ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূস পদত্যাগ করবেন কিনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ মে ২৩ ১৪:৪৩:২৭
ড. ইউনূস পদত্যাগ করবেন কিনা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সময়ের নেতৃত্বে থাকা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন—সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন জোরাল গুঞ্জনের জবাব এবার এল একেবারে ঘনিষ্ঠ মহল থেকেই।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে ড. ইউনূসের আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন—“অধ্যাপক ইউনূসের ক্ষমতার প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাংলাদেশের প্রয়োজন তাঁর নেতৃত্বে।”

ফয়েজ আহমদের ভাষায়, “ড. ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে কোনো ক্ষমতার মোহে এই দায়িত্বে আসেননি। ইতিহাসের এক টালমাটাল সন্ধিক্ষণে দেশের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বার্থেই তিনি সামনে দাঁড়িয়েছেন।”

‘গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারকে হতে হবে দৃশ্যমান ও কার্যকর’

ফেসবুক পোস্টে বর্তমান সরকারের কর্মদক্ষতা নিয়েও স্পষ্ট ভাষায় আহ্বান জানিয়েছেন এই ঘনিষ্ঠ সহকারী। তাঁর মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের আরও সক্রিয় ও ফলপ্রসূ হতে হবে, জনতার সামনে উন্নয়নের বাস্তবচিত্র তুলে ধরতে হবে।

“আমরা যেন প্রমাণ করতে পারি, গণঅভ্যুত্থানের পর যে আস্থা নিয়ে জনগণ অধ্যাপক ইউনূসকে দায়িত্ব দিয়েছে—সেই আস্থা তিনি যথার্থভাবেই সম্মানিত করছেন,”—লিখেছেন ফয়েজ আহমদ।

রাজনৈতিক সংলাপের পরামর্শ, সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে স্পষ্ট বার্তা

জাতীয় ঐক্য গড়তে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত ও আন্তরিক সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছেন ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, “এখন সময় ভাঙাগড়ার নয়, সময় সংলাপ ও সহমতের মাধ্যমে সামনে এগোনোর।”

সেনাবাহিনীর ভূমিকাকে কেন্দ্র করেও তিনি সতর্ক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে লেখেন, “আজকের সভ্য দুনিয়ায় কোনো দেশের সেনাবাহিনী রাজনীতি করে না। সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য এখতিয়ারের সীমা ছাড়িয়েছে। তবে সেনাবাহিনীকে সম্মান জানাতে হবে, আস্থায় রাখতে হবে—হুট করে কিছু নয়, হঠকারী সিদ্ধান্ত নয়।”

পুনর্বাসনের নামে পুরনো শক্তিকে ছাড় নয়

সরাসরি নাম না করে তিনি সাবেক শাসক দল আওয়ামী লীগের ‘পুনর্বাসন’ নিয়েও সতর্ক করেন। লেখেন, “ইনক্লুসিভনেসের নামে আর পুরনো স্বৈরতান্ত্রিক রাজনীতির পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব, সেটি কেউ কলুষিত করবে না।”

নির্বাচন এপ্রিল-মে’তে, ‘জুলাই সনদ’ বাধ্যতামূলক

ফয়েজ আহমদের বিশ্বাস, আগামী এপ্রিল-মে মাসের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যেই বাস্তবায়ন করতে হবে ‘জুলাই সনদ’। তিনি জানান, “এই সংস্কার না হলে জনগণের চাওয়া পূরণ হবে না।”

আগস্টে রায়, জুলাইয়ে উদযাপন

একইসঙ্গে তিনি আশাবাদী যে, আগামী জুলাই-আগস্ট মাসে দেশে উদযাপিত হবে গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি। আর আগস্টের মধ্যেই “স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার” বিচারের প্রথম রায় প্রকাশিত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

‘ইনশাআল্লাহ আমরা হারবো না’

পোস্টের শেষে এক দৃঢ় প্রত্যয়ের ঘোষণা দেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব—

“ইনশাআল্লাহ আমরা হারবো না, আমাদের হারানো যাবে না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। প্রফেসর ইউনূস জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় স্বস্তির বার্তা

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আর কল্পনার ঘূর্ণাবর্তে যখন দেশ, তখন প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠজনের এই খোলামেলা বার্তা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে নানা পক্ষকে। স্পষ্ট হয়ে গেছে—ড. ইউনূস আপাতত কোথাও যাচ্ছেন না, এবং অন্তর্বর্তী সরকারও পূর্ণ শক্তিতে এগিয়ে চলেছে সামনে।

মো: রাজিব আলী/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ