ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

শেয়ারবাজার নিয়ে খেলা বন্ধে কঠোর শাস্তির দাবি

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৫ ২২:৩৫:০২
শেয়ারবাজার নিয়ে খেলা বন্ধে কঠোর শাস্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ২০২৪ সাল ছিল এক দুঃস্বপ্নের বছর, যার রেশ এখনো কাটেনি। বাজার সূচকের টানা পতন, শেয়ারের দর ও বাজার মূলধনের ব্যাপক ধস এবং ধারাবাহিক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে নেমেছে। ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যে ‘লংমার্চ’ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি পালন করেছেন।

বিশ্লেষক ও বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারবাজার একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল খাত, যেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ছাড়া স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই এখানে একদল ‘গেম্বলার’ ও কুচক্রী গোষ্ঠী নানা কৌশলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হাতিয়ে নিচ্ছে। ভয়ংকর বাস্তবতা হলো, এই চক্রগুলো আইনের ফাঁক-ফোকর ব্যবহার করে পার পেয়ে যাচ্ছে বারবার।

২০২৪ সালেই ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির ঘটনায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৭২২ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। আলোচিতদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক স্বৈরসরকারের শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যিনি সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ উত্তোলন করে আলোচনায় আসেন। এছাড়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরুর নামও উঠে এসেছে শেয়ারবাজারে সংশ্লিষ্টতা ও প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুধু অর্থদণ্ডে এসব জটিল অপরাধ দমন সম্ভব নয়। কারণ, গেম্বলাররা যেভাবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে টাকা হাতিয়ে নেয়, সেই তুলনায় জরিমানার অঙ্ক একেবারেই নগণ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন সময় এসেছে সিকিউরিটিজ আইন কঠোরভাবে সংস্কারের। তাঁদের প্রস্তাব শেয়ারবাজারে প্রমাণিত প্রতারণা ও কারসাজির জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কমপক্ষে দুই বছরের জেল নিশ্চিত করতে হবে। এমন আইন কার্যকর হলে অপরাধীরা দ্বিতীয়বার শেয়ারবাজার নিয়ে খেলতে সাহস পাবে না।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, বিএসইসি যেসব জরিমানা আদায় করে, তার কোনো অংশই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের হাতে ফেরত যায় না। এতে তাঁরা একদিকে অর্থ হারান, অন্যদিকে ন্যায়বিচার থেকেও বঞ্চিত হন। অনেকের মতে, কারসাজিকারীদের থেকে আদায়কৃত অর্থের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।

বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, বিএসইসি চাইলে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের মাধ্যমে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। অপরাধের যথাযথ শাস্তি ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা গেলে শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরে আসবে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

FAQs (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন: কেন ২০২৪ সালকে শেয়ারবাজারের জন্য দুঃস্বপ্ন বলা হচ্ছে?

উত্তর: কারণ ওই বছর বাজার সূচকের ধারাবাহিক পতন, শেয়ারের দরপতন, মূলধনের ধস ও ব্যাপক অনিয়মে বিনিয়োগকারীরা বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

প্রশ্ন: কারা শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে?

উত্তর: অভিযোগ রয়েছে শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের হিরুর বিরুদ্ধে।

প্রশ্ন: বিশ্লেষকরা কী ধরনের শাস্তির পরামর্শ দিচ্ছেন?

উত্তর: তাঁরা শেয়ার কারসাজির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে কমপক্ষে দুই বছরের জেল নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রশ্ন: কারসাজির জরিমানার অর্থ বিনিয়োগকারীরা কি ফেরত পান?

উত্তর: না, বিএসইসি আদায়কৃত জরিমানার অর্থ ক্ষতিগ্রস্তদের ফেরত দেওয়া হয় না, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য অন্যায় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ