ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শেয়ারবাজারে কফিন মিছিল,বিনিয়োগকারীদের হুঁশিয়ারি, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

শেয়ারবাজার ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ১৮ ১৯:০২:৩৩
শেয়ারবাজারে কফিন মিছিল,বিনিয়োগকারীদের হুঁশিয়ারি, ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: একদিনের সামান্য উত্থানের পর সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস রোববার (১৮ মে) দেশের শেয়ারবাজারে ফের বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এ বেশিরভাগ শেয়ারের দাম কমে যায়। বাজারে এই টানা ধসের প্রতিবাদে লেনদেন শেষে মতিঝিলে বিক্ষোভে নেমেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। তারা সড়ক অবরোধ করে প্রতীকী কফিন মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব দেয় বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ)। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন, মুখপাত্র ও সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম মানিকসহ শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট বহু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী।

পুঁজির কবর—রাজপথে প্রতীকী প্রতিবাদ

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, গত কয়েক মাসে দেশের পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের কারণে তারা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তারা জানান, বাজার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর ভূমিকা না নেওয়ায় এই অবস্থা দিনের পর দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকে বলেন, ‘‘আমরা শেয়ার কিনেছিলাম সঞ্চয় ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, স্বপ্নের সঞ্চয় ডুবে যাচ্ছে।’’

এই প্রেক্ষাপটে প্রতীকীভাবে শেয়ারবাজারের কফিন বহন করে রাজপথে মিছিল করেন তারা। কারও হাতে ছিল পলিথিন মোড়ানো কাঠের কফিন, কেউ ব্যানারে লিখে এনেছেন— ‘‘শেয়ারবাজারের কবর রচনা হয়েছে, দাফনের অপেক্ষা মাত্র।’’

৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম

বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগ দাবি করেন। একই সঙ্গে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের অপসারণের জোর দাবি জানানো হয়।

আরও পড়ুন:শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরাতে পাঁচ সদস্যের দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চাই

বক্তারা বলেন, ‘‘আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই দুইজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। এবার আন্দোলন শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’’

বাজার পতন এবং আস্থার সংকট

বিনিয়োগকারীদের মতে, বাজারে যথাযথ তদারকি নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো ঠিকমতো কাজ না করায় তারা পুঁজি হারিয়ে রীতিমতো পথে বসছেন। এ অবস্থায় অনেকে আত্মহননের মতো কঠিন সিদ্ধান্তের কথাও ভাবছেন বলে জানানো হয়।

বিশ্লেষকেরাও মনে করছেন, বাজারে দীর্ঘস্থায়ী আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত না হলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে না। সরকার যদি শিগগিরই কার্যকর উদ্যোগ না নেয়, তাহলে এই সংকট আরও গভীর হবে।

রাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ। এখানে যারা বিনিয়োগ করেছেন তারা দেশেরই নাগরিক, শ্রমজীবী, প্রবাসী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। এই শ্রেণির মানুষদের সর্বস্ব হারানোর ঘটনাকে ছোট করে দেখলে চলবে না।

বক্তারা সরকার ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহলের কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘আমরা ভিক্ষা চাই না, চাই ন্যায্য হিসাব, চাই সুশাসন। যারা বাজারের বারোটা বাজিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই।’’

শেয়ারবাজারের অব্যাহত পতন নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ এখন তুঙ্গে। কফিন মিছিলের মতো প্রতীকী প্রতিবাদে তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন—এই বাজার কেবল অর্থনৈতিক নয়, মানসিক বিপর্যয়েরও কারণ হয়ে উঠেছে। আন্দোলন এখন আর কেবল আর্থিক ক্ষতির প্রতিবাদ নয়, এটি হয়ে উঠছে রাষ্ট্রের জবাবদিহিতা দাবি করার একটি রাজনৈতিক পরিণতি।

সরকার যদি দাবি অনুযায়ী পদক্ষেপ না নেয়, তবে রাজপথে এই বিক্ষোভ আরও বৃহৎ রূপ নিতে পারে—এমন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দিয়ে গেল আজকের কফিন মিছিল।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন: কফিন মিছিল কেন করা হয়েছে?

উত্তর: শেয়ারবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা তাদের আর্থিক ক্ষতির প্রতিবাদে প্রতীকী কফিন মিছিলের মাধ্যমে দাবি জারি করেছেন।

প্রশ্ন: বিনিয়োগকারীদের প্রধান দাবি কী?

উত্তর: তারা বিএসইসি ও আইসিবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি সহ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রশ্ন: এই আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে?

উত্তর: যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণ না হয়, বিনিয়োগকারীরা সারাদেশে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিতে প্রস্তুত।

আল-আমিন ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ