ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ব্যাংক খাতে নেতৃত্ব সংকট: ৯ এমডি পদ শূন্য, বাজারে অনিশ্চয়তা

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৪ ০৯:৫৫:০৭
ব্যাংক খাতে নেতৃত্ব সংকট: ৯ এমডি পদ শূন্য, বাজারে অনিশ্চয়তা

নিয়ন্ত্রক সংস্থার শুদ্ধি অভিযানে নেতৃত্ব সংকট, সামনে আরও চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৯টিতে নেই ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এসব শূন্যপদ মূলত সৃষ্টি হয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে কিছু এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো এবং কিছু ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে পদ শূন্য থাকায়।

শূন্য থাকা ব্যাংকগুলো হলো: ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংক। এদের মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নিয়ন্ত্রণমূলক হস্তক্ষেপ এবং নেতৃত্বে শূন্যতা

ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক গত কয়েক বছরে শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণমূলক হস্তক্ষেপ বাড়িয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও সুশাসনের ঘাটতির অভিযোগে এমডিদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও এই পদক্ষেপ কাঠামোগত সংস্কারের একটি অংশ, তবে এর তাৎক্ষণিক ফল হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্থবিরতা।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব এবং পরিচালনায় ঘাটতি

একটি ব্যাংকের এমডি পদে শূন্যতা থাকা মানে পরিচালন কাঠামোর মূল স্তরে ঘাটতি তৈরি হওয়া। এতে ঋণ অনুমোদন, বিনিয়োগ মূল্যায়ন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রমে বিলম্ব হচ্ছে। এ ধরনের অবস্থায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ চাইলেও কৌশলগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর হতে পারছে না।

নতুন নিয়োগ নীতিমালা এবং যোগ্যতার মানদণ্ড

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এমডি নিয়োগে আরও কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এখন থেকে এমডি হওয়ার জন্য প্রার্থীর অন্তত ২০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা, ন্যূনতম বয়স ৪৫ বছর এবং পেশাগত সুনাম থাকতে হবে। তদুপরি, মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াও বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি, নিয়োগের মেয়াদ ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৩ বছরে আনা হয়েছে।

এই নীতিমালা ব্যাংক খাতে পেশাদারিত্ব এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও এতে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘতর হচ্ছে, যা স্বল্পমেয়াদে শূন্যতা পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত করছে।

ভবিষ্যৎ সংকটের আশঙ্কা

আগামী এক বছরের মধ্যে আরও চারটি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের—ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ণ ও মিডল্যান্ড—বর্তমান এমডিদের মেয়াদ শেষ হবে। এই মেয়াদ শেষের ফলে নতুন নিয়োগের প্রয়োজন দেখা দেবে, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে নেতৃত্ব সংকট আরও বাড়াতে পারে।

কাঠামোগত দুর্বলতা ও পুঁজিবাজারে প্রভাব

ব্যাংক খাতের এই নেতৃত্ব সংকট কেবল একটি প্রশাসনিক সমস্যা নয়; এটি খাতটির গভীর কাঠামোগত দুর্বলতার প্রতিফলন। বর্তমানে ব্যাংকগুলো উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ, নিট আয়ের নিম্নমুখী প্রবণতা, ঋণ বিতরণে ধীরগতি এবং মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থতা মোকাবিলা করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শীর্ষ ব্যবস্থাপনায় অনিশ্চয়তা, যা বাজারে আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও দক্ষ, স্বচ্ছ এবং সময়োপযোগী নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, কাঠামোগত দুর্বলতা চিহ্নিত করে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার বাস্তবায়ন জরুরি।

ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা রক্ষার জন্য প্রয়োজন সময়মতো উপযুক্ত নেতৃত্ব নিয়োগ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে টেকসই নীতিগত পদক্ষেপ। নেতৃত্ব সংকটের ব্যবস্থাপনা যদি বিলম্বিত হয়, তাহলে এর বিরূপ প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে পড়তে পারে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ