ঢাকা, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চাকা খুলে পড়া বিমানের পাইলট-এটিসির নাটকীয় কথোপকথন প্রকাশ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৭ ১২:১৬:০২
চাকা খুলে পড়া বিমানের পাইলট-এটিসির নাটকীয় কথোপকথন প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আকাশে উড়তে উড়তে একটি চাকা খুলে পড়েছিল। তবুও সাহস হারাননি পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ। কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বাংলাদেশ বিমানের ওই ফ্লাইট শেষ মুহূর্তে অবতরণের আগে যেভাবে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তা ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরা।

এখন সেই শেষ তিন মিনিটের কথোপকথন সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে।

ঘটনার শুরু: আকাশে এক চাকা ছাড়া বিমান

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুর ২টা ১৯ মিনিট। কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি ফ্লাইট যখন রাজধানীর আকাশে, তখনই এটিসি থেকে যোগাযোগ শুরু হয়। কারণ, উড্ডয়নের সময় বিমানের বাম পাশের একটি ল্যান্ডিং গিয়ারের চাকা খুলে পড়ে যায়।

এটিসি জানতে চায়:

“আপনি কি এই পরিস্থিতিতে রানওয়ে ১৪-তে অবতরণ নিশ্চিত করছেন?”

পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানান:

“অ্যাফার্ম (হ্যাঁ, নিশ্চিত করছি)।”

রানওয়ের প্রস্তুতি ও সেই নাটকীয় মুহূর্ত

এরপর এটিসি জানায়:

“রানওয়ে ১৪ অবতরণের জন্য প্রস্তুত। আপনি নামতে পারেন।”

এই বার্তার মাত্র ৯০ সেকেন্ড পর, দুপুর ২টা ২২ মিনিটে বিমানটি সফলভাবে অবতরণ করে।রানওয়ের পাশে তখন প্রস্তুত ছিল ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট।তারা ছিল সর্বোচ্চ সতর্কতায় standby অবস্থায়। তবে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই অবতরণ সম্পন্ন হয়।

পাইলটের কণ্ঠে স্বস্তি: “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা নিরাপদে অবতরণ করেছি”

বিমান থেমে যাওয়ার পর পাইলট কন্ট্রোল টাওয়ারে বার্তা পাঠান:

“আলহামদুলিল্লাহ, আমরা নিরাপদে অবতরণ করেছি। কন্ট্রোল টাওয়ারকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাদের সহযোগিতা প্রশংসনীয়।”

এটিসি জানতে চায়:

“আপনি কি নিশ্চিত করছেন যে আপনি নিরাপদে অবতরণ করেছেন?”

পাইলট: “হ্যাঁ, আমি আবারও নিশ্চিত করছি।”

এটিসি: “সবকিছু কি একেবারে স্বাভাবিক আছে?”

পাইলট: “এভ্রিথিং ইজ অ্যাবসোলুটলি ফাইন (সবকিছু একেবারে ঠিক আছে)।”

পরে ক্যাপ্টেন জামিল বলেন,

“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের এটিসিকেও আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাবেন।”

এটিসি জানায়, “আপনার বার্তাটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পৌঁছে দেওয়া হবে।”

‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে করতালি: রানওয়ে কাঁপল স্বস্তিতে

বিমানের নিরাপদ অবতরণের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও উপস্থিত স্টাফরা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে করতালি দিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন। মুহূর্তটি ছিল অনেকটাই চলচ্চিত্রের দৃশ্যের মতো।

ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতি ও পাইলটের সাহসী সিদ্ধান্ত

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান,

“সাধারণত এমন অবস্থায় পাইলট আকাশে চক্কর দিয়ে জ্বালানি কমিয়ে তারপর অবতরণ করেন। কিন্তু এই পাইলট সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথম চেষ্টাতেই নামেন। এজন্য আমরা standby-তে ছিলাম।”

৮ হাজার ঘণ্টার অভিজ্ঞ ক্যাপ্টেন জামিল

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স জানায়,

“ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ ও তার দলের দক্ষতায় সম্ভাব্য বড় একটি দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে।”

জানা গেছে, ক্যাপ্টেন জামিলের রয়েছে ৮,০০০ ঘণ্টার উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা।

তদন্ত কমিটি গঠন

ঘটনার পরপরই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স চিফ অব সেইফটি ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

যাত্রীদের কৃতজ্ঞতা

অবতরণের পর অনেক যাত্রী বিমানের ক্রু, পাইলট ও কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

পাইলটের সাহসিকতা ও এটিসির সহযোগিতা না থাকলে অন্যরকম কিছু ঘটতে পারত বলেও জানান তাঁরা।

এই ঘটনায় যা প্রমাণিত হলো—সাহস, দক্ষতা ও সংকটমূহূর্তে সিদ্ধান্তই পারে শত বিপদের মাঝেও একটি ফ্লাইটকে নিরাপদে মাটিতে নামাতে।

FAQ (প্রশ্নোত্তরসহ):

প্রশ্ন: কোন ফ্লাইটটির চাকা খুলে পড়েছিল?

উত্তর: কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের বাম ল্যান্ডিং গিয়ারের চাকা উড্ডয়নের সময় খুলে পড়ে।

প্রশ্ন: পাইলট কে ছিলেন এবং কীভাবে অবতরণ করেন?

উত্তর: ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ পাইলট ছিলেন। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে এক চেষ্টাতেই বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করান।

প্রশ্ন: ঘটনাটি কবে ঘটে?

উত্তর: শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৫, দুপুর ২টা ১৯ মিনিটে ঘটনাটি ঘটে এবং ২টা ২২ মিনিটে বিমানটি অবতরণ করে।

প্রশ্ন: বিমান কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

উত্তর: একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদার।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ