ঢাকা, বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

ভূমি আইন ২০২৪: খাজনা বাকি থাকলে জমি আর থাকবে না আপনার

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ৩০ ০৮:৫৫:৪৪
ভূমি আইন ২০২৪: খাজনা বাকি থাকলে জমি আর থাকবে না আপনার

স্মার্ট কার্ড আসছে, তিন বছর বকেয়া হলেই জমি যাবে খাস খতিয়ানে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভূমির খাজনা বছরের পর বছর না দেওয়ার অভ্যাসে অভ্যস্ত মালিকদের জন্য আসছে ‘বড় শাস্তি’। নতুন ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৪’-এর খসড়ায় বলা হয়েছে—টানা তিন অর্থবছর খাজনা বকেয়া থাকলেই ওই জমি বাজেয়াপ্ত হয়ে সরকারের খাস খতিয়ানে যুক্ত হবে। অর্থাৎ খাজনা বাকি থাকলে ভবিষ্যতে জমি আর আপনার নামে থাকবে না।

ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের জমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে ও ভূমি জালিয়াতি প্রতিরোধে এ আইন আনা হচ্ছে। এটি চালু হলে ভূমি খাতে বড় ধরনের সংস্কার হবে বলেও তাঁদের দাবি।

তিন বছর খাজনা না দিলে জমি বাজেয়াপ্ত

খসড়া আইন অনুযায়ী,

খাজনা বা ভূমি উন্নয়নকর টানা তিন অর্থবছর জমা না দিলে জমিটি সরকারের খাস খতিয়ানে নিয়ে নেওয়া হবে।

এক্ষেত্রে কোনো নোটিশ বা অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে না। ফলে নিয়মিত খাজনা প্রদানই হবে মালিকানা ধরে রাখার মূল শর্ত।

প্রত্যেক জমির মালিক পাবেন স্মার্ট ভূমি কার্ড (CLO)

নতুন আইনে প্রতিটি জমির মালিককে দেওয়া হবে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ (CLO)। এতে থাকবে—

ইউনিক আইডি নম্বর

দাগ-খতিয়ান তথ্য

জমির মালিকের জাতীয় পরিচয়

কোডসহ মালিকানার ডিজিটাল যাচাই ব্যবস্থা

এই কার্ড থাকবে জমির মালিকানার একমাত্র স্বীকৃত দলিল হিসেবে। খাজনা, দলিল রেজিস্ট্রি, নামজারি—সবই CLO অনুযায়ী করতে হবে।

জাল দলিল ব্যবহার করলে ২ বছর জেল

আইনে ভূমি সংক্রান্ত জালিয়াতির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে:

জাল কাগজে জমি দখলের চেষ্টা করলে

২ বছরের কারাদণ্ড,

বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা,

অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

সরকার আশা করছে, এর ফলে দখলবাজি ও দলিল কারসাজি কমে আসবে।

কৃষিজমি রক্ষায় বিশেষ বিধান

উন্নয়ন প্রকল্পে দুই বা তিন ফসলি কৃষিজমি অধিগ্রহণ নিষিদ্ধ,

শুধুমাত্র সরকারের বিশেষ অনুমতি থাকলেই নেওয়া যাবে

অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত অনুর্বর বা কম উৎপাদনশীল জমির

এই বিধানগুলো কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জমির শ্রেণি পরিবর্তনে লাগবে অনুমতি

সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না

এক বিঘার কম ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ক্ষেত্রে শিথিলতা

নিয়ম না মানলে—

১ বছরের জেল অথবা

৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে

স্যাটেলাইটে তৈরি হবে ডিজিটাল ভূমি মানচিত্র

প্রত্যেক জমির অবস্থান, ব্যবহার এবং শ্রেণি পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করতে নেওয়া হচ্ছে উদ্যোগ—

স্যাটেলাইট চিত্রনির্ভর ডিজিটাল ভূমি মানচিত্র

যেখানে আলাদা করে বোঝা যাবে: আবাসিক, বাণিজ্যিক, বনাঞ্চল, জলাভূমি ও কৃষিজমি

জমি হস্তান্তরে নামজারি ও খাজনা হালনাগাদ বাধ্যতামূলক

জমি বিক্রি, হস্তান্তর বা উত্তরাধিকার সূত্রে বদলের পর—

সিএলও কার্ড হালনাগাদ করতে হবে

নামজারি সম্পন্ন করতে হবে

এবং নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে

নতুন আইন কার্যকর হলে জমির মালিকানা টিকিয়ে রাখতে কেবল কাগজপত্র থাকাই যথেষ্ট নয়।নিয়মিত খাজনা দেওয়া ও দাখিলা সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক হবে।

আর যদি খাজনা বকেয়া থাকে তিন বছর—তবে জমির দখল ও মালিকানা থাকবে না আপনার, চলে যাবে রাষ্ট্রের কাছে।

FAQ (এক লাইনে):

প্রশ্ন: তিন বছর খাজনা না দিলে কি হবে?

উত্তর: জমি বাজেয়াপ্ত হয়ে সরকারের খাস খতিয়ানে নিবন্ধিত হবে।

প্রশ্ন: স্মার্ট ভূমি কার্ড কী?

উত্তর: জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য QR কোডসহ আধুনিক CLO কার্ড।

প্রশ্ন: জমির শ্রেণি পরিবর্তনে কি শাস্তি আছে?

উত্তর: অনুমতি ছাড়া করলে এক বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা।

প্রশ্ন: কৃষিজমি কি সরকার অধিগ্রহণ করতে পারবে?

উত্তর: দুই বা তিন ফসলি জমি বিশেষ অনুমতি ছাড়া অধিগ্রহণ করা যাবে না।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ