ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ম্যানচেস্টার সিটি বনাম আল-হিলাল: ৭ গোলের নাটকীয় ম্যাচ দেখলো বিশ্ব

খেলা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১০:২৫:৩৩
ম্যানচেস্টার সিটি বনাম আল-হিলাল: ৭ গোলের নাটকীয় ম্যাচ দেখলো বিশ্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফুটবলবিশ্বে এক চরম অঘটনের জন্ম দিল সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলাল। ইউরোপের অন্যতম সফল ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিকে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে তারা জায়গা করে নিয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। দীর্ঘ সময় ধরে বলের নিয়ন্ত্রণ ও আক্রমণ নির্ভর খেলায় আধিপত্য দেখিয়েও ম্যাচ শেষে জয়হীন থেকে মাঠ ছাড়তে হয়েছে পেপ গার্দিওলার দলকে।

প্রথমার্ধে সিটির আগ্রাসন

ম্যাচের শুরু থেকেই ম্যানচেস্টার সিটি একচেটিয়া খেলা শুরু করে। ৯ মিনিটেই মিডফিল্ডার বার্নার্দো সিলভা গোল করে দলকে এগিয়ে নেন। সিটির খেলোয়াড়রা একের পর এক আক্রমণে আল-হিলালের রক্ষণকে চাপে রাখে। তবে প্রথমার্ধে আর কোনো গোল না হলে ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় সিটি।

দ্বিতীয়ার্ধে পাল্টে গেল দৃশ্যপট

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই ঘুরে দাঁড়ায় আল-হিলাল। ম্যাচের ৪৬তম মিনিটে মার্কোস লিওনার্দো গোল করে স্কোর সমান করেন। মাত্র ছয় মিনিট পর, ৫২ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার মালকম দ্বিতীয় গোল করে আল-হিলালকে এগিয়ে দেন। সিটির পক্ষে দ্রুত জবাব আসে ৫৫ মিনিটে, যখন আর্লিং হালান্ড গোল করে সমতা ফেরান।

অতিরিক্ত সময়ে নাটকীয় উত্থান ও পতন

নির্ধারিত সময় শেষে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৪ মিনিটে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার কালিদু কুলিবালি গোল করে আল-হিলালকে আবারও এগিয়ে দেন। কিন্তু ম্যান সিটিও হাল ছাড়েনি। ১০৪ মিনিটে ফিল ফোডেন দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচে আবারও সমতা ফেরান। তবে শেষ হাসি হাসে আল-হিলালই। ১১২ মিনিটে মার্কোস লিওনার্দো নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ৪-৩ ব্যবধানে এগিয়ে দেন, যা শেষ পর্যন্ত নির্ধারণী গোল হিসেবেই প্রমাণিত হয়।

ম্যাচ পরিসংখ্যান

ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচ জুড়ে বলের দখল ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল। তারা মোট ৩০টি শট নেয়, যার মধ্যে ১৪টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে, আল-হিলাল নেয় ১৭টি শট, যার ৬টি ছিল অন টার্গেট। বলের দখলে সিটির ছিল ৬৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ এবং তারা মোট ৮২৭টি পাস খেলেছে ৯২ শতাংশ সফলতায়। অন্যদিকে, আল-হিলাল ৩৭৪টি পাস খেলেছে ৮৩ শতাংশ সফলতায়। কোণার কিকে সিটি পেয়েছে ১৯টি সুযোগ, যেখানে আল-হিলাল পেয়েছে মাত্র ৪টি।

বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট

গার্দিওলার দল মাঠে আধিপত্য দেখালেও আল-হিলালের কৌশলগত রক্ষণভাগ, ফাস্ট ব্রেক এবং সুযোগ কাজে লাগানোর দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়। মার্কোস লিওনার্দোর গোল দুটি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আল-হিলাল দেখিয়েছে, কেবল পজেশন ফুটবল দিয়ে জয় নিশ্চিত করা যায় না—সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহারই বড় পার্থক্য গড়ে দেয়।

এই পরাজয় ম্যান সিটির জন্য এক বড় ধাক্কা, বিশেষ করে যখন তারা এই টুর্নামেন্টে শিরোপার অন্যতম দাবিদার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। ক্লাব বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন তাদের জন্য ভেঙে গেল রাউন্ড অব ১৬-তেই।

আল-হিলালের এই জয় শুধু তাদের জন্যই নয়, পুরো এশিয়ান ফুটবলের জন্য একটি গর্বের বিষয়। এই জয় প্রমাণ করে দিয়েছে যে ইউরোপিয়ান ক্লাবদের আধিপত্যের বাইরে থেকেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্ভব। অন্যদিকে, ম্যান সিটির জন্য এটি আত্মসমালোচনার সময়। তাদের আক্রমণভাগ যতটা ধারালো ছিল, রক্ষণভাগ ঠিক ততটাই দুর্বল ছিল।

এই ম্যাচটি ক্লাব বিশ্বকাপ ইতিহাসে স্মরণীয় একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে, যেখানে অনভ্যস্ত প্রতিপক্ষের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয় ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবকে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ