রাতে বারবার টয়লেট? সাবধান! কিডনির সমস্যা শুরু হতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাতের গভীর নিস্তব্ধতায় যখন সবাই ঘুমে তলিয়ে থাকে, আপনি তখন বারবার ঘুম ভেঙে ছুটছেন টয়লেটে। প্রথম কয়েকদিন গুরুত্ব না দিলেও, দিন যত গড়ায়—ঘুমের ব্যাঘাতের সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে ক্লান্তি, বিরক্তি, উদ্বেগ। তবে এই উপসর্গটি শুধু অস্বস্তির নয়, চিকিৎসকদের মতে এটি হতে পারে কিডনির সমস্যার একটি নীরব সংকেত। বারবার মূত্রত্যাগের প্রবণতা বিশেষত রাতে বাড়তে থাকলে, বিষয়টি অবহেলা করলে বিপদ ডেকে আনতে পারে।
মানবদেহে কিডনি একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যার কাজ রক্ত পরিশোধন, অতিরিক্ত তরল ও বর্জ্য অপসারণ, ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ। এই অঙ্গ যদি সঠিকভাবে কাজ না করে, তা হলে ধীরে ধীরে শরীরের ভেতরে বিষক্রিয়া শুরু হয়। অথচ কিডনির কার্যক্ষমতা হারানোর আগে শরীর কিছু সংকেত দেয়, যা আমরা অনেক সময় চিনি না বা চিনেও গুরুত্ব দিই না। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হলো রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া।
কী কারণে রাতে বারবার প্রস্রাব হয়?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এ সমস্যাকে বলা হয় "নক্টুরিয়া"। এটি তখনই ধরা হয়, যখন কেউ রাতে দুবার বা তার বেশি প্রস্রাবের জন্য জাগে এবং সেই কারণে ঘুম ব্যাহত হয়। সাধারণত রাতে কিডনি ধীরে কাজ করে এবং শরীর তরল ধরে রাখে, যাতে ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে। কিন্তু কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ভেঙে পড়ে। ফলে রাত্রিকালীন প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়।
এই সমস্যা শুধু কিডনি নয়, অন্যান্য কিছু রোগের সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে। তবে কিডনির অসুখ হলে এই উপসর্গের পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যা একসঙ্গে মিলিয়ে দেখলে রোগ শনাক্ত করা সহজ হয়।
কিডনির সমস্যার সঙ্গে যুক্ত যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে
১. রক্তচাপ হঠাৎ বেড়ে যাওয়া বা ওঠানামা করা
২. প্রস্রাবে ফেনা হওয়া বা দুর্গন্ধ থাকা
৩. মূত্রের রঙ গাঢ় বা লালচে হওয়া
৪. পা বা চোখের পাতা ফুলে যাওয়া
৫. মাথাব্যথা, বমিভাব, দুর্বলতা বা ঘন ঘন ক্লান্ত লাগা
৬. চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়া
এই লক্ষণগুলো একত্রে থাকলে, এবং দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা চলতে থাকলে দ্রুত একজন নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
যেসব কারণে কিডনি দুর্বল হতে পারে
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস
ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক বা হারবাল সাপ্লিমেন্টের অপব্যবহার
কম পানি পান করা বা অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
ধূমপান ও মদ্যপান
অতিরিক্ত প্রোটিন ডায়েট বা কিডনি ক্ষতিকর খাবার গ্রহণ
এই কারণগুলো থেকে যত দূরে থাকা যায়, ততটাই কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব।
কী পরীক্ষা করাবেন?
রাতে ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা থাকলে নিম্নলিখিত পরীক্ষা করানো জরুরি:
ইউরিন রুটিন টেস্ট (প্রোটিন, রক্তকণা, রঙ ইত্যাদি বিশ্লেষণ)
সিরাম ক্রিয়েটিনিন ও ইউরিয়া
Estimated GFR (eGFR)
ব্লাড প্রেসার ও সুগার মনিটরিং
আলট্রাসনোগ্রাফি (কিডনির গঠনগত সমস্যা দেখতে)
এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে চিকিৎসক কিডনির কার্যক্ষমতা ও ঝুঁকির মাত্রা নির্ধারণ করতে পারেন।
কিডনিকে সুস্থ রাখার জন্য যা করবেন
প্রতিদিন প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করুন
উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলুন
হালকা ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন
ধূমপান ও অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে বর্জন করুন
সতর্কতা মানেই সুরক্ষা
রাতে বারবার প্রস্রাব হওয়ার সমস্যাকে যদি আমরা শুধু পানির পরিমাণ বেশি খাওয়ার ফল ভেবে অবহেলা করি, তাহলে সেটি হতে পারে ভবিষ্যতের বড় একটি বিপদের কারণ। কিডনির সমস্যা অনেক সময় নিঃশব্দে বাড়তে থাকে, যখন বুঝতে পারি, তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই সময় থাকতে সচেতন হওয়া, লক্ষণগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, এবং প্রয়োজনে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণই হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যরক্ষার চাবিকাঠি।
শরীর সবসময় কথা বলে। কেবল শোনার মন চাই। রাতে বারবার প্রস্রাবের মতো সাধারণ এক উপসর্গই হতে পারে মারাত্মক রোগের সূচনা। তাই ঘুম হারানোর আগে, জীবন যেন না হারাতে হয়—সেজন্য আগে থেকেই সচেতন হোন, কিডনির যত্ন নিন।
FAQs (প্রশ্ন ও উত্তর):
প্রশ্ন: রাতে বারবার প্রস্রাব হওয়া কি কিডনির সমস্যা?
উত্তর: হ্যাঁ, রাতে বারবার প্রস্রাব হওয়া কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, প্রোস্টেট সমস্যা বা অন্যান্য কারণেও এটি হতে পারে, তাই পরীক্ষা করানো জরুরি।
প্রশ্ন: কিডনির অসুখের প্রাথমিক উপসর্গ কী কী?
উত্তর: ঘন ঘন প্রস্রাব, মূত্রে ফেনা, পা ফোলা, রক্তচাপের ওঠানামা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ইত্যাদি কিডনির সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ।
প্রশ্ন: কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করতে কী করা উচিত?
উত্তর: পর্যাপ্ত পানি পান, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ওষুধে সচেতনতা, পরিমিত লবণ গ্রহণ এবং ধূমপান পরিহার কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
উত্তর: যদি নিয়মিত রাতে দুইবার বা তার বেশি প্রস্রাবের প্রয়োজন হয় এবং উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে দ্রুত একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মো: রাজিব আলী/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: প্রথম টেস্ট প্রথম দিনেই বাংলাদেশ ৪ রেকর্ড
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: বৃষ্টির কারণে বন্ধ ম্যাচ
- বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ নিরাপদ ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ
- আলোচিত ১০ সিনেমা যেখানে নায়ক-নায়িকা সত্যি মিলিত হয়েছেন
- শেখ হাসিনা যাকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন, জানালেন অলি
- আ. লীগের কার্যক্রম স্থগিত, নিষিদ্ধ করা হয়নি: ড. ইউনূস
- ভয়াবহ অন্ধকারে ঢাকার একাংশ
- মারা গেলেন ভারতের উদিয়মান তারকা ক্রিকেটার
- ভারতের সাবেক স্পিনার দিলীপ দোশী মারা গেলেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে
- সাপে কামড়ানোর পর ১০ মিনিটের মধ্যে যা করবেন, তাতেই বাঁচবেন
- FIFA ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫: এক নজরে ৮ গ্রুপের পয়েন্ট টেবিল
- করোনা সংক্রমণ: স্কুল বন্ধ নাকি চলবে, সিদ্ধান্ত জানালো মাউশি
- সোনার দামে বড় পতনের শঙ্কা, আসছে বড় পরিবর্তন
- বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা: শান্ত-নিসাঙ্কার সেঞ্চুরিতে ড্র টেস্ট
- ত্রয়োদশ নির্বাচনে বিএনপি ১০০ আসনও পাবে না