ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে ৪ প্রস্তাবনা

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২২ ১০:৫৬:৩৬
শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফেরাতে ৪ প্রস্তাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নাম তার শেয়ারবাজার, অথচ এখানে প্রতিদিনই কমছে শেয়ারের দাম, বাড়ছে আতঙ্ক আর আস্থার ভাঙন। লালচে সূচক যেন প্রতিদিন একটুকরো হতাশা বয়ে আনে বিনিয়োগকারীদের মনে। তবে এই দীর্ঘ অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে আজ বৃহস্পতিবার (২২ মে) আলোচনার টেবিলে বসছে আশার একটি নতুন অধ্যায়।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিতব্য এই বৈঠকে অংশ নেবেন দেশের শীর্ষ বিনিয়োগকারী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। লক্ষ্য একটাই—শেয়ারবাজারকে ফের স্থিতিশীল ও আস্থাশীল পথে ফিরিয়ে আনা।

ক্ষত জমেছে অনেক, দরকার এখন নিরাময়

বছরের পর বছর ধরে বিনিয়োগকারীরা শুধু ক্ষতির হিসাব লিখে চলেছেন। একের পর এক কোম্পানির দরপতন, বারবার দেওয়া আশ্বাসের ভাঙা বাঁশি, আর নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায় এড়ানোর কৌশল—সব মিলিয়ে আস্থা আজ তলানিতে।

বিনিয়োগকারীদের মতে, সমস্যার শিকড় রয়েছে নেতৃত্বের অদক্ষতা, দুর্বল মনিটরিং ও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অব্যবস্থাপনায়।

তাদের অভিযোগ, বাজার চালানোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির বোঝা বোঝেন না। তাই বাজারে যাই ঘটুক, তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ।

চার দিক থেকে চেপে ধরা সংকট

এখন বাজারের অবস্থা এমন এক মোড়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে শুধু টেকনিক্যাল বিশ্লেষণ দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজন মৌলিক সংস্কার। কারণ, বাজারে নেই নতুন অর্থপ্রবাহ, নেই মিউচুয়াল ফান্ড ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশিত অংশগ্রহণ।কারসাজির অভিযোগ বছরের পর বছর থেকেছে, কিন্তু দেখা যায়নি কঠোর শাস্তি। ফলাফল, বিনিয়োগকারীদের আস্থা শুধু ঝরে পড়ছে।

আলোচনার কেন্দ্রে যে চার দাবি

আজকের আলোচনায় বিনিয়োগকারীরা তুলে ধরবেন তাঁদের চারটি মৌলিক দাবি, যেগুলো পূরণ হলেই তাঁদের মতে, বাজারে ফিরতে পারে প্রাণচাঞ্চল্য—

দক্ষ নেতৃত্ব চাই, রাজনৈতিক নয়

শেয়ারবাজারের নেতৃত্বে চাই অভিজ্ঞ ও পেশাদার মানুষ, যাঁরা শুধু পদাধিকার নয়, সমস্যার গভীরতা বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

কারসাজির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান যুদ্ধ

বাজারে যারা ইচ্ছেমতো ওঠানামা ঘটায়, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে আস্থা ফিরবে না কখনোই।

স্বল্প-মেয়াদ নয়, দীর্ঘ রোডম্যাপ

একদিনের প্রণোদনা দিয়ে বাজার টিকিয়ে রাখা যাবে না। দরকার সুনির্দিষ্ট, ধাপে ধাপে বাস্তবায়নযোগ্য রোডম্যাপ।

নীতির মেরামত, কাঠামোর সংস্কার

করনীতি, ডিভিডেন্ডনীতি থেকে শুরু করে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স—সবখানে বিনিয়োগবান্ধব সংস্কার চাই, যা বিনিয়োগকারীদের সামনে ভবিষ্যতের আস্থা গড়ে তুলবে।

আলোচনায় আশার আলো?

বাজারসংশ্লিষ্টরা আজকের বৈঠককে দেখছেন ‘সম্ভাবনার সূচনা’ হিসেবে। তাঁদের মতে, সরকারের তরফে যদি বিনিয়োগকারীদের দাবি আন্তরিকভাবে শোনা হয় এবং তার ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তবে তা শুধু বাজার নয়, পুরো অর্থনীতির জন্যই আশার সঞ্চার ঘটাবে।

কারণ, শেয়ারবাজার শুধু কিছু শেয়ারের দর নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক শক্তির প্রতিচ্ছবি। আস্থাহীন বাজার মানে বিনিয়োগের পথে বন্ধ দরজা। সেই দরজা খুলে দেওয়ার দায়িত্ব এখন নীতিনির্ধারকদের হাতে।

বিনিয়োগকারীরা এখন আর শুধু প্রতিবাদে নেই, তারা সমাধান চায়। তারা আর শুধু ক্ষোভ জানাতে নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য পথ তৈরি করতেই আলোচনার টেবিলে এসেছে। এবার দায়িত্ব সরকারের—শোনা নয়, বুঝে কাজ করার।

যদি সঠিক সিদ্ধান্ত আসে, তবে হয়তো বাজার আবার বলবে—এই আস্থা হারায়নি, শুধু অপেক্ষায় ছিল।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ