ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

আ.লীগ নিষিদ্ধ, কী বলছে বাইডেন প্রশাসন ও দিল্লি

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৪ ১২:২০:১৩
আ.লীগ নিষিদ্ধ, কী বলছে বাইডেন প্রশাসন ও দিল্লি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত সোমবার (১২ মে) আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অবস্থান বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া: গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও আইনের শাসন নিশ্চিত করার আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপ-মুখপাত্র টমি পিগট মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে এই বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগকে সবধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধ করেছে, যতক্ষণ না দলটির বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের রায় আসে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে, এবং আমরা বাংলাদেশসহ সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাই যেন তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ এবং সব সংগঠনের স্বাধীনতাকে সম্মান করে।’’

মার্কিন প্রশাসন কখনোই কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না, তবে গণতন্ত্র ও ন্যায়সঙ্গত আইনি প্রক্রিয়া রক্ষার প্রতি তাদের দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া: 'গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার সংকুচিত হওয়া'

ভারতও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিসর সংকুচিত হওয়া এবং গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা খর্ব হওয়া একটি উদ্বেগজনক ঘটনা।’’তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত, যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং জনগণের মতামত পূর্ণাঙ্গভাবে প্রতিফলিত হয়।’’

ভারত তার প্রতিবেশী দেশের জন্য একটি মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে, যেখানে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত: রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত সোমবার (১২ মে) এক প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ হবে যতদিন না বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জারি করা রায় ঘোষণা করে। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধনও স্থগিত ঘোষণা করেছে।

এমন এক সিদ্ধান্তের পর দেশ ও বিদেশে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, বিশেষ করে কীভাবে এটি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে।

বিকল্প রাজনৈতিক সমাধান: গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের আহ্বান

এদিকে, আন্তর্জাতিক মহলও বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চা এবং রাজনৈতিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের মতে, সঠিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা না করলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরো জটিল হতে পারে।

নির্বাচন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা: আন্তর্জাতিক নজর

এখন প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার এই পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতের নির্বাচন প্রক্রিয়া কীভাবে প্রভাবিত হবে? সরকার বিরোধী দলগুলো দাবি করছে, এতে আগামী নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা কমে যাবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

বিশ্বের দুই বৃহৎ শক্তি—যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত—বাংলাদেশ সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, এবং নির্বাচনের সুষ্ঠুতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার জন্য তাদের সঙ্গেই আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নজর কাড়ছে। গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের উদ্বেগ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী পরিবেশ আরও সংকটাপন্ন হতে পারে।

FAQ:

১. আওয়ামী লীগ কেন নিষিদ্ধ হলো?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে, যতদিন না দলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় আসে।

২. যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে কী বলছে?

যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত উভয়ই গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়।

৩. এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নির্বাচনে কী প্রভাব ফেলবে?

বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞা আগামী নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা কমাতে পারে এবং রাজনৈতিক পরিবেশকে জটিল করতে পারে।

৪. বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী হতে পারে?

বিশ্ব শক্তির উদ্বেগ এবং সরকারের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার জন্য বৈশ্বিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ