মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার কারণ ও সহজ প্রতিকার যা সবাই জানতে চায়

স্কোলিওসিস কী, কেন হয়, কী লক্ষণ দেখা দেয়, এবং চিকিৎসায় কী করবেন
নিজস্ব প্রতিবেদক: মানুষের শরীরকে সঠিকভাবে ধরে রাখার জন্য মেরুদণ্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। মাথা থেকে শুরু করে কোমর পর্যন্ত মেরুদণ্ড শরীরকে ভারসাম্য দেয় এবং প্রতিটি নড়াচড়ার পেছনে রাখে সক্রিয় ভূমিকা। তবে কখনো কখনো এই মেরুদণ্ডই নিজের সোজা অবস্থান থেকে সরে গিয়ে একদিকে বাঁকা হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় স্কোলিওসিস।
স্কোলিওসিস সাধারণত ধীরে ধীরে গঠিত হয় এবং অনেক সময় রোগী বুঝতেই পারে না—যখন বুঝতে পারে, ততক্ষণে পরিস্থিতি অনেক জটিল হয়ে পড়ে। এই সমস্যা শুধু শরীরের গঠন বিকৃত করে না, বরং ব্যথা, চলাফেরায় অসুবিধা এবং দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাও তৈরি করতে পারে।
স্কোলিওসিস কী?
স্কোলিওসিস হলো এমন এক অবস্থা, যেখানে মেরুদণ্ড তার স্বাভাবিক সোজা অবস্থান থেকে ডানে বা বাঁয়ে বেঁকে যায়। স্বাভাবিক মেরুদণ্ড সামনে বা পেছন থেকে দেখলে সোজা থাকার কথা। কিন্তু স্কোলিওসিসে এটি 'S' বা 'C' আকৃতির মতো বাঁকা হয়ে পড়ে।
প্রত্যেক মানুষের মেরুদণ্ডে মোট ৩৩টি কশেরুকা (ভার্টিব্রা) থাকে, যা পাঁচটি ভাগে বিভক্ত:
সার্ভাইক্যাল (ঘাড় অঞ্চল)
থোরাসিক (মধ্য-পিঠ)
লাম্বার (কোমর অঞ্চল)
স্যাক্রাল (নিতম্ব অঞ্চল)
ককসিজিয়াল (লেজ বা নিচের প্রান্ত)
স্কোলিওসিস সাধারণত থোরাসিক ও লাম্বার অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
কারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন
স্কোলিওসিস যে কারও হতে পারে, তবে সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় দুর্বল হতে থাকে, নরম টিস্যু ও মাংসপেশিতে ক্ষয় দেখা দেয়। ফলে মেরুদণ্ড তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
এছাড়া যাদের দৈনন্দিন জীবনধারায় শারীরিক সচলতা কম, যারা দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে থাকেন বা ভুল ভঙ্গিমায় কাজ করেন, তারাও ঝুঁকিতে থাকেন। অনেক সময় ছোটবেলার ভুল ভঙ্গিতে হাঁটা বা বসার অভ্যাসও পরবর্তীতে মেরুদণ্ড বাঁকার কারণ হতে পারে।
মেরুদণ্ড বাঁকা হওয়ার পেছনে দায়ী অভ্যাসগুলো
প্রতিদিন এক পাশে হেলান দিয়ে টিভি দেখা
দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা ল্যাপটপে বাঁকা হয়ে কাজ করা
নরম ফোমের বিছানায় কাত হয়ে ঘুমানো
গাড়ি চালানোর সময় শরীর বাঁকা করে বসা
বারবার একই কাঁধে ব্যাগ বহন করা
অসমান বা নিচু চেয়ারে বসে দীর্ঘ সময় কাজ করা
এই অভ্যাসগুলো শরীরের এক পাশের পেশিকে দুর্বল করে ফেলে এবং অন্য পাশে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এর ফলেই মেরুদণ্ড ধীরে ধীরে বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
স্কোলিওসিসের লক্ষণ
স্কোলিওসিস ধীরে ধীরে লক্ষণ প্রকাশ করে। প্রথম দিকে খুব বেশি ব্যথা বা অস্বস্তি নাও থাকতে পারে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি প্রকট হয়।
শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে না, একদিকে হেলে হাঁটেন বা দাঁড়ান
কোমর ও পিঠে ব্যথা
সোজা হয়ে বসতে বা হাঁটতে কষ্ট হয়
একটি কাঁধ আরেকটির তুলনায় উঁচু দেখা যায়
সামনে ঝুঁকে কাজ করতে সমস্যা হয়
ভারী জিনিস তুলতে গেলে পিঠে টান পড়ে
দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হয়
শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে (যদি বাঁকাটা ছাঁই বা বুকের হাড়ে চাপ দেয়)
চিকিৎসা ও প্রতিকার
স্কোলিওসিস চিকিৎসা নির্ভর করে তার তীব্রতা ও রোগীর বয়স, পেশি ও হাড়ের স্বাস্থ্যের ওপর। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম ও চিকিৎসকের পরামর্শে ফিজিওথেরাপিই সবচেয়ে কার্যকর।
১. ফিজিওথেরাপি
চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক ভঙ্গিতে স্ট্রেচিং, স্ট্রেনদেনিং ও আইসোমেট্রিক ব্যায়াম স্কোলিওসিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে মেরুদণ্ডের পেশি ভারসাম্য পায় ও ব্যথা কমে।
২. ওষুধ
এনএসএআইডি (NSAIDs) জাতীয় ওষুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে
মাসল রিলাক্সেন্টস (Muscle relaxants) মাংসপেশির টান কমাতে ব্যবহৃত হয়
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট হাড় শক্ত রাখতে সহায়ক
৩. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
সামনে ঝুঁকে না বসা বা কাজ না করা
ভারী জিনিস না তোলা
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা
একটানা বেশি সময় বসে বা দাঁড়িয়ে না থাকা
কঠিন বা ভারসাম্যপূর্ণ বিছানায় ঘুমানো
এক পাশের কাঁধে ব্যাগ বহন না করা
৪. গুরুতর অবস্থায় অস্ত্রোপচার
যদি স্কোলিওসিস ৪০ ডিগ্রির বেশি বাঁকা হয় এবং ব্যথা বা শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এই সিদ্ধান্ত চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করে।
সচেতন থাকুন, ব্যথামুক্ত থাকুন
মেরুদণ্ডের সমস্যা যেমন ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে, তেমনি এটি সময় নিয়ে এবং সচেতন থেকে প্রতিরোধও করা যায়। যারা প্রতিদিন ডেস্কে কাজ করেন, যারা শরীরচর্চা এড়িয়ে চলেন কিংবা যারা ভুল ভঙ্গিতে হাঁটা-বসার অভ্যাসে অভ্যস্ত, তাদের জন্য স্কোলিওসিস ঝুঁকি বেশি।
তাই সময় থাকতে সতর্ক হন। সঠিক ভঙ্গিমা বজায় রাখুন, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন এবং মেরুদণ্ডে সামান্য অস্বস্তি হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
FAQ (প্রশ্নোত্তর)
প্রশ্ন: স্কোলিওসিস কীভাবে বুঝব?
উত্তর: এক কাঁধ উঁচু, শরীর একদিকে হেলে যাওয়া, পিঠ বা কোমরে ব্যথা—এসব স্কোলিওসিসের সাধারণ লক্ষণ।
প্রশ্ন: স্কোলিওসিস কি ভালো হয়ে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, নিয়মিত ব্যায়াম, ফিজিওথেরাপি ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
প্রশ্ন: মেরুদণ্ড বাঁকা হলে চিকিৎসা কী?
উত্তর: ওষুধ, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, ফিজিওথেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
প্রশ্ন: এটি কি বয়সভিত্তিক রোগ?
উত্তর: না, যেকোনো বয়সেই স্কোলিওসিস হতে পারে, তবে বয়স বাড়লে ঝুঁকি বেশি থাকে।
মো: রাজিব আলী/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- সোনার বাজারে ঝড়! দাম পড়ে যেতে পারে ৮৫ হাজারে
- বিএনপির ৪ নেতার পদত্যাগ: সামনে এলো আসল কারণ
- আমি বলব না কবুল”– তারপর কী ঘটল? ভাইরাল রাজনগরের বিয়ে (ভিডিওসহ)
- ভিন্সের উইকেট নেওয়ার পরও সাকিবকে বোলিংয়ে না আনায় ক্ষোভে সমর্থকরা
- মুস্তাফিজকে পরের ম্যাচে রাখার কারণ জানালেন দিল্লি অধিনায়ক
- ডিএসই সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজের নিবন্ধন বাতিল করল বিএসইসি
- গুজরাটের বড় জয়, দিল্লির অধিনায়কের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া
- দেশের সোনার বাজার অস্থির: ১৮, ২১, ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার মূল্য তালিকা
- দিল্লি ক্যাপিটালস ও গুজরাট টাইটানস: টস শেষ, জানুন একাদশে মুস্তাফিজের অবস্থান
- শেয়ারবাজারে আস্থা ফিরাতে পাঁচ সদস্যের দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ চাই
- একলাফে কমলো সোনার দাম, আজ ১৮, ২১ ও ২২ ক্যারেট সোনা ও রুপার দাম
- ম্যাচ হেরে আইপিএল থেকে বিদায়, ফাফ ডু প্লেসিসের কড়া মন্তব্য
- সেনানিবাসে আশ্রয় পাওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ
- শেয়ারবাজারে চাঙ্গাভাব ফেরাতে বড় উদ্যোগ অর্থ মন্ত্রণালয়ের
- চেন্নাইয়ের হাসপাতালে জনসম্মুখে শেখ হাসিনা, যা জানা গেল