ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

১৩৪ প্রতিষ্ঠানে একজনও পাস করেনি, এসএসসি পরীক্ষায় বড় ধাক্কা

শিক্ষা ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১৮:০০:৪৩
১৩৪ প্রতিষ্ঠানে একজনও পাস করেনি, এসএসসি পরীক্ষায় বড় ধাক্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেন এক অন্ধকার ছবি আঁকল দেশের ১৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও একজনও শিক্ষার্থী পাস করেনি! শিক্ষাক্ষেত্রে এমন ভয়াবহ ব্যর্থতা শুধু সংখ্যায় নয়, মননে ও বাস্তবতায় বড় এক প্রশ্ন তুলে দিল—এই প্রতিষ্ঠানে কি আদৌ পড়াশোনা হয়?

শুধু ফেল নয়, একেবারে ‘শূন্য পাস’—এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২৪ সালে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫১টি, এবার তা লাফিয়ে পৌঁছেছে ১৩৪-তে। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলোর দুরবস্থার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে—শিক্ষা ব্যবস্থার তলানিতে কি কোনো আলো আছে?

হাজারে হাজার পরীক্ষার্থী, তবু খালি হাতে ফিরেছে শত শত পরিবার

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ২টায় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সারা দেশের ৩০ হাজার ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৪টিতে পাসের হার শূন্য! আবার উল্টোদিকে, ৯৮৪টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাসের কৃতিত্ব অর্জন করলেও তা গত বছরের তুলনায় অনেক কম—২০২৪ সালে এর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯৬৮।

বলে রাখা ভালো, এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেয় প্রায় ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে প্রায় এক লাখ। অংশগ্রহণ কমার পেছনে রয়েছে নানা কারণ—শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া, অর্থনৈতিক চাপ, সামাজিক অনিশ্চয়তা ও শিক্ষার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া।

বাস্তব মূল্যায়নেই কি বাস্তব চিত্র ফুটে উঠল?

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার ফলাফল প্রস্তুত হয়েছে ‘বাস্তব মূল্যায়ন’ নীতির আলোকে। অর্থাৎ নম্বরের বন্যা নয়, প্রাপ্তি অনুযায়ী প্রাপ্ত নম্বরই পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে হয়তো অনেকের ফল আশানুরূপ হয়নি, তবে সঠিক মূল্যায়নের এই প্রক্রিয়া শিক্ষা ব্যবস্থায় এক ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা দেয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “এই ফলাফল আমাদের চোখ খুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। শিক্ষকের দায় যেমন আছে, তেমনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতাও জরুরি।”

পথ কোথায়?

প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এমন ভয়াবহ পারফরম্যান্স কেবল সংখ্যার খেলা নয়, বরং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোথায় ছিদ্র, কোথায় অবহেলা—তারই প্রতিচ্ছবি। যে প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারে না, সেখানে পাঠদান থেকে শুরু করে মূল্যায়ন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই বড় ধরনের ব্যর্থতা রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।

পরীক্ষা তো শেষ, ফলাফলও প্রকাশিত। এখন সময় গভীর আত্মসমালোচনার। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নীতিনির্ধারক—সবার সম্মিলিত উদ্যোগেই আবার আলো ফেরাতে হবে এই অন্ধকারে ডুবে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোয়।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ