বন্ধ দরজার আড়ালে চীন-আফগান-পাক বৈঠকে ৭ সিদ্ধান্ত

বেইজিংয়ে আলোচনার টেবিলে বন্ধুত্ব, কৌশল আর ক্ষমতার সমীকরণ
নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক রাজনীতির মঞ্চে যখন উত্তেজনার ঢেউ—বিশেষ করে ভারত-চীন সীমান্তে লাদাখ ঘিরে চাপা উত্তাপ—ঠিক তখনই চুপিসারে বেইজিংয়ে বসে গেল এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক। অংশ নিল চীন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না হলেও বৈঠকটি ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, যার প্রতিটি কথা, প্রতিটি সিদ্ধান্ত যেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভূরাজনীতির পরবর্তী দৃশ্যপট আঁকার সংকেত।
বুধবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত হয় এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠক, যার সভাপতিত্ব করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রভাবশালী সদস্য ওয়াং ই। পাকিস্তানের পক্ষে অংশ নেন দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার, আর আফগানিস্তানের হয়ে অংশ নেন তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভি আমির খান মুত্তাকি।
বৈঠকে কেবল কথার ফুলঝুরি নয়, আলোচনায় উঠে আসে সাতটি সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত—যা ভবিষ্যতের কূটনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বৈঠকের সাত রূপরেখা:
১. পারস্পরিক আস্থা ও সুপ্রতিবেশী সম্পর্ক জোরদার:
কথার বন্ধন ছাপিয়ে তিন দেশের মধ্যে গড়ে তুলতে চাওয়া হচ্ছে বাস্তব সহযোগিতার একটি সেতু।
২. ত্রিপক্ষীয় সংলাপ অব্যাহত রাখা:
শুধু একবারের আলোচনা নয়, চীন-আফগান-পাকিস্তান ত্রয়ী চান এটি হোক একটি চলমান প্রক্রিয়া।
৩. রাষ্ট্রদূত বিনিময়ের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন:
নিছক শুভেচ্ছা বিনিময়ে নয়, রাষ্ট্রদূত পাঠিয়ে সম্পর্ককে দিতে চাওয়া হচ্ছে কাঠামোগত রূপ।
৪. আফগানিস্তানকে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা:
তালেবান প্রশাসনের জন্য এটি হতে পারে চীনা অর্থনীতির বিশাল হাইওয়েতে প্রবেশের সোনার সুযোগ।
৫. পুনর্গঠন ও বাণিজ্যিক সহায়তা:
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে পুনর্গঠনে সাহায্যের হাত বাড়াতে চায় চীন ও পাকিস্তান।
৬. সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতা:
আঞ্চলিক শান্তির পথে সবচেয়ে বড় বাধা—সন্ত্রাসবাদ—দূর করতে সম্মিলিত উদ্যোগের ঘোষণা।
৭. শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতি:
এই অঞ্চল যেন না হয় আর কোনো বৈশ্বিক সংঘাতের নাট্য মঞ্চ—তাই তিন দেশ চায় একসাথে এগিয়ে যেতে।
বৈঠকে ওয়াং ই বলেন, “চীন চায়, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান তাদের নিজস্ব বাস্তবতা অনুযায়ী উন্নয়নের পথ বেছে নিক এবং সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষায় সক্ষম হোক।”
বিশ্লেষকদের চোখে বৈঠকের তাৎপর্য
বৈঠকের সময়টাই বলে দেয় এর গুরুত্ব। লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন উত্তেজনা, তালেবান সরকারের বৈধতা নিয়ে পশ্চিমা দ্বিধা আর পাকিস্তানের রাজনৈতিক টানাপড়েনের মাঝে এমন বৈঠক যেন এক কূটনৈতিক কৌশলের নিখুঁত চাল। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বন্ধুত্বের মোড়কে আসলে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা।
কৌশল না কি কূটনৈতিক কামান?
ত্রিপক্ষীয় এই বৈঠক শুধু সীমান্তবর্তী সম্পর্ক জোরদারের কথা বলে না; এটি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার ভূরাজনীতিতে চীনের প্রভাব দৃঢ় করার একটি ইঙ্গিত। আফগানিস্তানকে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে আনায় চীন যেমন নিজের অর্থনৈতিক রুট শক্ত করতে চাইছে, তেমনি পাকিস্তানকে পাশে রেখে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ‘সুরক্ষিত করিডর’ গড়তেও আগ্রহী।
বন্ধুত্ব, উন্নয়ন, নিরাপত্তা—এই তিন স্তম্ভে দাঁড়িয়ে চীন, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের গোপন বৈঠক এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তবে এর ছায়া যে ভারতের দিকেও পড়ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রশ্ন হলো, এই ত্রিপক্ষীয় সম্পর্ক কি কূটনীতির নতুন মাত্রা এনে দেবে, নাকি এটাই ভবিষ্যতের ভূরাজনৈতিক উত্তাপের সূচনা? সময়ই দেবে উত্তর।
জামিরুল ইসলাম/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- এসএসসি-এইচএসসির বোর্ডসেরা শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার
- ইরান-যুক্তরাষ্ট্র শান্তির আলোয় তেলের দর ৪% কমেছে
- স্বর্ণের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে কমছে, কারণ জানেন কি?
- সোনার বাজারে ঝড়! দাম পড়ে যেতে পারে ৮৫ হাজারে
- বিএনপির ৪ নেতার পদত্যাগ: সামনে এলো আসল কারণ
- ফুটবলে বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস: ২৮-০ গোলের বড় জয় দেখল বিশ্ব
- মুস্তাফিজকে পরের ম্যাচে রাখার কারণ জানালেন দিল্লি অধিনায়ক
- শেয়ারবাজার নিয়ে খেলা বন্ধে কঠোর শাস্তির দাবি
- গুজরাটের বড় জয়, দিল্লির অধিনায়কের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া
- দিল্লি ক্যাপিটালস ও গুজরাট টাইটানস: টস শেষ, জানুন একাদশে মুস্তাফিজের অবস্থান
- ডিএসই সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন বাতিল করল বিএসইসি
- দেশের সোনার বাজার অস্থির: ১৮, ২১, ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার মূল্য তালিকা
- আজ থেকে নতুন দামে বিক্রি হবে১৮, ২১ ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপা
- শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরাতে পাঁচ সদস্যের দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চাই
- মুস্তাফিজকে এক সঙ্গে সুসংবাদ ও দু:সংবাদ দুটোই দিল বিসিবি