বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় সফটওয়্যার স্থাপন: সময় বাড়াতে চায় ব্রোকাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারী সুরক্ষায় নির্ধারিত টেম্পার-প্রুফ ব্যাক-অফিস সফটওয়্যার স্থাপনে অতিরিক্ত দুই মাস সময় চেয়েছে। সফটওয়্যার স্থাপনের তৃতীয় দফার সময়সীমা শেষ হয়েছে ৩০ জুন। তবে ডিবিএ বলছে, সফটওয়্যার বিক্রেতাদের জনবল ঘাটতি এবং সরকারি ছুটির কারণে বাস্তবায়ন কার্যক্রমে বিলম্ব হয়েছে।
ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বরাবর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত সফটওয়্যার সরবরাহকারীরা চাহিদা অনুযায়ী সার্ভিস দিতে পারছেন না। ফলে অধিকাংশ ব্রোকার প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা ঠিক সময়ে পাচ্ছেন না।
সফটওয়্যার বাস্তবায়নের অগ্রগতি
ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, মোট ৩০২টি টিআরইসি (ট্রেডিং রাইটস এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) হোল্ডারের মধ্যে ২৫৫টি ইতোমধ্যে সফটওয়্যার ইনস্টল করেছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপন কার্যক্রমের বিভিন্ন ধাপে রয়েছে। বিএসইসি নির্দেশনা অনুযায়ী, সফটওয়্যার ইনস্টলের পাশাপাশি এর পূর্ণাঙ্গ ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে থাকবে।
পটভূমি: কেন এই সফটওয়্যার জরুরি
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ ফার্ম বিনিয়োগকারীদের তহবিল আত্মসাৎ করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়। এরপর বাজারের স্বচ্ছতা এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত সফটওয়্যার বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রথম সময়সীমা নির্ধারণ করা হয় ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে। পরে ডিএসই এবং ডিবিএ-এর অনুরোধে তা তিনবার বাড়ানো হয়।
বিনিয়োগকারীদের আর্থিক তথ্য, লেনদেন ও ব্যালেন্সের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে এই সফটওয়্যার অপরিহার্য। অতীতে কিছু প্রতিষ্ঠান ইন-হাউস সফটওয়্যারে তথ্য ম্যানিপুলেট করে বিনিয়োগকারীদের অজ্ঞাতে অর্থ স্থানান্তর করেছে। নতুন সফটওয়্যার ব্যবস্থায় এই ধরনের অনিয়ম বন্ধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অতীতের অনিয়ম ও অনিয়ন্ত্রিত ঝুঁকি
২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে কয়েকটি বড় ধরনের তহবিল আত্মসাতের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে ছিল ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, ডন সিকিউরিটিজ, তামহা সিকিউরিটিজ, ব্যাংকো সিকিউরিটিজ এবং শাহ মোহাম্মদ সাগির অ্যান্ড কোম্পানি। সম্মিলিতভাবে এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। সর্বশেষ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে ২০২৪ সালের আগস্টে মশিহুর সিকিউরিটিজের মাধ্যমে।
বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কিছু ব্রোকারেজ ফার্ম ভুয়া সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের ভুল তথ্য দিয়েছে এবং সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেড পরিচালনা করেছে। এই অনুশীলন বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিতে ফেলে এবং বাজারে আস্থার ঘাটতি তৈরি করে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিক্রিয়া
বিএসইসি মুখপাত্র মো. আবুল কালাম নিশ্চিত করেছেন যে, ডিবিএ'র সময় বাড়ানোর আবেদন কমিশনে গৃহীত হয়েছে। পরবর্তী কমিশন সভায় বিষয়টি আলোচনায় আসবে এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ও বাজার স্বচ্ছতার স্বার্থে সফটওয়্যার বাস্তবায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি কিছু প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার কার্যকরভাবে চালু করতে না পারে, তা বাজারের নিয়ম-শৃঙ্খলা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের জন্য উদ্বেগজনক।
আল-আমিন ইসলাম/
পাঠকের মতামত:
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বিনিয়োগকারীদের জন্য ৬৪% ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা
- নকল অ্যাপ, ভুয়া ব্রোকারেজ: শেয়ারবাজারের বড় প্রতারণা উন্মোচন
- বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা: ৩,০০০ সদস্যের প্রতারক চক্রের চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস
- শেয়ার কারসাজি: বিএসইসি’র কড়া তদন্তের নির্দেশ, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক
- শেয়ারবাজারে আলোড়ন: ৯ স্টকে বাই সিগন্যাল, নতুন সুযোগ?
- বিনিয়োগকারীদের চিন্তা দুর করলো ৯ কোম্পানির শেয়ার
- ২,৩০০ কোটি টাকার বন্ডে শেয়ারবাজারে আলোড়ন: বিএসইসি'র অনুমোদন
- বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলো ৮ কোম্পানি
- পে-স্কেল নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুখবর দিলেন অর্থ উপদেষ্টা
- সরকারি কর্মীদের জন্য সুখবর: নতুন পে-স্কেল, কার কত বেতন বাড়বে
- রেকর্ড চাহিদা: বিনিয়োগকারীদের চাহিদার শীর্ষে ২৪ কোম্পানির শেয়ার
- পুঁজি সংগ্রহে ব্যর্থ শেয়ারবাজার: দায়ী কারা? ফাঁস করলেন বিশেষজ্ঞরা
- ইন্টার মায়ামি বনাম শিকাগো ফায়ার: শেষ ৮ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচ
- আগামীকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে ৪ পরিবর্তন
- সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভিসা নিয়মে যুগান্তকারী পরিবর্তন