ঢাকা, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কঠিন সিদ্ধান্ত: বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১১:৫৬:৪২
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কঠিন সিদ্ধান্ত: বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ২০২২ সালের জন্য ঘোষিত ডিভিডেন্ড অবশেষে বাতিল করেছে। ঘোষণার ১৪ মাস পর ডিভিডেন্ড বিতরণে অপারগতা প্রকাশ করে ব্যাংকটি জানিয়েছে, সংশোধিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির প্রকৃতপক্ষে মুনাফা হয়নি। ফলে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য পূর্বে ঘোষিত নগদ ও বোনাস ডিভিডেন্ড আর দেওয়া যাচ্ছে না। এই সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে এবং বাজারে কর্পোরেট স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

ডিভিডেন্ড ঘোষণা ও সংশোধিত হিসাব

২০২৩ সালের ২৯ এপ্রিল গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য মোট ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে—যার মধ্যে ছিল ৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ৫ শতাংশ বোনাস। এই ঘোষণার ভিত্তিতে রেকর্ড ডেট নির্ধারিত হয় ২০২৩ সালের ৬ জুন। ঘোষণার সময় ব্যাংকটি জানায়, তাদের শেয়ারপ্রতি আয় (EPS) হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা, যা ডিভিডেন্ড প্রদানে যথেষ্ট।

পরবর্তীতে, ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠনের পর ব্যাংকটি পূর্বের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। সংশোধিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২২ অর্থবছরে ব্যাংকটি আসলে লোকসান করেছে। সংশোধিত EPS দাঁড়ায় মাইনাস ২১ টাকা ৭৯ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি নিট দায় দাঁড়ায় ৯ টাকা ১৪ পয়সা। এসব তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাংকটি ২০২৫ সালের ৮ জুলাই একটি মূল্য সংবেদনশীল বিবৃতিতে ডিভিডেন্ড বাতিলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।

বার্ষিক সাধারণ সভার নতুন তারিখ

প্রাথমিকভাবে ব্যাংকটি ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) আহ্বান করলেও, তা নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১৯ আগস্ট ২০২৫ সকাল ১১টায় ভার্চুয়াল ও সরাসরি—উভয় মাধ্যমে বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। রেকর্ড ডেট হিসাবে ২০২৩ সালের ৬ জুনই বহাল থাকবে।

বাজারের প্রতিক্রিয়া ও বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি

ডিভিডেন্ড ঘোষণা ও তা বাতিলের মধ্যে দীর্ঘ সময়কাল এবং প্রতিবেদন সংশোধনের মাধ্যমে আয় থেকে লোকসানে রূপান্তর—এই দুটি বিষয়ই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। অনেক বিনিয়োগকারী ডিভিডেন্ডের আশায় ব্যাংকটির শেয়ার ধারণ করেছেন, যারা এখন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

এই ঘটনাটি বিনিয়োগকারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঝুঁকি মূল্যায়নের গুরুত্ব এবং কর্পোরেট তথ্য যাচাইয়ের প্রাসঙ্গিকতা আবারও সামনে এনেছে। একই সঙ্গে, এটি কর্পোরেট সুশাসন, নিরীক্ষা মান এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা নিয়ে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

করণীয় ও সুপারিশ

বিশ্লেষকদের মতে, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই এবং নিরীক্ষা প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এছাড়া, ডিভিডেন্ড ঘোষণা সংক্রান্ত নীতিমালার আওতায় তথ্য যাচাইয়ের জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং বাধ্যবাধকতা নির্ধারণ করাও প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত—নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখা এখন সময়ের দাবি।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ডিভিডেন্ড বাতিলের সিদ্ধান্ত বাজারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আর্থিক শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা রক্ষায় এবং বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কর্পোরেট ও নিয়ন্ত্রক উভয় পর্যায়ে কার্যকর পদক্ষেপ অপরিহার্য।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ