ঢাকা, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিএসইসি’র নজরদারিতে বড় পাঁচ প্রতিষ্ঠান: তদন্ত কমিটি গঠন

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৫ ১৫:২০:৪১
বিএসইসি’র নজরদারিতে বড় পাঁচ প্রতিষ্ঠান: তদন্ত কমিটি গঠন

রাজনৈতিক ছায়া, অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা আর শেয়ারহোল্ডিং সংকটে জর্জরিত বড় পাঁচ প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের আকাশে নতুন করে কালো মেঘ। বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গায় প্রশ্ন তুলে, বাজারে অস্থিরতা বাড়ানো পাঁচটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির কার্যক্রম ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গঠন করা হয়েছে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান। তাদের হাতে সময়—মাত্র ১৫ কর্মদিবস। এর মধ্যেই দিতে হবে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন।

তদন্তের তালিকায় উঠে এসেছে যেসব কোম্পানির নাম, তারা শুধু ব্যবসা নয়, রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে আলোচিতভাবে। কোম্পানিগুলো হলো—বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, শাইনপুকুর সিরামিকস, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম) এবং নিউ লাইন ক্লোথিংস। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানই বেক্সিমকো গ্রুপের ছায়ায় পরিচালিত।

তদন্তের চোখ কোথায় থাকবে?

কমিটির চোখ থাকবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে—স্পন্সর-ডিরেক্টরদের সম্মিলিত শেয়ারহোল্ডিং ৩০ শতাংশে রয়েছে কি না, আর্থিক বিবরণী নিয়মমতো দাখিল হচ্ছে কি না, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন ঠিকভাবে হচ্ছে কি না এবং কোনো ইনসাইডার ট্রেডিং বা গোপন লেনদেন হচ্ছে কি না—সবকিছুই আসবে তদন্তের আওতায়।

বেক্সিমকো গ্রুপ: রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপে ডুবে থাকা জাহাজ?

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নজরদারি কাকতালীয় নয়। গ্রুপটির ভাইস চেয়ারম্যান সালাম এফ রহমান ছিলেন আগের সরকারের প্রভাবশালী সদস্য। রাজনীতির ছায়া ও অর্থনৈতিক বাস্তবতার টানাপোড়েন—দুটোই একসঙ্গে গড়ে তুলেছে সন্দেহের পরিবেশ।

তথ্য বলছে, বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংকঋণের পরিমাণ ৪ হাজার বিলিয়ন টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর বড় অংশই এখন ‘নন-পারফর্মিং’—অর্থাৎ মন্দ ঋণ। শাইনপুকুর সিরামিকস একাই বয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ৬৯৪ মিলিয়ন টাকার স্বল্পমেয়াদি ঋণের বোঝা।

লোকসান, লুকিয়ে থাকা হিসাব আর বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা

রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস (আরএসআরএম)—জেড ক্যাটাগরির এ কোম্পানির স্পন্সর-ডিরেক্টরদের সম্মিলিত শেয়ার ছিল এপ্রিলে মাত্র ২৯.৯৩ শতাংশ। ২০১৭ থেকে ধারাবাহিক মুনাফা কমতে কমতে ২০২১ সালে কোম্পানিটি দেখিয়েছে ৩৭৯ মিলিয়ন টাকার বিশাল লোকসান। এরপর আর কোনো আর্থিক বিবরণীই প্রকাশ করেনি।

আর নিউ লাইন ক্লোথিংস? ২০২১ সালের পর থেকে কোনো তথ্যই নেই বাজারে। চলতি বছরের এপ্রিলে ডিএসইর একটি পরিদর্শন দল গিয়ে দেখে, প্রতিষ্ঠানটি কার্যত বন্ধ।

নতুন নির্দেশনা, শৃঙ্খলার ইঙ্গিত

এমন পরিস্থিতিতে বিএসইসি হাল ধরতে গিয়ে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে—যেসব কোম্পানির স্পন্সর-ডিরেক্টরদের সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশের নিচে, সেখানে অবশ্যই স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। একই নির্দেশনা জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

আস্থা ফেরাতে সময়মতো পদক্ষেপ জরুরি

বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সময়মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এই তদন্ত হবে একটি পরীক্ষা—শুধু কোম্পানিগুলোর জন্য নয়, বিএসইসির সক্ষমতারও। এখন দেখার পালা, তদন্তের পর সত্য বেরিয়ে আসে কি না, নাকি সব হারিয়ে যায় আগের মতোই কোনো অদৃশ্য ছায়ার আড়ালে।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

চলতি সপ্তাহে ডিভিডেন্ড ও ইপিএস প্রকাশ করবে ৩ কোম্পানি

চলতি সপ্তাহে ডিভিডেন্ড ও ইপিএস প্রকাশ করবে ৩ কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি কোম্পানি—জনতা ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স এবং স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস—চলতি সপ্তাহে বোর্ড সভার মাধ্যমে ২০২৪ হিসাব বছরের ডিভিডেন্ড... বিস্তারিত