ঢাকা, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

পশুর এই ৭ ত্রুটি থাকলে কোরবানি বাতিল হয়ে যেতে পারে!

২০২৫ মে ০৮ ১২:৫৯:২০
পশুর এই ৭ ত্রুটি থাকলে কোরবানি বাতিল হয়ে যেতে পারে!

নিজস্ব প্রতিবেদন: পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহ-এর জন্য ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির এক মহাসময়। এই ঈদে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা হয়। কিন্তু অনেক সময় পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা এমন কিছু ভুল করে ফেলি, যার কারণে এই ইবাদতই বাতিল হয়ে যেতে পারে। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে কোরবানির পশু হতে হবে সুস্থ, দৃষ্টিনন্দন ও দোষত্রুটিমুক্ত।

যে পশু শরিয়তের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়, সেটির কোরবানি শুদ্ধ হয় না। তাই কোরবানির পশু কেনার আগে শরিয়তের নির্দেশনা জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জরুরি। নিচে এমন সাতটি ত্রুটি তুলে ধরা হলো, যা থাকলে পশু কোরবানির অযোগ্য বলে গণ্য হয়।

১. সম্পূর্ণ অন্ধ পশু

যে পশু একদমই চোখে দেখে না, অর্থাৎ উভয় চোখ অন্ধ, তার কোরবানি বৈধ নয়। এমনকি যদি কোনো পশু এক চোখে অন্ধ হয় এবং এর কারণে সে দুর্বল হয়ে পড়ে, তবুও তা কোরবানির অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

২. গুরুতর অসুস্থ বা দুর্বল পশু

যে পশু স্পষ্টভাবে অসুস্থ বা রুগ্ন, যেমন হাঁপানি, জ্বর, ক্ষত বা অভ্যন্তরীণ রোগে ভোগে—তবে তা কোরবানির যোগ্য নয়। হাদিসে রোগাক্রান্ত পশুকে কোরবানি না করার নির্দেশ রয়েছে (তিরমিজি, হাদিস : ১৪৯৭)।

৩. পঙ্গু বা চলাফেরায় অক্ষম

যে পশু তিন পায়ে হেঁটে চলে বা স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না, এমন পশুর কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি পরিষ্কারভাবে একটি অঙ্গহানির ত্রুটি।

৪. ভাঙা অঙ্গবিশিষ্ট পশু

যে পশুর পা, শিং বা অন্য কোনো অঙ্গ গোড়া থেকে ভেঙে গেছে এবং এর কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, যেমন মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তা কোরবানির অযোগ্য। তবে যদি শিং অর্ধেক ভাঙা থাকে অথবা জন্মগতভাবে না থাকে, তাহলে সমস্যা নেই।

৫. দাঁতহীন বা খাদ্য চিবাতে অক্ষম পশু

যদি কোনো পশুর দাঁত এতটা পড়ে যায় যে সে ঘাস বা খাদ্য চিবাতে অক্ষম হয়ে পড়ে, তবে তার কোরবানি বৈধ নয়। কারণ সে জীবিত অবস্থায় খাওয়ার যোগ্য নয়, এবং এটি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড।

৬. কান বা লেজ অর্ধেক বা তার বেশি কাটা

যে পশুর কান বা লেজ অর্ধেকের কম থাকলে কোরবানি বৈধ নয়। কিন্তু যদি অর্ধেক বা তার বেশি অক্ষত থাকে, তবে তা কোরবানির জন্য যথেষ্ট। আর যদি কান ছোট হয় এবং তা জন্মগত হয়, তবে সেটি কোরবানির ক্ষেত্রে সমস্যা নয়।

৭. জখম বা আহত পশু

যে পশু জখমপ্রাপ্ত এবং যার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতবিক্ষত, যেমন ত্বকে গভীর ক্ষত বা মাংস ছেঁড়া—তাদের কোরবানিও বৈধ নয়। এই ধরনের পশু সুস্থ বিবেচিত হয় না।

কোরবানির পশু নির্বাচনের সময় করণীয়

হজরত আলী (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমরা পশুর চোখ ও কান ভালোভাবে পরীক্ষা করি এবং কাটা, ছেঁড়া বা কানে গোল ছিদ্র করা পশু দ্বারা কোরবানি না করি।” (আবু দাউদ, হাদিস : ২৮০৪)

এই হাদিস থেকে স্পষ্ট হয়, কোরবানির আগে পশুর শরীর, চোখ, কান, দাঁত ও শারীরিক অবস্থা যাচাই করা অপরিহার্য। অনেকেই শুধু বড় আকার ও দাম দেখে পশু কেনেন, কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে তা অযোগ্য হয়, ফলে কোরবানি বাতিল হয়ে যায়।

শারীরিক সৌন্দর্য নয়, বরং আন্তরিকতা ও শরিয়তের মানদণ্ড জরুরি

আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন,

“আমি সব জাতির জন্য কোরবানির বিধান রেখেছি, যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে জীবন্ত পশু জবাই করার সময়...”(সূরা হজ: ৩৪)

এ আয়াত প্রমাণ করে, কোরবানি শুধু রীতি নয়—এটি এক মহান ইবাদত। এই ইবাদতে শরিয়তের নিয়ম মেনে চলা যেমন জরুরি, তেমনি নিয়ত ও আন্তরিকতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

ইবাদতের বিশুদ্ধতা নির্ভর করে জ্ঞানের গভীরতা ও নিয়তের উপর। কোরবানির পশু নির্বাচনের সময় সামান্য ভুলের জন্য যেন ইবাদত বাতিল না হয়ে যায়, সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। কোরবানির পশু কেনার সময় চোখ-কান খোলা রাখুন, শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করুন এবং প্রয়োজনে আলেমের পরামর্শ নিন।

জনপ্রিয় ৪টি FAQ ও উত্তর:

প্রশ্ন ১: কোন কোন ত্রুটির কারণে কোরবানির পশু অযোগ্য হয়?

উত্তর: অন্ধ, পঙ্গু, দাঁতহীন, কান বা লেজ অর্ধেকের বেশি কাটা পশু কোরবানির যোগ্য নয়।

প্রশ্ন ২: শরিয়ত মতে গরু কেনার সময় কী কী খেয়াল রাখা জরুরি?

উত্তর: চোখ, কান, দাঁত, শিং, হাঁটার ক্ষমতা ও রোগমুক্ত কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে।

প্রশ্ন ৩: শরিয়তে কী বলা আছে কোরবানির পশুর দোষত্রুটি নিয়ে?

উত্তর: কোরআন ও হাদিসে বলা হয়েছে, যে পশুতে স্পষ্ট দৃষ্টি, শারীরিক বা দাঁতের ত্রুটি আছে, তার কোরবানি বৈধ নয়।

প্রশ্ন ৪:কোরবানির পশুর কান ছোট হলে কি কোরবানি হয় না?

উত্তর: জন্মগতভাবে কান ছোট হলে কোরবানি বৈধ; কিন্তু কাটা বা ছেঁড়া থাকলে অযোগ্য।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ