ঢাকা, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের পলায়ন: বিদেশে কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১১ ১০:৫৯:০৫
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের পলায়ন: বিদেশে কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়া এবং শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ ও আন্দোলন শুরুর পর, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ২০২৪ সালের 'জুলাই বিপ্লব' পরবর্তী সময়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা আশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন বিদেশি শহরে চলে গেছেন। তারা ভারতের কলকাতা ও দিল্লি, দুবাই, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, অস্ট্রেলিয়া এবং আরও কয়েকটি দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

১. পলায়নকারী নেতাদের তালিকা এবং পলায়নের ধরন

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনার সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এবং নেতারা নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশ ছেড়ে চলে যান। কেউ কেউ আগেই নিরাপত্তার জন্য দেশ ত্যাগ করেছিলেন, তবে বেশিরভাগই পরিস্থিতির আরও অবনতির পরেই পলায়ন করেছেন।

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, যিনি চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন, তার পরবর্তী গন্তব্য ভারত হতে পারে। সাবেক মন্ত্রী এবং শীর্ষ নেতারা, যাদের মধ্যে রয়েছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাহাউদ্দিন নাছিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মায়া, এবং মনিরুল ইসলাম, তারা বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।

২. কিভাবে পালিয়েছেন তারা?

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা পালানোর জন্য বিভিন্ন সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন। যশোরের বেনাপোল সীমান্ত, সিলেট, চট্টগ্রাম, আখাউড়া, ফেনী এবং সাতক্ষীরার সীমান্ত পথ ব্যবহার করে অনেক নেতা ভারতে প্রবেশ করেছেন। পলায়নের সময়, তারা পুলিশের চোখে পড়ার ভয়ে অন্ধকারে সীমান্ত পার করেছেন। বেশ কিছু নেতার গন্তব্য ছিল কলকাতা, দিল্লি এবং মুম্বাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের পলায়নের কৌশল ছিল বিশেষভাবে গোপনীয়। নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক চট্টগ্রাম হয়ে সাগরপথে টেকনাফ দিয়ে ভারতে পালিয়ে পরে লন্ডনে চলে যান। শেখ হাসিনার মন্ত্রীরা চট্টগ্রাম থেকে চার্টার্ড বিমানে পালিয়ে সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম এবং যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কম্বোডিয়ায় গাড়ি এবং সম্পত্তি কিনে বসবাস শুরু করেছেন। শেখ ফজলে নূর তাপস বর্তমানে লন্ডনে, তার ভাই শেখ পরশ কানাডায় অবস্থান করছেন।

৩. সেনা কর্মকর্তাদের পলায়ন

শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতারা নয়, কিছু উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব ময়মনসিংহ সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং এখন দিল্লিতে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে শেয়ার করছেন গোয়েন্দা তথ্য, যা শেখ হাসিনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ এখন ইস্তান্বুলে রয়েছেন, এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।

৪. কেন পালিয়েছেন এই নেতারা?

'জুলাই বিপ্লব' এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে এই নেতারা নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনের ফলে তারা দ্রুত পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাপে, আবার কেউ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার কারণে দেশ ত্যাগ করেছেন।

৫. শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের পলায়ন

শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যদের পলায়নের বিষয়ে কিছু গুঞ্জন রয়েছে। জানা গেছে, শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বিমানে না গিয়ে তাদের স্ত্রীরা পাঠিয়েছেন, যা রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং নিরাপত্তাহীনতার ইঙ্গিত দেয়।

৬. বর্তমান অবস্থান

বর্তমানে দুইশো’রও বেশি নেতার অবস্থান ভারতের বিভিন্ন শহরে। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই এবং ব্যাঙ্গালোরে এসব নেতারা আশ্রয় নিয়েছেন। তারা দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন এবং এখনও বিদেশে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।

৭. বিপদমুক্ত অবস্থান

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের পলায়ন এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এক বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দেশের অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে তারা যখন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন, তখন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে, পলায়নকারী নেতাদের প্রত্যাবর্তন এবং দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া নিয়ে ভবিষ্যতে অনেক প্রশ্ন উঠতে পারে।

কারা কোথায় আছেন?

সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ চিকিৎসার অজুহাতে থাইল্যান্ড গেলেও বর্তমানে অবস্থান করছেন ভারতের দিল্লিতে।

সাবেক স্পিকার ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী অভ্যুত্থানের দিন সংসদ ভবনের বাংকারে লুকিয়ে ছিলেন। পরে সেনাবাহিনী তাকে উদ্ধার করে সেনানিবাসে নিয়ে যায়, যেখানে তিনি এখনো অবস্থান করছেন।

তোফায়েল আহমেদ গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাইরে যেতে পারেননি।

কমপক্ষে ১২ জন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন: আমির হোসেন আমু, সালমান এফ রহমান, ডা. দীপু মনি, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, পলকসহ আরও কয়েকজন।

ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়া নেতারা:

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

জাহাঙ্গীর কবির নানক, নওফেল, মায়া, বাহাউদ্দিন নাছিম

সাবেক গোয়েন্দা প্রধান মনিরুল ইসলাম

শেখ হাসিনার আত্মীয় নিক্সন চৌধুরী (কলকাতা)

সাবেক সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব (দিল্লিতে অবস্থান করে ভারতের ‘র’ গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন)

অন্যান্য দেশে যাওয়া নেতারা:

তারিক সিদ্দিক (চট্টগ্রাম হয়ে সাগরপথে পালিয়ে লন্ডনে)

হাছান মাহমুদ ও এ আরাফাত (চট্টগ্রাম থেকে চার্টার্ড বিমানে সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম হয়ে যুক্তরাষ্ট্র)

তাদের সঙ্গে যোগ দেন: খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম, বিপ্লব বড়ুয়া

নসরুল হামিদ কম্বোডিয়ায় গাড়ি ও সম্পত্তি কিনে স্থায়ী হয়েছেন

শেখ ফজলে নূর তাপস (লন্ডনে), শেখ পরশ (কানাডায়)

শেখ হেলাল, সালাহ উদ্দিন, তন্ময় (দিল্লিতে)

শামীম ওসমান (থাইল্যান্ড ও দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে)

মুস্তফা কামাল (দুবাইয়ে)

বাহাউদ্দিন নাছিম (মেঘালয় হয়ে ভারতে)

ওবায়দুল কাদের প্রথমে বললেও পালাবেন না, পরে কলকাতায় আশ্রয় নেন

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ (মালয়েশিয়া থেকে দুবাই হয়ে স্পেনে)

ডিবি প্রধান হারুন (নেপাল হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে)

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ (বর্তমানে ইস্তান্বুলে)

লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাইফুল (মালয়েশিয়ায়)

FAQ উত্তর:

কেন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন?

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা 'জুলাই বিপ্লব' এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভের কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন এবং এজন্য তারা দ্রুত দেশ ত্যাগ করেছেন।

কীভাবে তারা দেশ ছেড়েছেন?

এরা প্রধানত সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতে প্রবেশ করেছেন, আর কিছু নেতা বিমান বা সাগরপথে পালিয়েছেন।

কোথায় অবস্থান করছেন তারা?

এই নেতারা ভারত, যুক্তরাজ্য, দুবাই, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম ও অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা কোথায়?

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা বিদেশে নিরাপত্তার কারণে তাদের স্ত্রীদের পাঠিয়েছেন, তবে এখনও তাঁদের বিষয়ে কোনও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ