ঢাকা, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

জুমার নামাজ কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের নিয়ম

২০২৫ জুলাই ১১ ০৭:৫১:২০
জুমার নামাজ কত রাকাত? ফজিলত ও আদায়ের নিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক: সপ্তাহের সাতটি দিনের মধ্যে শুক্রবার দিনটি মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময়। এই দিনটির কেন্দ্রবিন্দু হলো জুমার নামাজ। এটি শুধু একটি নামাজ নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ উপহার, যার মাধ্যমে গুনাহ মাফ, দোয়া কবুল এবং আত্মিক প্রশান্তির দ্বার খুলে যায়। কিন্তু অনেকেই জানতে চান—জুমার নামাজ কত রাকাত? কীভাবে আদায় করতে হয়? এবং এর ফজিলত কী? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

জুমার নামাজের রাকাত সংখ্যা

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী, জুমার ফরজ নামাজ ২ রাকাত, যা জামাতের সঙ্গে আদায় করা বাধ্যতামূলক। তবে এর আগে ও পরে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুন্নাত নামাজ, যেগুলোর আদায় করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।

নামাজের রাকাত বিভাজন এভাবে:

মসজিদে প্রবেশের পর: ২ রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ (সুন্নাত)

ফরজের আগে: ৪ রাকাত কাবলাল জুমা (সুন্নাতে মোয়াক্কাদা)

ফরজ: ২ রাকাত (ইমামের খুতবার পর জামাতে)

ফরজের পরে: ৪ রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নাতে মোয়াক্কাদা)

মোট নামাজের সংখ্যা দাঁড়ায় সাধারণত ১০ রাকাত, তবে কেউ কেউ আগে ও পরে নফল নামাজও পড়ে থাকেন।

জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম

১. মসজিদে আগে আগে যাওয়া সুন্নাত। যত তাড়াতাড়ি যাবেন, তত বেশি ফজিলত পাবেন।

২. মসজিদে প্রবেশ করে ২ রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামাজ আদায় করা উত্তম।

এরপর ৪ রাকাত কাবলাল জুমা সুন্নাত নামাজ আদায় করবেন।

৪. তারপর ইমাম খুতবা প্রদান করবেন। খুতবা চলাকালীন সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তা শোনা আবশ্যক। কথা বলা, মোবাইল দেখা বা অন্য কিছু করাও নিষিদ্ধ।

৫. খুতবার পর ইমামের পেছনে ২ রাকাত ফরজ নামাজ জামাতে আদায় করতে হবে।

৬. ফরজের পর ৪ রাকাত বাদাল জুমা সুন্নাত নামাজ আদায় করবেন।

জুমার নামাজের ফজিলত

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, সুন্দরভাবে পবিত্র হয়ে, আগেভাগে মসজিদে গিয়ে ইমামের নিকট বসে খুতবা শুনে এবং চুপ থাকে—তার এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত ও অতিরিক্ত তিনদিনের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”(সহিহ মুসলিম)

কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন:

“হে মুমিনগণ! যখন জুমার দিনে নামাজের আহ্বান করা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে আসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানো।”— (সূরা জুমুআ, আয়াত ৯)

আরও এসেছে, জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন বান্দা যা চাইবে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।

জোহরের সঙ্গে পার্থক্য

অনেকে জানেন না, জুমার নামাজ জোহরের সময় পড়া হয়, তবে এটি জোহরের বিকল্প নয়—বরং তার পরিবর্তে ফরজ করা হয়েছে।

জোহরের ফরজ ৪ রাকাত, আর জুমার ফরজ ২ রাকাত।

জুমার জন্য খুতবা আবশ্যক, জোহরের জন্য নয়।

জুমা নামাজ জামাতে ফরজ, জোহর একাকী পড়া যায়।

কখন জোহর পড়তে হবে?

যদি কেউ অসুস্থ হয়, ভ্রমণে থাকে, বা কোনো বৈধ কারণে জুমার নামাজ মিস করে, তাহলে তার জন্য জোহরের ৪ রাকাত ফরজ নামাজ পড়া ওয়াজিব হয়ে যায়।

জুমার দিন শুধু ছুটি বা বিশ্রামের দিন নয়, বরং এটা আত্মার পরিচ্ছন্নতার দিন। জুমার নামাজের ২ রাকাত ফরজের পেছনে লুকিয়ে আছে আল্লাহর অশেষ রহমত, গুনাহ মাফের সুযোগ এবং জান্নাতের পথ। তাই আমাদের উচিত, সময়মতো মসজিদে গিয়ে খুতবা শোনা ও ইমামের সঙ্গে ফরজ ও সুন্নাত নামাজ আদায় করা।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জুমার নামাজ যথাযথভাবে আদায়ের তাওফিক দিন। আমিন।

FAQ (প্রশ্নোত্তর ফরম্যাটে):

প্রশ্ন: জুমার নামাজ কত রাকাত?

উত্তর: জুমার ফরজ নামাজ ২ রাকাত, এর আগে ও পরে সুন্নাতসহ মোট ১০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: জুমার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?

উত্তর: আগে সুন্নাত আদায় করে ইমামের খুতবা শুনতে হয়, তারপর জামাতে ২ রাকাত ফরজ এবং পরে ৪ রাকাত সুন্নাত আদায় করতে হয়।

প্রশ্ন: জুমার নামাজের ফজিলত কী?

উত্তর: জুমার নামাজ গুনাহ মাফের দরজা খুলে দেয়, বিশেষ দোয়া কবুল হয় এবং খুতবার মাধ্যমে ইমান শক্ত হয়।

প্রশ্ন: জুমার নামাজ না পড়লে কী করতে হবে?

উত্তর: বৈধ কারণে কেউ জুমা আদায় করতে না পারলে, তার পরিবর্তে ৪ রাকাত জোহরের ফরজ নামাজ আদায় করতে হবে।

জাকারিয়া ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ