ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে ‘সেলিং স্পাইরাল’, আতঙ্কে বিক্রি বাড়ছে

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৫ ১৬:১০:৩০
শেয়ারবাজারে ‘সেলিং স্পাইরাল’, আতঙ্কে বিক্রি বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ডিএসই, বিনিয়োগকারীদের চোখে হতাশার ছায়া

বাংলাদেশের শেয়ারবাজার যেন এক বিষণ্ন উপাখ্যানের দিকে এগিয়ে চলেছে। ১৫ মে, বৃহস্পতিবার, সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে দেশের দুই শেয়ারবাজারেই ছড়িয়ে পড়ে এক মহাদুর্যোগের চিত্র। সূচকের পতন আর বিনিয়োগকারীদের মুখে হতাশার ভাষা যেন একই সুরে কথা বলেছে আজ।

দিনের শুরুটা ছিল আশাবাদের, সূচক কিছুটা বেড়েও ছিল। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, ততই যেন বাজার ঢলে পড়েছে এক ভয়াল বাস্তবতায়। লেনদেনের মাঝামাঝি থেকেই বড় বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিক সেল প্রেসার শেয়ারবাজারকে ঠেলে দিয়েছে চরম দুর্দশার দিকে।

ইতিহাসে নাম লেখাল আজকের সূচক

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আজ কমেছে ৫৪.৫৮ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে—যা ২০১৯ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন। সাড়ে পাঁচ বছর পর এতটা নিচে নামল সূচক, যেন এক ভয়ঙ্কর বার্তা দিচ্ছে বাজারের ভেতরকার আস্থার সংকটের।

বাজারের অন্য সূচকগুলোর অবস্থাও ভালো নয়—

ডিএসইএস কমেছে ১৪.৫৫ পয়েন্ট, এখন ১,০৩৮ পয়েন্টে।

ডিএসই-৩০ কমেছে ২০.৯১ পয়েন্ট, দাঁড়িয়েছে ১,৭৭০ পয়েন্টে।

এমন পতনের দিনেও লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৯৫টি কোম্পানি, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৪২টির শেয়ারদর বেড়েছে, দর কমেছে ৩১৭টির, আর ৩৬টির ছিল অপরিবর্তিত।

লেনদেনেও হতাশার ছাপ

আজ ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা বিগত ৯ কর্মদিবসের মধ্যে সবচেয়ে কম। একদিন আগের তুলনায় সামান্য বেড়েছে বটে—প্রায় ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা—তবু এটি বাজারের দুর্বলতার স্পষ্ট চিহ্ন।

উত্থান থেকে পতন: দুই চিত্রের দুই গল্প

এক সময়, ২০২১ সালের ১৬ আগস্ট, এই ডিএসইতেই লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার বেশি, সূচক উঠেছিল ৬ হাজার ৪৮ পয়েন্টে। আবার একই বছরের ১০ অক্টোবর, সূচক ছুঁয়েছিল ৭ হাজার ৩৬৭.৯৯ পয়েন্ট—সবচেয়ে বেশি। আজ তার চেয়ে প্রায় ২,৫০০ পয়েন্ট নিচে নেমে এসেছে সূচক।

চট্টগ্রামেও একই দুর্ভাবনা

শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) থেকেও এসেছে হতাশার বার্তা।

লেনদেন হয়েছে মাত্র ১০ কোটি ১১ লাখ টাকার, আগের দিনের তুলনায় কম।

সিএএসপিআই সূচক কমেছে ১৩৭.৪৬ পয়েন্ট, এখন ১৩,৪৭৭ পয়েন্টে।

২০৫টির মধ্যে ১৫১টির দর কমেছে, বেড়েছে মাত্র ৩৭টির।

বাজারের দর্পণে আস্থা নেই

বর্তমানে শেয়ারবাজারের সবচেয়ে বড় সংকট—আস্থার অভাব। বিনিয়োগকারীদের কণ্ঠে এখন কেবল প্রশ্ন, “এই বাজারে কি থাকা যায়?”

স্বচ্ছতা নেই, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তেমন অংশগ্রহণ নেই, নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এখনই কার্যকর ও সময়োপযোগী উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে এই দরপতন শুধু একটি দিনের ঘটনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না—এটি রূপ নিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটে।

আলোর খোঁজে বিনিয়োগকারীরা

এই ঘোর অন্ধকারে এখন সবাই অপেক্ষা করছে—সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কি কেবল দর্শকের ভূমিকা পালন করবে, না কি দ্রুত হস্তক্ষেপ করে বাজারে ফিরিয়ে আনবে ন্যূনতম স্থিতিশীলতা ও আস্থা?

বিনিয়োগকারীরা জানেন না সামনে কী অপেক্ষা করছে। তবে তারা জানেন, আজকের এই পতনের গল্পটি শুধু সংখ্যা নয়—এটি তাদের স্বপ্নের, সঞ্চয়ের, বিশ্বাসের গল্প। আর সেই গল্প এখন ভাঙতে বসেছে।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: শেয়ারবাজারে ‘সেলিং স্পাইরাল’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: এটি এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কে একের পর এক শেয়ার বিক্রি বাজারে ধারাবাহিক দরপতন ঘটায়।

প্রশ্ন ২: কেন ডিএসই সূচক এত নিচে নেমেছে?

উত্তর: বড় বিনিয়োগকারীদের টানা সেল প্রেসার, আস্থার সংকট এবং প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণের ঘাটতি এর প্রধান কারণ।

প্রশ্ন ৩: বাজারে আস্থা ফেরাতে কী পদক্ষেপ জরুরি?

উত্তর: নীতিনির্ধারকদের স্বচ্ছ পদক্ষেপ, প্রণোদনা প্যাকেজ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রশ্ন ৪: এখন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা কি নিরাপদ?

উত্তর: বাজারে অনিশ্চয়তা থাকলেও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য সুযোগ থেকে যেতে পারে, তবে সতর্ক থাকা জরুরি।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ