ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকারি চাকরির নিয়মে বড় পরিবর্তন

জাতীয় ডেস্ক . ২৪আপডেটনিউজ
২০২৫ জুন ০৩ ১৬:৫৫:১১
সরকারি চাকরির নিয়মে বড় পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিজীবীদের মনে তোলপাড় সৃষ্টি করা সংশোধিত চাকরি অধ্যাদেশ অবশেষে সরকারের টেবিলে ফিরে এসেছে—তবে এবার সিদ্ধান্তের নয়, পুনর্বিচারের টেবিলে। দীর্ঘ আন্দোলন, স্মারকলিপি, বিক্ষোভ—সব মিলিয়ে সচিবালয়ে যেন নতুন করে ভোর দেখার প্রতীক্ষা।

মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল জানান, সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

“অধ্যাদেশটিতে অপপ্রয়োগের সুযোগ রয়েছে—এবং সেটি খুবই স্পষ্ট। আমি বিদেশে থাকায় তখন উপস্থিত থাকতে পারিনি, কিন্তু এখন বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের সামনে উত্থাপন করা হবে,” বলেন ড. নজরুল।

তার কথায় যেন স্বস্তির পরশ খুঁজে পাচ্ছেন সচিবালয়ের হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী, যারা গত ২৫ মে অধ্যাদেশ জারির পর থেকেই একে ‘কালো আইন’ হিসেবে অভিহিত করে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “অধ্যাদেশের সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। যা গ্রহণযোগ্য নয়, তা টিকে থাকতে পারে না।”

কর্মচারীদের গর্জন, প্রতিধ্বনি পেল রাষ্ট্রীয় করিডোরে

চাকরিজীবীরা বলছেন—এই অধ্যাদেশ শুধুমাত্র নিয়ম নয়, এটি তাঁদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় চরম হস্তক্ষেপ। তাই তারা রীতিমতো কর্মসূচির মধ্যে নেমে এসেছে।

৩ জুন সচিবালয়ে আয়োজিত বিক্ষোভ ও মিছিলে বক্তারা বলেন, “আমাদের কণ্ঠরোধ করা হলে প্রশাসন কখনোই জনবান্ধব হতে পারে না।”

ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও বাদিউল কবীর স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা দেন—ঈদের পর আন্দোলন আরও কঠোর হবে, যদি সরকার ন্যায্য দাবি মেনে না নেয়।

বিক্ষোভ শেষে অর্থ উপদেষ্টার হাতে একটি স্মারকলিপিও তুলে দেওয়া হয়।

মহার্ঘ ভাতা না থাকায় ক্ষোভের আগুন

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে মহার্ঘ ভাতা না থাকায় কর্মচারীদের মনে জমেছে অতৃপ্তির কুয়াশা। তাদের ভাষায়, “নিত্যপণ্যের দামে আগুন, অথচ আমাদের প্রাপ্যই মিলছে না। রাষ্ট্র আমাদের পাশে না দাঁড়ালে আমরা কতদূর আর যাব?”

‘পর্যালোচনা’—নতুন আশার আলো

সরকারের গঠিত হতে যাওয়া উচ্চপর্যায়ের কমিটি এখন সব দিক বিবেচনায় নিয়ে অধ্যাদেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। আন্দোলনরত কর্মচারীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও বলছেন, “পর্যালোচনা যেন প্রতারণা না হয়—আমরা আশায় বুক বাঁধছি, কিন্তু প্রস্তুত আছি প্রতিরোধের জন্যও।”

চাকরি শুধু একটি জীবিকার নাম নয়—এটি মর্যাদা, অধিকার ও কণ্ঠের স্বাধীনতার প্রতীক। সরকারি চাকরির নিয়মে পরিবর্তনের এই অধ্যায়ে, দেশের প্রাজ্ঞ নেতৃত্ব যদি সত্যিই জনগণের পাশে দাঁড়ায়, তবে ইতিহাসে এটি শুধু ‘পরিবর্তন’ নয়, এক নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবেই লেখা থাকবে।

জামিরুল ইসলাম/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ