ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি আস্থাহানির পেছনে ২০ হাজার কোটির কেলেঙ্কারি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১৩:৪৫:৩৭
শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদি আস্থাহানির পেছনে ২০ হাজার কোটির কেলেঙ্কারি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৯-১০ সালের শেয়ারবাজার ধস বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ওই সময়ের অস্বাভাবিক দরপতনে বিপুলসংখ্যক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ঘটনাটি তদন্তে সরকার একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন ব্যাংকার খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ।

তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে বাজারে পরিকল্পিত কারসাজির চিত্র। এতে বলা হয়, একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী সমন্বিতভাবে শেয়ারের কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধিতে যুক্ত ছিলেন এবং এতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ স্থানান্তর হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামাল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল একটি প্রভাবশালী চক্রের মাধ্যমে এই কারসাজিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। যদিও এসব অভিযোগের কোনো আইনগত নিষ্পত্তি হয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের দাম বাজার বাস্তবতা উপেক্ষা করে বাড়ানো হয়। বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করতে এসব কোম্পানির আর্থিক তথ্য গোপন রাখা হয়। তদন্তে আরও জানা যায়, অর্থমন্ত্রিত্বের দায়িত্বে থাকার সময়ও লোটাস কামাল এই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিএমসি কামাল টেক্সটাইলকে ঘিরেও অনিয়মের তথ্য উঠে আসে। তৎকালীন সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টতা ছিল। লোকসানি থাকা সত্ত্বেও এর শেয়ারমূল্য ১৬ গুণ বেড়ে যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়, স্টক ডিভিডেন্ড, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন ও রাইট শেয়ারের ঘোষণা এর পেছনে ভূমিকা রাখে। মুস্তফা কামাল অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ থাকলেও, বাস্তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে বাজারে জবাবদিহির অভাব এবং নীতিনির্ধারকদের প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।

বর্তমানেও পুঁজিবাজারে নানা ধরনের অস্বাভাবিক শেয়ারদর বৃদ্ধি ও গোষ্ঠীগত প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এসবের পেছনে অতীতের সেই একই গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ অনুযায়ী, বাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে হলে অতীতের অনিয়মের দায় নির্ধারণ, আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। একই সঙ্গে প্রয়োজন বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও শক্তিশালী নজরদারির কাঠামো।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ