ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আ.লীগের ‘ছায়া সরকার’ সচিবালয়: দোসর’ আমলা-কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ

রাজনীতি ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২০ ১৪:১১:১৪
আ.লীগের ‘ছায়া সরকার’ সচিবালয়: দোসর’ আমলা-কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সচিবালয় কি তাহলে আর রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নেই? সরকার বদলায়, কিন্তু থেকে যায় কিছু মুখ—যারা ক্ষমতার পালাবদলে থেকেও ঠিকই রয়ে যান ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। সেই চিরচেনা ‘ছায়া সরকারের’ দিকে এবার সরাসরি আঙুল তুলল ‘জুলাই ঐক্য’। তারা বলছে, গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রশাসনে কাজ করা আমলা-কর্মকর্তারাই আজকের ‘নীরব ফ্যাসিবাদের’ বড় কারিগর।

মঙ্গলবার (২০ মে) বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা সচিবালয়ে কর্মরত ৪৪ জন আমলার নাম প্রকাশ করে, যাদের তারা আখ্যা দিয়েছে—‘আওয়ামী লীগের দোসর’। পাশাপাশি প্রশাসনের আরও প্রায় ৫০ জন কর্মকর্তার নামও একযোগে প্রকাশ করা হয়।

ক্ষমতার ছায়াতলে লালিত আমলারা

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। তিনি বলেন,

“জুলাই বা আগস্টের কথা নয়, বিগত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে এই আমলারা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে কাজ করে গেছে। এখনো তারা সচিবালয়ের অলিন্দ থেকে রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করছে—জনগণের নয়, দলের স্বার্থে।”

এ সময় ২০২৩ সালে আন্দোলনে নিহত মুহতাসির রহমান আলিফের বাবা মোহাম্মদ গাজীউর রহমান কণ্ঠ ভার করে তালিকাটি পড়ে শোনান। সংবাদ সম্মেলনে ছিল উত্তেজনা, আবেগ এবং স্পষ্ট হুঁশিয়ারি।

দাবি ৮টি, সময়সীমা নির্দিষ্ট

জুলাই ঐক্য সরকারের প্রতি আট দফা দাবি উত্থাপন করে, যার সবগুলোতেই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাদের ভাষায়,

“এই দোসরদের চাকরি থাকলে গণতন্ত্র থাকবে না।”

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. ৩১ মে’র মধ্যে বাধ্যতামূলক অবসর: তালিকাভুক্ত সব আমলাকে অবসরে পাঠাতে হবে।

২. তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি: দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে হবে।

৩. তথ্য পাচার ও গুলির হুকুমদাতাদের শাস্তি: ব্যাংক হিসাব জব্দ, অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত।

৪. দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা: অভিযুক্তদের বিদেশে পালাতে না দেওয়ার ব্যবস্থা।

৫. ৫ আগস্টের মধ্যে শ্বেতপত্র: সরকারি ওয়েবসাইটে তালিকা প্রকাশ।

৬. আইনের ১৩২ ধারা বাতিল: পুলিশের দায়মুক্তি রুখতে হবে।

৭. ৬২৬ জনের তথ্য প্রকাশ: সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ জানতে চায় তারা।

পরবর্তী ধাপে 'সাংস্কৃতিক ফ্যাসিস্টদের’ খোঁজ

জুলাই ঐক্য এখানেই থামছে না। তারা ঘোষণা দিয়েছে, পরবর্তী ধাপে তারা শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন এবং গণমাধ্যমে লুকিয়ে থাকা ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ চিহ্নিত করে তালিকা প্রকাশ করবে। এই অভিযানের নাম দিয়েছে তারা—‘ফ্যাসিবাদ উন্মোচন অভিযান’।

তালিকাটি দেখতে সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারে একটি লিংক যুক্ত করা হয়। যদিও এর প্রামাণ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে, তবুও এই প্রকাশনাকে আমলাতন্ত্রের ওপর এক ধরনের গণতান্ত্রিক চাপ হিসেবেই দেখছেন অনেকে।

প্রশাসনের নীরবতা, জনমনে প্রশ্ন

এ পর্যন্ত সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে অনেকেই মনে করছেন, এমন ‘নাম ধরে ধরে’ তালিকা প্রকাশ প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

তবে প্রশ্ন একটাই—এই তালিকা কি শুধুই রাজনৈতিক কৌশল, নাকি সত্যিই একটি অনিবার্য সত্যের পর্দা উন্মোচন? এর উত্তর সময়ই দেবে।

FAQ (প্রশ্নোত্তর):

প্রশ্ন ১: কে বা কারা ‘জুলাই ঐক্য’?

উত্তর: ‘জুলাই ঐক্য’ একটি রাজনৈতিক সংগঠন, যারা নিজেদের গণতন্ত্রকামী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচয় দেয়। সরকারবিরোধী নানা ইস্যুতে তারা প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে থাকে।

প্রশ্ন ২: কোন ভিত্তিতে আমলাদের দোসর বলা হয়েছে?

উত্তর: জুলাই ঐক্যের দাবি, এই আমলারা গত দেড় দশক ধরে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করেছেন। তবে এই অভিযোগের পক্ষে সরাসরি কোনো প্রমাণ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়নি।

প্রশ্ন ৩: সরকার এই তালিকা সম্পর্কে কী বলেছে?

উত্তর: এখনো পর্যন্ত সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

প্রশ্ন ৪: তালিকাটি কোথায় পাওয়া যাবে?

উত্তর: তালিকাটি সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত লিংকের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। (আপনি চাইলে এখানে আসল বা নির্ভরযোগ্য লিংক যুক্ত করতে পারেন)

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ