ঢাকা, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২

৬ খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন সতর্কবার্তা

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুলাই ০৫ ১১:২১:৩৮
৬ খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন সতর্কবার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্যান্সার এখন আর কেবল বয়স বাড়ার রোগ নয়—অবসাদ, দূষণ আর অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের যুগে এটি যে কারও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। প্রতিদিনের চেনা খাবারের মাঝেও লুকিয়ে থাকতে পারে এই প্রাণঘাতী রোগের উপাদান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার রয়েছে, যেগুলো নিয়মিত খাওয়া শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়ায় এবং কোষের ডিএনএ-তে ক্ষতি সাধন করে। এর ফলে বাড়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি।

নিচে এমন ৬টি খাবারের কথা জানানো হলো, যেগুলোর ব্যাপারে এখনই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে গুনতে হতে পারে ভয়াবহ মাশুল।

১. আল্ট্রা প্রসেসড মাংস

সসেজ, হ্যাম, বেকন, সালামি—এসব জনপ্রিয় মাংসজাত খাবার ব্যাপকভাবে শিল্প-প্রক্রিয়াজাত হয়। এতে থাকে রাসায়নিক সংরক্ষণ উপাদান ও কৃত্রিম রং, যা সাধারণ রান্নায় ব্যবহৃত হয় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এগুলোকে গ্রুপ-১ কার্সিনোজেন হিসেবে ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ এগুলো ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে এমন পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। বিশেষ করে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার ঝুঁকি বাড়াতে এসব খাবার ভূমিকা রাখে।

২. চিনিযুক্ত পানীয়

কোল্ড ড্রিংকস, এনার্জি ড্রিংকস কিংবা বাজারের তৈরি ফলের জুস—এসব চিনিতে ঠাসা পানীয় কেবল ওজনই বাড়ায় না, বরং শরীরে ইনসুলিন লেভেল বাড়িয়ে তোলে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি উস্কে দিতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূলতা ও অতিরিক্ত চিনি গ্রহণ অন্তত ১৩ ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

৩. ডিপ ফ্রাইড খাবার

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন উইংস বা প্যাকেটজাত চিপসের মতো উচ্চ তাপে ভাজা খাবারে তৈরি হয় অ্যাক্রিলামাইড, এক ধরনের রাসায়নিক যা প্রাণীর শরীরে ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়েছে।

মানবদেহে এর প্রভাব এখনো গবেষণাধীন, তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়মিত ডিপ ফ্রাইড খাবার খাওয়ার অভ্যাস শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৪. ঝলসানো মাংস

বারবিকিউ বা গ্রিল করা মাংসের সুস্বাদু গন্ধের পেছনে রয়েছে এক ভয়ংকর সত্য। উচ্চ তাপে রান্না করলে মাংসে তৈরি হয় HCAs ও PAHs নামের যৌগ, যেগুলো সম্ভাব্য কার্সিনোজেন।এগুলো শরীরের ডিএনএ-তে ক্ষতি করতে পারে এবং কোষের স্বাভাবিক গঠনে বিঘ্ন ঘটায়। রান্নার আগে ম্যারিনেশন এবং বিকল্প রান্না পদ্ধতি যেমন বেকিং বা স্টিমিং বেছে নেওয়া হতে পারে নিরাপদ বিকল্প।

৫. অ্যালকোহল

অ্যালকোহল শরীরে ভেঙে গিয়ে তৈরি করে অ্যাসিটালডিহাইড, যা এক বিষাক্ত উপাদান এবং ডিএনএ-তে আঘাত হানে। এতে লিভার, স্তন, গলা ও কোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমনকি মাঝারি মাত্রার মদ্যপানও এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত নয়।

৬. আল্ট্রা প্রসেসড ফুড

প্যাকেটজাত নুডলস, প্রস্তুত খাবার, প্রক্রিয়াজাত সিরিয়াল বা বিস্কুট—এইসব খাদ্যপণ্য উচ্চমাত্রায় পরিশোধিত চিনি, ট্রান্স ফ্যাট ও কৃত্রিম উপাদানে ভরপুর।

গবেষণায় দেখা গেছে, এসব খাবার স্থূলতা, প্রদাহ ও ক্যান্সার—বিশেষ করে কোলোরেক্টাল ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে সাহায্য করে।

কী করবেন?

প্রাকৃতিক ও কম প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন

চিনিযুক্ত পানীয় বাদ দিয়ে পানি বা মিষ্টিহীন চা/ফলজুস গ্রহণ করুন

উচ্চ তাপে ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন

অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকুন বা সীমিত করুন

রান্নায় যতটা সম্ভব তাজা উপাদান ব্যবহার করুন

খাবার শুধু ক্ষুধা মেটানোর জন্য নয়, এটি শরীর গঠনেরও উপাদান। ভুল খাবারের অভ্যাসের মূল্য হয়তো এখন বোঝা যায় না, কিন্তু ভবিষ্যতে তা হয়ে উঠতে পারে জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।

আজ থেকেই সচেতন হোন, কারণ আপনি কী খাচ্ছেন—সেটার ওপরই নির্ভর করছে আপনার ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ