিব যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।
নিসাব পরিমাণ কতো?
সোনার ক্ষেত্রে ৭.৫ ভরি এবং রুপার ক্ষেত্রে ৫২.৫ ভরি, অথবা তাদের সমপরিমাণ অর্থ।
কারা কোরবানি দিতে পারেন?
যাদের নিজস্ব সম্পদ নিসাব পরিমাণ রয়েছে এবং যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে, তারা কোরবানি দিতে পারেন।
আল-আমিন ইসলাম/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- ৯ দিনে সোনার দাম কমলো ২৯০ ডলার
- আজ থেকে নতুন দামে বিক্রি হবে ১৮, ২১ ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপা
- স্বর্ণের দাম বাড়বে নাকি কমবে? বিশ্ববাজারের পরবর্তী পদক্ষেপ
- নতুন আইনের ইঙ্গিত, শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে ১০ বড় সিদ্ধান্ত
- আজকে দেশের বাজারে ১৮, ২১ ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার মূল্য
- গুজবের ফাঁদে শেয়ারবাজার: জুয়াড়ি চক্রের নতুন কৌশল
- শ্রীলঙ্কার কাছে ২৭ রানে হার, সিরিজ হেরে ফিরল বাংলাদেশ
- বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
- গুজব না সত্যি: মারা গেলেন হাসনাত আবদুল্লাহ
- বাড়লো আজকের সৌদি রিয়াল রেট (৩ মে ২০২৫)
- এএসপি আত্মহত্যার আসল কারণ জানালেন তার ভাই
- শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রানের পাহাড় গড়লো বাংলাদেশ, দিলো বড় টার্গেট
- বিমা খাতের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য বড় সুখবর
- ডিভিডেন্ড কমালো ৪ ব্যাংক, বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্ক সংকেত
- বাড়লো আজকের সৌদি রিয়াল রেট (৪ মে ২০২৫)