ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

MD. Razib Ali

Senior Reporter

বাংলাদেশে দ্বিকক্ষ সংসদের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ আগস্ট ০১ ১৮:০০:০৬
বাংলাদেশে দ্বিকক্ষ সংসদের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের প্রস্তাব। দেশের বর্তমান এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থার পরিবর্তে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ নিয়ে গঠিত সংসদ গঠনের চিন্তাভাবনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কেউ একে সময়োপযোগী দাবি করছেন, কেউ দেখছেন নতুন বিতর্কের সূত্রপাত হিসেবে।

দ্বিকক্ষ সংসদ কী?

দ্বিকক্ষ সংসদ বলতে বোঝায় এমন একটি আইনসভা, যেখানে দুটি পৃথক কক্ষ থাকে—নিম্নকক্ষ (Lower House) ও উচ্চকক্ষ (Upper House)।

নিম্নকক্ষ: এখানে সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আইন প্রণয়ন, বাজেট অনুমোদন ও সরকার তদারকির কাজ করেন। বর্তমান বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এই কাঠামোরই প্রতিনিধিত্ব করে।

উচ্চকক্ষ: এই কক্ষে সদস্যরা সাধারণত মনোনীত বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, সংখ্যালঘু প্রতিনিধি ও জাতীয় পর্যায়ের বিশিষ্টজনরা এই কক্ষে স্থান পেতে পারেন। তাদের কাজ হলো, নিম্নকক্ষে পাস হওয়া আইন যাচাই-বাছাই করা, প্রয়োজনে সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া।

কেন আলোচনায় এসেছে উচ্চকক্ষ?

দ্বিকক্ষ সংসদের প্রস্তাব নতুন নয়, তবে বর্তমানে এটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে কিছু রাজনৈতিক ও নীতিগত কারণে:

১. ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা

বর্তমানে একক ক্ষমতাসম্পন্ন সংসদ ব্যবস্থা অনেক সময় নির্বিচারে আইন পাশের সুযোগ তৈরি করে। উচ্চকক্ষ থাকলে আইন পাসে আরও একধাপ যাচাইয়ের প্রক্রিয়া যুক্ত হবে, যা গণতান্ত্রিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।

২. সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব

উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক বা মনোনয়নভিত্তিক প্রতিনিধিত্ব থাকলে আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নারী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

৩. বিশেষজ্ঞদের সংসদে সম্পৃক্ত করা

বর্তমানে সংসদে পেশাদার আইনবিদ, অর্থনীতিবিদ বা শিক্ষাবিদদের অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে। উচ্চকক্ষে তাদের যুক্ত করলে নীতিনির্ধারণ হবে আরও বাস্তবভিত্তিক ও টেকসই।

চ্যালেঞ্জ কী কী?

তবে শুধুই সম্ভাবনা নয়, দ্বিকক্ষ সংসদ বাস্তবায়নের পথে রয়েছে কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ:

১. সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন

বর্তমান সংবিধান এককক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলে। উচ্চকক্ষ গঠনের জন্য বড় ধরনের সাংবিধানিক সংশোধন দরকার হবে, যা রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া সম্ভব নয়।

২. নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক

উচ্চকক্ষে সদস্য মনোনয়নে দলীয় প্রভাব, দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির ঝুঁকি রয়েছে। এটি হলে কক্ষটির নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত ব্যয় ও প্রশাসনিক জটিলতা

আরও একটি সংসদ কক্ষ পরিচালনা মানে বাড়তি জনবল, বাজেট ও অবকাঠামো—যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

বর্তমানে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞ উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে কথা বললেও সরকারি পর্যায় থেকে এখনো স্পষ্ট কোনো অবস্থান প্রকাশ করা হয়নি। একাংশ মনে করেন, এটি বাস্তবায়ন করতে হলে জাতীয় সংলাপ, গভীর আলোচনা ও সর্বদলীয় সমর্থন প্রয়োজন।

দ্বিকক্ষ সংসদ বাংলাদেশে বাস্তবায়নযোগ্য কি না, সেটি এখনই বলা কঠিন। তবে এটি গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পারে—যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা হয়। একই সঙ্গে এর ব্যবহার, উদ্দেশ্য ও কাঠামো সুনির্দিষ্ট না হলে এটি আরও একটি বিতর্কিত ব্যয়বহুল প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারে।

আপনার মতামত কী?

আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশে দ্বিকক্ষ সংসদ চালু হওয়া উচিত? এটি কি দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করবে, নাকি নতুন জটিলতা তৈরি করবে? আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

মো: রাজিব আলী/

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ